Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘোরাঘুরি আড্ডা জটলা বন্ধে যৌথ অভিযান

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৫ পিএম

 

চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ-র‌্যাবসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে : ২৪ ঘণ্টায় ৬৬ মামলা ধরামাত্রই জরিমানা : ওরা পালাচ্ছে
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক হুমকি ও ঝুঁকি সৃষ্টিকারী অতি বেপরোয়া লোকজনের যত্রতত্র ঘোরাঘুরি, আড্ডা, ভিড়-জটলা পাকানো বন্ধে চট্টগ্রামজুড়ে প্রশাসনের কঠিন-কঠোর অবস্থান এখন মাঠেই দৃশ্যমান। খুঁজে খুঁজে এদের বিরুদ্ধে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারের কড়া নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগে হাতেনাতে ধরা ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬৬ টি মামলা রেকর্ড করা হয়। জরিমানা হয় প্রায় এক লাখ টাকা। ১০টি বিশেষ টিম একযোগে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এরফলে জনমনে আসছে কিছুটা স্বস্তি।
চট্টগ্রামে পুলিশ-র‌্যাবসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ যেীথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে: সেনাবাহিনীর সহায়তায়। আইন অমান্যকারীদের দেখা ও ধরামাত্র হয় লাঠিতাড়া করা হচ্ছে। তাছাড়া করা হয়েছে জরিমানাও। অভিযানের মুখে আড্ডাবাজরা পালাচ্ছে।
একই সঙ্গে সচেতন নাগরিকগণ বলছেন, অন্যতম ঝুঁকিবহুল আড্ডাস্থল চট্টগ্রামে মাছ ও কাঁচাবাজার, মুদি দোকান খুলবে বিকেল ৫টার পর বন্ধ থাকা উচিৎ। শুধুই ওষুধ-পথ্যের দোকানসহসহ জরুরি সেবা চালু থাকলেই যথেষ্ট।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে জনসাধারণকে বাড়িঘরে অবস্থান করতেই হবে। কাউকে ছাড় নেই। জনস্বার্থে এ ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি কিংবা নির্দেশের ব্যত্যয় কেউ ঘটাক তা সহ্য করা হবে না। তা সত্ত্বেও জরুরি কাজকর্ম ছাড়াই যারা ফাঁকি-ঝুকি দিয়ে অলিগলি পথে ঘুরেফিরে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে হুমকি বা ঝুঁকি তৈরি করছেন, বাজারে, দোকানে আড্ডা, ভিড়-জটলা পাকানোর অপচেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর এই অভিযান সর্বত্র অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রামে যা হচ্ছিল-
চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় গত শুক্রবার চট্টগ্রামে প্রথম ৬৭ বছর বয়সী এ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ শনাক্ত করে। তার চিকিৎসা চলছে জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে। এ বিষয়টি আপামর চট্টগ্রামবাসীকে বেশ নাড়া দিয়েছে। তারা একটি ‘অশনি শঙ্কেত’ হিসেবেই ভাবছে। দুশ্চিন্তা-শঙ্কার সঙ্গে দেখছে। আরও সচেতন ও সতর্ক হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকগণ। ঘরে-বাইরে এ নিয়ে উদ্বেগের মিশ্রণে আলোচনা-আক্ষেপের যেন শেষ নেই।
আর অন্যদিকে একশ্রেণির অতি বেপরোয়া ও হুজুগবাজ চট্টগ্রামেরই মানুষজন যেন ধরাকে সরা জ্ঞান করতে চান না। হাট-বাজার, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অলি-গলি,ঘুপচি, ফুটপাত কিংবা খোলা মাঠে-ঘাটে জড়ো হচ্ছে তারা। জমিয়ে তুলছে বাজে আলাপ-আড্ডা।
এমনকি সেসব আড্ডাস্থল থেকেই হরেক রঙচঙে গুজব তৈরি ও ছড়ানো হয় বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকে ফোনে ফোনে সরস গুজবে মত্ত। এতে করে জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রান্তি এবং অহেতুক বাড়তি আতঙ্কও। এ অবস্থায় গতকাল চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী এক ভিডিও বার্তায় কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে ঘোষণা দেন, কেউ যদি গুজব রটনার অপচেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন গুজব রটাবেন না, গুজবে কান দেবেন না।
অপরদিকে হুজুগবাজরা অকারণে ঘুরে বেড়ায় শহরময় রিকশায় কিংবা কয়েকজন মিলে হেঁটে হেঁটে। মাছের ঘাটেও আড্ডা। মোটর বাইক ছুটিয়ে দিব্যি শহর দর্শনের ঘোরাঘুরি। নগরীর বেশ কিছু এলাকা এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ আড্ডাস্থলে পরিণত হচ্ছিল। ওরা নগরীর মূল সড়কগুলো এড়িয়ে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে মূলত অলিগলি, ঘুপচি বেছে নিয়েছিল। এমনকি অনেক মেস বাসায়ও জড়ো হয়ে চলছে আড্ডাবাজি। খাদ্য ও ত্রাণ সাহায্য-সামগ্রী দেয়া-নেয়া নিয়েও অনেক জায়গায় জটলা তৈরি হচ্ছে। সবজির হাটেও ভিড়-ভাট্টা।
সেসব জায়গায় বেপরোয়াদের গা ঘেঁষে আড্ডা, ঘোরাঘুরি চালিয়ে যাবার কারণে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) বজায় রাখার উল্টোটাই ঘটতে থাকে প্রতিনিয়তই। জটলার স্থান থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলে। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মাঝে ভয়-ভীতি শঙ্কা বেড়েই চলে।
অবশেষে ওইসব অপরিণামদর্শীদের কীভাবে ঘরেবাড়িতে থাকতে বাধ্য করা যায় তা নিয়ে প্রশাসনে শুরু হয় ব্যাপক তোড়জোড়। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সেই ‘কঠোর ও কঠিন পদক্ষেপে’র ঘোষণার মাঠে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যৌথ অভিযানের মুখে মহানগরীসহ জেলার অধিকাংশ স্থানে আড্ডা ঘোরাঘুরি বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যদিও গ্রাম-মফস্বলের অনেক বাজার-ঘাটে তা এখনও অমান্য করা হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন যানবাহনেও ভিড়-জটলা চলছে।
এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা, বন্দর, ইপিজেড, চকবাজার, বায়েজিদসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলিগুলোতে ঝটিকা অভিযান চালায় র‌্যাব-৭ সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এসব এলাকায় আড্ডারতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখে পালাতে থাকে। র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) েেমা. মাহামুদুল হাসান মামুন জানান, অলিগলি ঘুপচিতে যুবকরা আড্ডা জটলা দিচ্ছিল। সরকারের দেয়া নির্দেশনা তারা অমান্য করে। তাই এর বিরুদ্ধে অলি-গলিতে র‌্যাব সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক অলি-গলিতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে দুই শিফটে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রে বদিউল আলম বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে লোকজনকে নিজ বাড়িঘরে থাকতে সবধরনের উদ্যোগ নিয়েছিা। তবুও যারা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেই অকারণে বাইওে ঘোরাঘুরি করছেন তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ