Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানী বাদে ৬৩ জেলায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ৯:৫০ এএম | আপডেট : ১২:২৭ পিএম, ২৬ মার্চ, ২০২০

নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায়কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র বা ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হয়।কিন্তু করোনার চিকিৎসায় এ সুবিধা রয়েছে শুধু রাজধানীতেই। বাকি ৬৩ জেলায় ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৫১৫টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৫০টি। ঢাকার মোট পাঁচটি হাসপাতালে এ ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এ পাঁচটি হাসপাতালে মোট ২৯টি ভেন্টিলেশন সুবিধা আছে। করোনা রোগীর চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে কোনো আইসোলেশন ইউনিটে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন সুবিধা দেয়া হয়নি।

বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দীর্ঘ হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৯৭টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচজন। ভাইরাসটি মোকাবেলায় রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা বলা হলেও আদতে তা কতটুকু রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার করোনা পরীক্ষায় অধিক গুরুত্ব দিলেও বাংলাদেশ সেই পরিমাণে টেস্ট করা হচ্ছে না। তাই দেশের সঠিক চিত্র উঠে আসছেনা বলেও মত দিয়েছেন তারা।

তারা বলছেন, যেভাবে করোনা রোগী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শনাক্ত হচ্ছে, তাতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা খুবই উদ্বেগের। যদি অতিদ্রুত করোনা রোগীদের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ১০০টি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে এ ভেন্টিলেটরগুলো ঢাকার বাইরে ব্যবহার করা হবে কিনা, তা এখন নিশ্চিত নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, একটি দেশের হাসপাতালে রোগীর জন্য যতগুলো শয্যা রয়েছে, তার ১০ শতাংশ আইসিইউ থাকার কথা। তবে এটি সম্ভব না হলে ন্যূনতম ৪ শতাংশ থাকতে হবে। সে হিসেবে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় সব মিলিয়ে রোগীর শয্যা রয়েছে ৩১ হাজার ২২০টি। হিসাব অনুযায়ী এসব হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর থাকার কথা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। ন্যূনতম ধরলেও এর সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ১২শর মতো। তবে এসব হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউ রয়েছে মাত্র ২২১টি, যার সবগুলোতে ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ (১০ শতাংশ) মানুষের করোনা সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এর ১ শতাংশও আক্রান্ত হয়, তবে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কোনো সক্ষমতা থাকবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগীকে আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হতে পারে। এসব রোগীর শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি দিতে প্রয়োজন ভেন্টিলেটর। সেই তুলনায় ভেন্টিলেটর সক্ষমতা আমাদের কোথায়? জনসংখ্যা তত্ত্বের ওপর বিচার করলে দেশে ভেন্টিলেশন সুবিধা একেবারেই কম। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর

বেডের সংখ্যা শিগগিরই বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রস্তুত রাখতে হবে। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে করোনা মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।

বিএসএমএমইউর সাবেক এ ভিসি বলেন, দেশে বর্তমানে কতজন করোনা রোগী রয়েছে, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। মাত্র ৭০০ মানুষের পরীক্ষা করে ৩৯ জন শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকসংখ্যক লোকের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেছে।

এর আগে গত ২১ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জরুরি সেবা দেয়ার জন্য ১০০টি আইসিইউর কথা জানিয়েছিলেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৫০০ ইউনিট স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। কিন্তু কবে তা প্রস্তুত করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে বলেননি।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. আমিনুল হাসান বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০টি আইসিইউ বেড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি ভেন্টিলেটর স্থাপনের কাজ চলছে। করোনা পরিস্থিতি সার্বিক বিবেচনা করে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩৯ ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে মারা গেছে মোট পাঁচজন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন সাতজন। বুধবার নতুন করে কারো করোনা শনাক্ত হয়নি।



 

Show all comments
  • মোঃদেলওয়ার হোসেন ২৬ মার্চ, ২০২০, ২:১৫ পিএম says : 0
    সবাইকে সচেতন হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ