Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টঙ্গীবাড়ীতে ভাঙন আতঙ্ক

মো. রনি শেখ, টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

সারা দেশের ন্যায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা প্রশাসন জনসচেতনামূলক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। আর এই সুযোগে উপজেলার পদ্মা নদী থেকে খননযন্ত্র বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন কতিপয় ভূমিদস্যু।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দিঘীরপাড় অঞ্চলের রজতরেখা নদীর মুখে পকেট তৈরি করে সেখানে বালুর ভরাট করছেন ইসমাইল বেপারী। মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদী থেকে খননযন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে এই ভরাট কাজ। তার পাশে অপর একটি খননযন্ত্র বসিয়ে মাটি কর্তন করছেন তার চাচাতো ভাই শাহাদাৎ বেপারী। এর আগে ওই স্থান হতে রাতের অন্ধকারে তারা মাটি কর্তন করেছে, এখন করছে দিবালোকে। এর আগে কয়েকবার প্রসাশন অভিযান চালিয়ে ড্রেজারের পাইপ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে জরিমানা করলেও থেমে নেই তারা। যেই স্থান হতে মাটি কাটা হচ্ছে গত বর্ষায় ওই স্থানের পদ্মাপারের অনেক ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। শুকনো মওসুমে ব্যাপকভাবে ওই স্থান হতে মাটি কাটার ফলে ভাঙন আতঙ্কে ভুগছে নদী তীরবাসী। অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার শিলই ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম লিটন ব্যাপারির ছোট ভাই ইসমাইল ব্যাপারি ও চাচাতভাই শাহাদাৎ ব্যাপারি বালু উত্তোলন করছে।

স্থানীয়রা জানায়, তারা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার মানুষও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। শাহাদাৎ ড্রেজারের পাইপের মাধ্যমে উত্তোলিত বালু সরাসরি বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। এর ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের রাকিরকান্দি ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় এলাকার নদী পাড়ের জনবসতি ও ফসলি জমি।

উত্তোলিত বালু পাইপের মাধ্যমে শিলই এলাকার কয়েকটি জমি ভরাট করা হচ্ছে। যে স্থানে রাকিরকান্দি গ্রামে বর্তমানে সাহাদাত বেপারী ভরাট কাজ করছেন তার পাশের জমিগুলোতে ড্রেজারের বালুর সাথে ওঠে আসা পানিতে সৃষ্টি হয়েছে জলবদ্ধতা। এই পনি গড়িয়ে ভেঙে পরছে সরকারি রাস্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কতিপয় যুবক ঘটনাস্থলে জানান, নদীতে যে ড্রেজার দুটি চলছে তা একটি ইসমাইল বেপারীর অপরটি শাহাদাত বেপারীর। ইসমাঈল বেপারি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে, রজতরেখার মুখে জমিয়ে রাখেন। পরে ওই বালু বিক্রি করেন সারা বছর। এতে রজত রেখা নদীটি নাব্যতা হারিয়ে উৎপত্তিস্থলে ধূ ধূ শাহারায় পরিনত হয়েছে। এছাড়াও রজতরেখা নদীর উৎপত্তিস্থল দিঘীরপাড় বাজারের পাশে একাধিক পকেট তৈরি করে বালু পদ্মা নদী হতে অবৈধভাবে উত্তোলন করে উক্ত পকেটগুলো ভরাট করে পরে সেখান হতে বিক্রি করে ব্যবসা করছে। সেখানে রাতের আঁধারে বালু ভরাট করেন দিনের আলোতে দেদারছে বিক্রি করেন। তার ইশারায় জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন একটি চক্র। প্রতি ট্রলারের জন্য ইসমাঈল পায় ৫০০-১০০০ টাকা। শাহাদাৎ ও ইসমাঈলের ভূমি দস্যুতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই নদীটি গত ৮-১০ বছর আগেও ছোট একটি খালের মত ছিল। এখন প্রায় ৪শ’ ফুটের বেশি চওড়া। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন দেখা দেয়।

গত বছর দীঘিরপাড় ও হাইয়ারপার এলাকার ২৫-৩০টি বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে রজতরেখার মুখে যেখানে বালু ভরাট চলছে বালুর পাইপের মাথায় ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে ভরাট কাজ তদারকি করছেন ইসমাইল বেপারী। তিনি সাংবাদিকদের দেখে স্তম্ভ হয়ে যান। পদ্মা নদীতে যে খননযন্ত্র চলছে সেটা তার কিনা জিজ্ঞেস করলে তার নিজের বলে জানায়। মাটিকাটার কোন অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে সে অনুমতি নেই বলে এমনি ভরাট করছেন বলে চলে যান।

এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) উছেন মে জানান, আমি এর আগেও কয়েকবার অভিযান চালিয়ে পাইপ পুড়িয়ে দিয়েছি, জরিমানা করেছি। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙন

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ