পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও জনবহুল অঞ্চলগুলোর একটি দক্ষিণ এশিয়া। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ এ অঞ্চলটিতেও তরতর করে বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলের স্থানীয় কর্তৃপক্ষদের প্রতি প্রান্তিক অঞ্চলের বাসিন্দা, দিনমজুর, সংঘাতে বাস্তুচ্যুত মানুষ, স্বাস্থ্যকর্মী ও কারাবন্দিসহ উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে রক্ষা করতে চেষ্টা জোরদার করতে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া করোনা মোকাবিলার কেন্দ্রে মানবাধিকারকে প্রাধান্য দিতে আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক সরকার তাদের দেশে লকডাউন ও কারফিউ জারি করেছে। ভাইরাসটি জনবহুল এলাকাগুলোয় আগ্রাসীভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এ অঞ্চলটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। পুরো অঞ্চলজুড়ে ৬০ কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র।
ইতিমধ্যে পাকিস্তানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১০০’র বেশি মানুষ।
মারা গেছেন আটজন। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৬৯৪ জন। মারা গেছেন অন্তত ১৪ জন। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। পরীক্ষা হার কম থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি।
অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক বিরাজ পাটনায়েক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ সময় অঞ্চলটির নেতাদের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক অঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিত। যেসব শ্রমিকদের জন্য বাড়িতে থাকা মানে জীবিকা উপার্জন হারিয়ে ফেলা; যারা সংঘাতে ঘর হারিয়ে জনাকীর্ণ শিবিরে বাস করছেন; গাদাগাদি করে থাকা কারাবন্দি; এবং অবশ্যই সেসব সাহসী চিকিৎসক ও নার্সদের, যারা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যকে বাঁচানোর কাজ করছেন, তাদের রক্ষা করতে হবে।
তথ্যের অধিকার দিতে হবে
অ্যামনেস্টি তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ভাইরাসটি নিয়ে সুলভ, সঠিক ও প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করতে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা দক্ষিণ এশিয়ায় কভিড-১৯ সংকট বাড়িয়ে তুলেছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা, সাম্প্রতিক সপ্তাহে সংকটের ভয়াবহতা কমিয়ে প্রকাশ করেছে, প্রকৃত মাত্রা নিয়ে তথ্য ধামাচাপা দিয়েছে বা ভাইরাসটির প্রভাব নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এতে ভাইরাসটি মোকাবিলায় জনগণের বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে ও তাদের স্বাস্থ্যের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা, যেখানে স্বাক্ষরতার হার কম ও স্বাস্থ্যসেবাও সীমিত, ওই অঞ্চলগুলোয় নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় চলতি সপ্তাহে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাইরাসটি নিয়ে যথাযথ তথ্য সরবরাহে ব্যর্থতা শিবিরগুলোয় আশঙ্কাজনক গুজব ছড়াতে সাহায্য করেছে। এমন একটি গুজব হচ্ছে, কেউ যদি এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে কর্তৃপক্ষ মেরে ফেলবে। আগ থেকেই সেখানে টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
পাটনায়েক বলেন, কভিড-১৯ নিয়ে যথাযথ, প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেসব তথ্য এমন ভাষায় হতে হবে যা মানুষ বোঝে ও এমন মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে যেটি তাদের কাছে সহজলভ্য। একইসঙ্গে ভাইরাসটি নিয়ে মানুষের ক্ষতি করতে পারে এমন ভুয়া তথ্য প্রতিরোধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রান্তিক অঞ্চলের বাসিন্দাদের বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ
দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব কেবল নিজস্ব নাগরিকদের প্রতিই নয়, শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীসহ তাদের এখতিয়ারে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিও রয়েছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার অঞ্চলগুলোর একটি দক্ষিণ এশিয়া। এখানে পাকিস্তানে কয়েক লাখ অনিবন্ধিত আফগান শরণার্থী রয়েছে, বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় সম্ভব নয়। সেখানে শরণার্থীরা সংকুচিত তাঁবুতে বাস করে। নৈমিত্তিক সেবার জন্য তাদের শিবিরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। সেখানে স্বাস্থ্যসেবা সীমিত ও আশেপাশে কোনো জরুরি সেবার ব্যবস্থা নেই।
কক্সবাজারের শিবিরের এক রোহিঙ্গা শরণার্থী ইয়াসিন আব্দুমোনাব অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, এই সময়ে, আমাদের কাছে নিজেদের স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার রাখতে স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক থাকা দরকার ছিল। কিন্তু, মহামারিটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এসব বস্তুর কোনো বিতরণ দেখিনি আমরা।
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয়, নারীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ নেই। অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক বলেন, সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হওয়া জনগণের জন্য সামাজিক দূরত্বে থাকার কোনো অপশন নেই। তাদের কাছে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য নয় ও মৌলিক প্রয়োজনগুলোর জন্যও প্রতিদিন লড়তে হয়। কভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় এই গোষ্ঠীর প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতাতো রয়েছেই, একইসঙ্গে তাদের বিশেষ প্রয়োজনগুলোর প্রতিও নজর দিতে হবে।
দিনমজুর
দক্ষিণ এশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতায় তাদের জীবিকা উপার্জন করে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের উপার্জন দিন ভিত্তিক হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার মোট কাজের ৮০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে। এর মধ্যে রয়েছে হকার, ফেরিওয়ালা, গাড়ি চালক, নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, চা শ্রমিক ইত্যাদি। দেশে দেশে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন জারি হচ্ছে। এতে এই দিনমজুর গোষ্ঠীর অনেকেই জীবিকা উপার্জনের পথ হারিয়ে ফেলছেন। কিছু দেশে সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায়ে আর্থিক প্যাকেজ দিয়ে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এসব প্যাকেজের বেশিরভাগই শিল্প খাতগুলোর জন্য নির্ধারিত। অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্যও এমন প্যাকেজ দরকার।
পাটনায়েক বলেন, কাউকেই যেন ক্ষুধা ও সংক্রমণের মতো সর্বনাশা অপশনের মধ্যে যেকোনো একটা বেছে নিতে না হয়।
স্বাস্থ্যকর্মী
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশেই চিকিৎসকের সংখ্যা অত্যন্ত কম। বিশ্বব্যাংক অনুসারে, আফগানিস্তানে প্রতি হাজারে চিকিৎসক আছেন ০.৩ জনেরও কম। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক চিকিৎসক রয়েছে মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় প্রতি হাজারে ১ জন। সবচেয়ে ভালো সময়েও এ অঞ্চলের দেশগুলোয় স্বাস্থ্যকর্মী ও সরঞ্জামাদির সংখ্যা খুবই কম। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের স্বাস্থ্যকর্মীরা ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে, ১০ চিকিৎসকের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাদের আইসোলেটেড করে রাখা হয়েছে। এছাড়া, একজন নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। পাকিস্তানে এক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশজুড়ে কভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের মধ্যেও আক্রান্তের হার বাড়বে। আক্রান্তদের চিকিৎসা করার সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজেদেরও রক্ষা করতে হবে।
পাটনায়েক বলেন, ওই মহামারী মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইনে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরই নির্ভরশীল। তারা নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলে অন্যদের বাঁচাতে কাজ করছেন। এজন্য, তারা ন্যূনতম সুরক্ষা সরঞ্জাম পাওয়ার প্রত্যাশা করতেই পারে। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রের।
কারাবন্দি
দক্ষিণ এশিয়ার কারাগারগুলো অত্যন্ত জনবহুল। বাংলাদেশের কারাগারগুলোয় ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বন্দি রয়েছে। দেশটির কারাবন্দিদের ৭০ শতাংশের বেশি এখনো বিচারকার্যের অপেক্ষায় রয়েছেন। নেপালের কারাগারগুলোয় কারাবন্দির হার ১৫০ শতাংশ। কিছু কারাগারে বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণের বেশি।
কারাবন্দিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অমানবিক পরিস্থিতিতে বাস করে। নি¤œমানের ভেন্টিলেশন ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক। চলতি বছর পাকিস্তানের বিচার বিভাগের এক তদন্ত অনুসারে, দেশটিতে হেপাটাইটিস আক্রান্ত বন্দি রয়েছেন ১৮২৩ জন, এইডস আক্রান্ত ৪২৫ জন ও যক্ষা আক্রান্ত ১৭৩ জন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মান অনুসারে, কর্তৃপক্ষদের অবশ্যই কারাবন্দিদের দ্রæত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণদের মতো তাদেরও পরীক্ষা, প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসেবা দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।