Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

উপকুল জুড়ে বাড়ছে ক্ষুধার জ্বালা

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২০, ৪:৩২ পিএম
  • বনজীবীরা ও জেলারা রয়েছে চরম অভাব অনাটনে
  • নিম্নমধ্যবিত্তরা রয়েছে বিপাকে

উপকূল জুড়ে বাড়ছে ক্ষুদার জ্বালা। বিশেষ করে জেলে পল্লীতে চলছে চরম অভাব অনটন। আর বনজীবীরা কর্মহীন হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষগুলো আর নি¤œ মধ্যবিত্তরা সামজিক লাজ লজ্জায় ত্রান সংগ্রহ করতে না পারায় পড়েছে মহাবিপাকে।
উপকুলীয়াঞ্চলের লাখ লাখ পরিবারই মাছ ধরে আর সুন্দরবনে উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করে থাকে। এরা কেউ মাছ ধরে, কেউ মধু সংগ্রহ করে, কেউ গোলপাতা আহরণ করে জীবীকা নির্বাহ করে থাকে। যা দিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে সারা বছর পার করতে হয়। তার ওপর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে উপকুলীয়াঞ্চলের লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপকূলীয় জেলেপল্লীর জেলেরা ও খেটে খাওয়া মানুষ।
খুলনার দাকোপের বানিশান্তা যৌনপল্লির ৮৯ জন যৌনকর্মীর দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ অঞ্চলে যে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে লাখ লাখ উপকুলবাসী।
সূত্রমতে, খুলনার কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল, শরণখোলা মোড়েলগঞ্জ, সাতক্ষীরার তালা, আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জসহ উপকুলীয়াঞ্চলের লক্ষাধিক জেলে-মাঝি সহ খেটে খাওয়া মানুষের এখন দুর্বিষহ জীবন চলছে। মাছ ধরতে ও কাজ করতে পারছেন না। যে কারণে অনেকের চুলাও জ্বলছে না আগুন।
জেলেরা জানান, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা দস্যু, সবকিছুই মোকাবিলা করে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে এসব জেলেরা মাছ শিকার করে থাকেন। জীবিকার জন্য জীবন বাজি রেখে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেক সময় তাদের অথৈ সাগরে যেতে হয় মাছ শিকারে। বর্তমানে করোনার কারণে তারা কাজে যেতে পারছেন না। এর কারণে তিন বেলা খাবারও জুটছে না এসব কর্মহীন জেলেদের। অন্য পেশার মানুষ বারো মাস আয় করতে পারেন। কিন্তু বছরে কয়েক দফা মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞা থাকা জেলেদের। মাঝেমধ্যে পেটের দায়ে কেউ মাছ ধরতে নামলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক করে জেল-জরিমানা, জাল-নৌকা জব্দ করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক জেলে। এর কারণে এখন করোনার এই সময়ে কেউ ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে নামছেন না।
বটিয়াঘাটার হালিয়া, বুনারাবাদ, কাশিয়াডাংগা, আমতলা, গৌরম্ভাসহ বিভিন্ন দিনমজুররা জানান- তারা একদিকে আতঙ্কিত। অপরদিকে কাজ না করলে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার দায়। সব মিলিয়ে ভালো নেই তারা। নগরীর শ্রমিক সাঈদ বলেন, ‘ কী করবো, ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। ছেলে-মেয়েদের মুখে আহার দিতে হবে। কারও কাছে ধার চেয়েও পাইনি।’
জেলে আইয়ুব আলী জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের চেয়ে তাদের কাছে তিনবেলা খাবার খেয়ে জীবন বাঁচানোটাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন তারা সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে মাছ ধরতে পারছেন না। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সবমিলিয়ে গত কয়েক দিনে তাদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ