Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেই লর্ডসেই ফিরছে আমিরের পাকিস্তান

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : আজ থেকে ক্রিকেটের তীর্থভূমিখ্যাত লর্ডসে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ৫ দিনের ক্রিকেট ম্যাচ। সেই লর্ডস, ছয় বছর আগে যে লর্ডস জন্ম দিয়েছিল ক্রিকেটের কুৎসিততম এক অধ্যায়ের। যে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে সেদিনের খলনায়কেরা দীর্ঘদিন ছিলেন ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত, খেটেছেন জেলেও। তাদের মধ্যেই একজন হলেন মোহাম্মাদ আমির। এই ম্যাচকে ঘিরে ঘুরেফিরে আসছে সেই এই একটি নামই। কারণটাও স্পষ্টÑসেদিনের সেই মাঠেই যে আবার সাদা জার্সিতে প্রত্যবর্তন হচ্ছে এই পাকিস্তানি ফাস্ট বোলারের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য ২৪ বছর বয়সী বাঁ হাতি মিডিয়াম পেসার ফেরেন আগেই। কিন্তু সাদা জার্সিতে ফেরাটাই তো ক্রিকেটে আসল ফেরা। এবার সেটাই হতে যাচ্ছে, তাও আবার সেই লর্ডসে! একটু বাড়তি উন্মদনা নিশ্চয় থাকবে আমিরের মধ্যে। সেই উন্মাদনার তোপে প্রতিপক্ষ শিবির ছিন্নভিন্ন হবে কিনা এর জন্য আর কিছু সময়ের অপেক্ষা। তবে সতীর্থ ওহাব রিয়াজ মনে করেন, ঠিকই নিজেকে চেনাবেন আমির।
ওহাব এটাও জানেন, আমিরের এই ফেরা নিয়ে সমালোচকদের মুখ থেমে নেই। এমনকি জাতীয় দলের কিছু সতীর্থও একসময় ছিল আমিরের ফেরার বিপক্ষে। কিন্তু সবকিছু ভুলে দল এখন ঐক্যবন্ধ বলে জানান ওহাব। আমিরকে দলের ‘ছোট ভাই’ সম্বোধন করে ওহাব বলেন, ‘যা ঘটেছিল তা এখন অতীত, এরপর অনেক সময় কেটে গেছে। আমি মনে করি সবচেয়ে ভালো বিষয় হল, সে ভালো পারফর্ম করবে।’ এমন ফেরার ম্যাচে ‘ছোট ভাইয়ের’ প্রতি নিজেদের চাওয়াটাও জানিয়েছেন ওহাব, ‘আমি চাই এমন ফেরার ম্যাচে সে তার নামের প্রতি সুবিচার করে ৫ উইকেট নিক। এজন্য আমি তাকে আশীর্বাদ করি।’
আমির ফিরলেও সংশয় একটা থেকেই গেছে। লর্ডসের দর্শকরা তাকে কীভাবে স্বাগত জানায় এটাই এখন দেখার। ওহাবের বিশ্বাস এই চাপ ঠিকই সামলে নিতে পারবেন তার সতীর্থ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সে এসব বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং এর জবার সে দেবে তার পারফর্মেন্স দিয়ে। সবকিছুর জন্যই সে প্রস্তুত।’ তবে বাস্তবতা মেনে ওহাব বলেন, ‘আমরা এই ধরনের লোকদের মুখ কখনোই বন্ধ করতে পারব না। এটা কোনো ব্যাপার নয়। আমরা এখানে এসেছি ভালো ক্রিকেট খেলতে এবং এই দিকেই আমাদের মনোযোগ।’
লর্ডস কেলেঙ্কারির সেই ম্যাচ রেকর্ড ইনিংস ও ২২৫ রানে হেরেছিল পাকিস্তান, তবে আমির নিয়েছিলেন ৮৪ রানে ৬ উইকেট। সেই সাথে সিরিজও ৩-১ ব্যবধানে হারলেও জোনাথন ট্রটের সাথে আমির হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। এরপর থেকে ইংল্যান্ডে আর টেস্টই খেলা হয়নি পাকিস্তানের। তবে পাকিস্তান তাদের বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তা থেকে একটা ম্যাচও জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। ২০১১/১২ মৌসুমে ৩ ম্যাচ সিরিজে ইংলিশরা ধবলধোলাই হয়েছিল। আর গত বছরের শেষের দিকে এক ম্যাচ কোনোমতে ড্র করলেও সিরিজ খুঁইয়েছিল ২-০ ব্যবধানে। ইংলিশদের বিপক্ষে ইউনুস খানদের সম্প্রতি এমন পারফর্মেন্সের পরও  একটা স্বস্তিতে থাকছেই। দীর্ঘ দুই দশক ধরে যে ইংল্যন্ডের মাটিতে কোন টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি পাকিস্তান। ১৯৯৬ সালে ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল ওয়াসিম আকরামের পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত ওটিই হয়ে আছে ইংল্যান্ডে তাদের শেষ সুখস্মৃতি।
ওহাবের ভাবনায় অবশ্য এতকিছু নেই। টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের বর্তমান তিন নম্বর দল তারা, তাদের পরেই ইংল্যন্ড। ৬ বছর আগে লর্ডসের ঘটনার পর দলের দায়িত্বে আসেন মিজবাহ-উল-হক। এরপর থেকে দলকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সফলতার সঙ্গে। একথা উল্লেখ করেই ওহাব বলেন, ‘মেজবাহর অধিনায়কত্বে দল আগের চেয়েও অনেক বেশি সঙ্ঘবদ্ধ।”
ইংল্যান্ডও প্রস্তুত অতিথীদের স্বাগত জানাতে। শেষ সময়ের তাদের এখন একটাই দুঃসংবাদÑগ্যারি ব্যালেন্সের কুঁচকির চোট। একই দলে বেন স্টোকসও। ক’মাস আগেই দ্রুততম দশ ব্যটসম্যানের একজন হয়ে ব্যালেন্স পূর্ণ করেন ১হাজার টেস্ট রান। এমন ফর্মের তুঙ্গে থাকা ব্যাটসম্যানকে হারানোটা স্বাগতিকদের জন্য একটা ধাক্কাই বটে।
এই ম্যাচ দিয়ে পাকিস্তানের হয়ে কোচিং ক্যারিয়ারের অভিষেক হচ্ছে মিকি আর্থারের। ওয়াকার ইউনুসের পদত্যাগের পর গত মে মাসে পাক দলের দায়িত্বে আসেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান।

এক নজরে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড
ম্যাচ    পাকিস্তান    ইংল্যান্ড    ড্র
৭৭    ১৮    ২২    ৩৭
দলীয় সর্বোচ্চ
পাকিস্তান : ৭০৮ (ওভাল, ১৯৮৭)
ইংল্যান্ড : ৫৯৮/৯ডি. (আবু ধাবি, ২০১৫)
দলীয় সর্বনি¤œ
পাকিস্তান : ৭২ (বার্মিংহাম, ২০১০)
ইংল্যান্ড : ৭২ (আবুধাবি, ২০১২)
বড় জয়
ইংল্যান্ড : ইনিংস ও ২২৫ রান (লর্ডস, ২০১০)
পাকিস্তান : ইনিংস ও ১০০ রান (লাহোর, ২০০৫)
ছোট জয় (রান ব্যবধানে)
পাকিস্তান : ২২ রানে (মুলতান, ২০০৫)
ইংল্যান্ড : ২৫ রান (লিডস, ১৯৭১)
ছোট জয় (উইকেট ব্যবধানে)
পাকিস্তান : ২ ইউকেট (লর্ডস, ১৯৯২)
ইংল্যান্ড : ৩ উইকেট (লিডস, ১৯৮২)
সর্বোচ্চ রান
পাকিস্তান : ইনজামাম-উল-হক (১৫৮৪ রান, ৩২ ইনি.)
ইংল্যান্ড : এ্যালেস্টার কুক (১১৭৯* রান, ২৫ ইনি.)
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস
ইংল্যান্ড : ডেনিস কম্পটন (২৭৮, নটিংহাম ১৯৫৪)
পাকিস্তান : জহির আব্বাস (২৭৪, বার্মিংহাম, ১৯৭১)
সর্বোচ্চ উইকেট
পাকিস্তান : আব্দুল কাদির (৮২ উইকেট, সেরা ৯/৫৬)
ইংল্যান্ড : জেমস অ্যান্ডারসন (৪৫ উইকেট সেরা ৬/১৭)
সেরা বোলিং ফিগার
পাকিস্তান : ৯/৫৬ (আব্দুল কাদির, লাহোর ১৯৮৭)
ইংল্যান্ড : ৮/৩৪ (ইয়ান বোথাম, লর্ডস ১৯৭৮)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেই লর্ডসেই ফিরছে আমিরের পাকিস্তান
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ