বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শফিউল আলম
“হোম কোয়ারেন্টাাইন, আইসোলেশন. লকডাউন, শাটডাউন, সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতাÑ এই সব উচ্চমার্গের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এই দেশের মানুষেরা কখনোই বুঝতে চাইবে না। এদেরকে বলতে হবে- কারফিউ, ১৪৪ ধারা, বাহির হইলেই মাইর”!
ওই কথাগুলো দিয়েই এই প্রতিবেদকের কাছে একটি পোস্ট পাঠিয়েছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ হোসেন। ক্ষোভ-খেদের সঙ্গে এটাও পরামর্শ দিলেন, তোমরা সাংবাদিকরা এসব তুলে ধরো। প্রশাসন সজাগ হোক। আমরাও বাঁচি!
গতকাল বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর একটি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ফোন করে জানালেন, ‘দেশে লকডাউনের চরম একটা সময়েও আমাদের কিছু দোকানি চাইছেন কোনমতে ফাঁক-ফোঁকড়ে বেচাকেনা চালানো গেলে তাতে ভালো ছাড়া দোষের কী? কাস্টমারও তো কিছু কিছু আসছে। আমি আপত্তি করায় গালমন্দ শুনতে হলো। এ নিয়ে সমিতিতে দুইটি পক্ষ’।
অন্যদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল-দুপুর পর্যন্ত এবং গতকালও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখি ঠিকই তো বলেছিলেনÑ অধ্যাপক আহমদ হোসেন এবং ওই ব্যবসায়ী।
করোনাভাইরাস নামের বৈশ্বিক মহামারী আজ গোটা দুনিয়াবাসীকে কাঁপিয়ে ও কাঁদিয়ে ছাড়ছে। মানুষ মরছে। বাংলাদেশেও ধেয়ে এসেছে। কখন তা জোরদার হয় না হয় এ নিয়ে সাধারণ নিরীহ জনগণের মনে নেই শান্তি। ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ চিন্তায় বেহাল। ধর্মপ্রাণ নিরীহ জনগণ আল্লাহমুখী হচ্ছেন।
আর এ পরিস্থিতিতে এই মহাদুর্যোগের মহাবিপদ সঙ্কেতের মাঝেও অনেক হুজুগে মানুষের এলোপাতাড়ি ঘোরাঘুরি, জটলা পাকানো, টহলবাজি, গালগল্প-আড্ডা যেন থামছেই না! এমনকি কোথাও কোথাও গোপনে বসছে শোনা যাচ্ছে তাস, ক্যারামের সঙ্গে জুয়াবাজির আড্ডাও। ওরা স্থানীয় এলাকাবাসীর শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। এ যেন পিশাচের অট্টহাসি!
অবশ্য আশার কথা করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সবধরনের আড্ডা, জটলা, দোকানপাট বন্ধে প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আরও তৎপর এবং কঠোর হচ্ছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ জানান একথা। বুধবারের মতো আজ মাঠেও তা দৃশ্যমান। সড়ক, মোড়, রাস্তাঘাটে কিংবা অলি-গলি ঘুঁপচিতে অহেতুক ঘোরাঘুরি না করতে দেখলে এদের ধাওয়া এবং নগরীতে মাইকিংও করা হচ্ছে।
সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ আগেই সতর্ক করে আসছেন, তিন-চারটি কারণে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলটি মারাত্মক ছোঁয়াচে ‘করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বৈশ্বিক মহামারী ব্যাধি সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুকিপূর্ণ এলাকা। কেননা এটি প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল, সমুদ্রপথে বিদেশি ও দেশি জাহাজের নাবিকদের শহরে আসা-যাওয়া, অনেকগুলো প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকের বিচরণস্থল চট্টগ্রাম। তাছাড়া মিয়ানমার ও ভারতের সাথে লাগোয়া স্থল ও নৌ-সীমান্ত। আছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কর্মরত বিদেশি সংস্থা, এনজিও প্রতিনিধিরা। তাই এখানে ঝুঁকির প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে।
সদ্য বিদেশফেরত প্রবাসী চট্টগ্রামী এবং বিদেশি অনেক নাগরিক ঝুঁকিমুক্ত হওয়া নিশ্চিত করতে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন আদেশ ফাঁকি দিয়েছেন। যা আরেক বড় বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে আজ সকাল-দুপরে নগরীর কাজিরদেউড়ী, জামাল খান, মোমিন রোড, জুবিলি রোড, স্টেশন রোড, রেয়াজুদ্দিন বাজার, বাটালি রোড, লালখান বাজার এলাগুলো ঘুরে দেখা গেল, নিছক হুজুগের বশেই মানুষ ঘোরাঘুরি করছে। বেশ কয়েকজন জড়ো হয়ে আলাপ আড্ডায় মশগুল। মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরেফিরে শহর দেখার যেন এটি সুখের সময়! দেখা গেলো, দোকানের দরজা ফাঁক রেখে দিব্যিই হচ্ছে বেচাকেনা। যদিও বেশিরভাগই বন্ধ। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরা কম হলেও অলিগলিজুড়ে আড্ডা ও ঘোরাঘুরির যেন শেষ নেই। মোমিন রোডে আলাপে মগ্ন ৮/১০ জন যুবক। তাদের মুখেই শুনি করোনা নিয়েই বেহুদা ও সরস কথাবার্তা। সবার মুখে নেই মাস্ক। সিগারেট ফুঁকছে দুজন। এই জটলায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার ছায়া নেই কারো চেহারায়।
আবার একটি বাণিজ্যিক ভবনের নিচে গিয়ে দেখি সুনসান নিরবতা। নিচে টুলে বসে আছেন সিকিউরিটি মানিক। মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা। সতর্ক বোঝা গেলো।
এদিকে স্বয়ং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার দেওয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণে জনগণকে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নিজ ঘরে থাকুনÑ সুস্থ থাকুন”। তার আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব যিনি চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান ড. আহমেদ কায়কাউস বলেছিলেন, “বাঁচতে হলে সবাইকে বাসায় থাকতে হবে। আমরা এই ছুটি উৎসব করার জন্য দেইনি”।
এদিকে ৫/৭ জন বেশি জড়ো হওয়া ঠেকাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে কাজ করবেন বলেই গত মঙ্গলবার প্রথম বৈঠক শেষে জানিয়ে দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। সিএমপি পুলিশও লোক সমাগম ঠেকাতে কঠোর অবস্থানের কথা জানায়। কিন্তু আজও চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় আড্ডা, মানুষের ঘোরাঘুরি, জটলা। যা সবার জন্যই ভয়ানক ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। কেননা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কে কোথায় বয়ে বেড়াচ্ছে তা কেউই নিশ্চিত নয়।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকার লোকজন এরইমধ্যে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন, পুলিশসহ গোটা প্রশাসনের ব্যস্ততার সুবাদে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, মেসবাড়িতে বসে তাস-জুয়ার আড্ডায় লিপ্ত হচ্ছে সমাজবিরোধী লোকজন। তারা এভাবে ছুটি তথা দেশের লকডাউন শাটডাউন যেন উপভোগ করছে। আর চলছে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জটলা বা আসর। স্থানীয় লোকজন তা পুলিশকেও জানাচ্ছে। নগরীর হালিশহর, চকবাজার, বন্দরটিলা, ইপিজেড, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, বায়জিদ, আমবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে এধরনের আড্ডা এমনকি জুয়ার আসর বসার অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
এদিকে বাইে ঘোরাঘুরি না করতে প্রশাসনের সাথে সেনাবাহিনীর মাইকিং অব্যাহত রয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। তারা ৪/৫ জনের জটলা দেখলেই তাড়া করছেন। বাড়িঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
তাছাড়া ইতোমধ্যে যারা বিদেশ থেকে এসেও হোম কোয়ারেন্টাইন আদেশ মানেননি এবং ঘুরেছেন যথেচ্ছ তাদেরকে খোঁজা হচ্ছে। যাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিকও রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ সেনাবাহিনীর সহায়তায় হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্যকারীদের এবং তাদের বাড়িঘর চিহ্নিত করা হচ্ছে। লাল নিশানা ও স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী চট্টগ্রামের লোকজন এবং বিদেশিদের হোম কোয়ারেন্টাইন আদেশ লঙ্ঘনের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়েছে। কারা কোথায় কী করছেন, আদৌ হোম কোয়ান্টোইন ১৪ দিন পালন করছেন কিনা এসব দিক পর্যালোচনা করছে প্রশাসন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।