Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

উৎপাদিত খাদ্যের অর্ধেকই ফেলে দেয় মার্কিনিরা

প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশ্বে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ অভুক্ত থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ১৬ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের ছয় কোটি টন খাদ্য নষ্ট হচ্ছে, যা পুরো বিশ্বের খাদ্যপণ্যের তিন ভাগের এক ভাগ
ইনকিলাব ডেস্ক : উৎপাদিত মোট খাদ্যের অর্ধেকই ফেলে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা। খাবার নিখুঁত হচ্ছে না এমন অজুহাতেই এ কাজটি করে থাকে তারা। আর এতে দেশটিতে একদিকে যেমন বাড়ছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, অপরদিকে খাদ্য অপচয়ের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কৃষক, মোড়ককারী, পরিবহন শ্রমিক, গবেষক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে খাবার অপচয় বিষয়ক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। এতে দেখা যায়, নিজেদের মনমতো না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত খাদ্যের বড় অংশ মাঠেই ফেলে রাখা হয়, কিছু অংশ গৃহপালিত পশুকে খাওয়ানো হয়, আর বাকি অংশ নিক্ষেপ করা হয় ময়লা ফেলার স্থানে। দেখতে নিখুঁত বা মানসম্মত নয় এমন মনোভাব দেশটিতে বিশাল পরিমাণ ফসল ফেলে দেয়ার পেছনে কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ফসলের মাঠ আর বাগান থেকে শুরু করে পূর্ব উপকূলের পপুলেশন সেন্টার পর্যন্ত কৃষক ও খাদ্য সরবরাহ-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু খুচরা বিক্রেতাদের নিখুঁত পণ্য পাওয়ার চাহিদার কাছে উচ্চমান ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎসর্গ হচ্ছে। তাজা ফল ও সবজি সরবরাহকারী জে জনসন জানান, বর্তমানে ব্যবসা এমন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, নিখুঁত পণ্য না হলে তা বাতিল করা হচ্ছে। এমন একটি বেড়াজালে কৃষকসহ খাদ্য সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আটকে পড়েছেন। সরকারি এক পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি বছর খুচরা বিক্রেতা ও গ্রাহকরা প্রায় ১৬ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের ছয় কোটি টন খাদ্য নষ্ট করছে, যা পুরো বিশ্বের খাদ্যপণ্যের তিনভাগের একভাগ। ফসলের মাঠ, গুদাম, প্যাকেজিং, বণ্টন, সুপারমার্কেট, রেস্তোরঁাঁ ও ফ্রিজে খাদ্য নষ্ট হচ্ছে এসব খাদ্য। এক গবেষণায় দেখা গেছে, খরচ ও ফসল-সম্পর্কিত শ্রম বাঁচাতে নিয়মিত মাঠে ফসল ফেলে আসা হয়। এছাড়া সামান্য দাগ দেখা গেলে গুণগত মান ঠিক থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার না করে গুদামে পচার জন্য রেখে দেয়া হয়। রোদে পোড়া বা কালো দাগযুক্ত ফুলকপি জমিতেই মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। আঙ্গুরের আকৃতি সমান না হলে তা ফেলে দেয়া হচ্ছে। এমনকি ঝুড়ি ঝুড়ি কমলা মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত খাদ্য বিশ্বের ৮ শতাংশ জলবায়ু দূষণের জন্য দায়ী, যা ভারত ও রাশিয়ার চেয়ে অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ না খেয়ে থাকে বলে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর ১ লাখ কোটি ডলার সমমূল্যের ১৬০ কোটি টন খাদ্য উৎপাদন হয়, যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য অপচয় হচ্ছে। প্রতি বছর পরিত্যক্ত খাদ্য দিয়ে ২০ ঘনমিটার-বিশিষ্ট ৮০ কোটি স্তূপ তৈরি করা সম্ভব, যার উচ্চতা হবে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের সমান। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের খাদ্য অপচয়ের এ হার বৈশ্বিক ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্য অপচয়ের এ পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ওবামা প্রশাসন এবং জাতিসংঘ। খাদ্য অপচয় কমাতে না পারলে ক্ষুধা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই সম্ভব হবে না বলে মনে করেন খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। গার্ডিয়ান, নিউজ উইক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উৎপাদিত খাদ্যের অর্ধেকই ফেলে দেয় মার্কিনিরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ