Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জনমনে উদ্বেগ- দায় কার?

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২০, ১:০০ পিএম | আপডেট : ৪:০২ পিএম, ২৪ মার্চ, ২০২০
  • মার্কেট শপিংমল বন্ধ থাকুক চান চট্টগ্রামবাসী
  • হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্যকারী বিদেশফেরতদের বেপরোয়া ঘোরাঘুরি
  • করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছেই

বিদেশফেরত। করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে বেশিরভাগই আসেন চলতি মার্চ মাসের প্রথম থেকে। আগের মাসেও এসেছেন। এসব বিদেশফেরত প্রবাসীর সংখ্যা হাজার হাজার। ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন না বা নেই। অধিকাংশই হাওয়া। কোয়ারেন্টাইনে আছেন বাস্তবের তুলনায় খুব কম সংখ্যক। আর যারা উধাও তারা তো সরকারের নির্দেশ মানেননি। মানছেন না এখনও। এমনকি যত্রতত্র অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিং মল, সুপার শপগুলোতে কেনাকাটা করছেন। এমনকি সদ্য বিদেশফেরতদের হচ্ছে বিয়েশাদিও। স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মিশেছেন। সংস্পর্শে আসছেন। নিজেদের গ্রাম থেকে মহানগরীতে আসা-যাওয়া করছেন। আর তা-ই চলছে এখনও অনায়াসেই। হোম কোয়ারেন্টাইন ফাঁকির হাতেনাতে প্রমাণ চট্টগ্রামের প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে রয়েছে ভুরি ভুরি।

রেয়াজুদ্দিন বাজারে কেনাকাটার ব্যস্ততা ও জটলা
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আওতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এরইমধ্যে অন্তত ৩২ জন ধরা পড়লো, যারা হোম কোয়ারেন্টাইন ফাঁকি দিয়ে বাইরে যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। বৌভাত অনুষ্ঠান থেকে ধরে-তুলে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয় সদ্য বিদেশফেরত নতুন বর-কনেকে। তাদের নিয়ে সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও উদ্বিগ্ন। উদ্বেগ ও বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত। প্রশাসন এদের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো শুরু করেছে কেবল গত ৯ মার্চ থেকে। এ পর্যন্ত হিসাবে যা মাত্র ৯৭৩ জন। তাছাড়া ঢাকার মতো চট্টগ্রামে নির্দিষ্ট হোমে বা প্রতিষ্ঠানিক কোন হোমকোয়ারেন্টাইন রাখা হয়নি। যার যার বাড়িঘরে হোম হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলে প্রশাসন শুধুই তাদের নাম-ঠিকানা রেখে স্থানীয় থানায় তথ্য দিয়ে রাখছে। কিন্তু নিজ বাড়িতে গিয়ে হোমকোয়ারেন্টাইন অনেকেই পালন করছেন না। হাতছাড়া হওয়ার পর প্রশাসন বলছে ওদেরকে সামাজিকভাবে খুঁজে বের করতে হবে। কেউ বলছেন মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার অর্থাৎ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা দরকার।
অধ্যাপক ড. এম এ ফয়েজ
প্রসঙ্গত দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী (মেডিসিন এবং নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালক) অধ্যাপক ড. এম এ ফয়েজ কিছুদিন আগে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বৈশ্বিক মহামারী ব্যাধিটি হচ্ছে মারাত্মক ধরনের ছোঁয়াচে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে আমিও সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে বলবো সবাইকে, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত থাকা চাই। হোম কোয়ারেন্টাইন মানে হচ্ছে অন্যের সংস্পর্শ যাতে না ঘটে এরজন্যই সংঙ্ঘনিরোধ ব্যবস্থা। নিজের ঘরেবাড়িতে পৃথক কক্ষে থাকতে হবে। অর্থাৎ নিজেকে আলাদা করে রাখা। অন্তত ১৪ দিন। কঠিন কাজ তাও নয়। তারপর বোঝা যাবে ঝুঁকিমুক্ত কিনা। বিশেষ করে কোভিড-১৯ সংক্রমিত পৃথিবীর যে কোন দেশ বা অঞ্চল থেকে যারা এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এসেছেন বা আসছেন তাদের সংঙ্ঘনিরোধ মানে হোম কোয়ারেন্টাইন অবস্থান অতিজরুরি’। তিনি এও স্মরণ করিয়ে দেন, বন্দরনগরীসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলটি দেশের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে ঝুঁকির প্রশ্নটি জড়িত।
অন্যদিকে অপরিণামদর্শী বিদেশফেরতদের ঘিরে সবার মাঝেই উদ্বেগ-শঙ্কার কারণ হচ্ছে, হোম কোয়ারেন্টাইন এড়িয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ানো এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রবাসীর কার মাধ্যমে কোথায় কখন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে তা কেউ বলতে পারে না। সিটি মেয়র নাছির নিজেই গাড়িতে বসে মাইকিং করলেন গতকাল মঙ্গলবার শহরময় প্রায় চার ঘণ্টা। এ সময় তিনি নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা নেব। বিদেশফেরত ব্যক্তিদের সচেতন করুন। নিজে, পরিবার-পরিজন,পাড়া-প্রতিবেশীদের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে হোম কোয়ারেন্টাইনে তাদেরকে থাকতে হবে। আর যদি নির্দেশ না মানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে সংবাদ দিন। আমাকে জানান। আমি ব্যবস্থা নিব।
চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও জেলায় বিশেষ করে মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী এলাকায় সদ্য বিদেশফেরত অনেক প্রবাসী ইতোমধ্যে উধাও হয়ে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মানছেন না হোম কায়ারেন্টাইনের নির্দেশনা। এরমধ্যে কয়েকটি উপজেলায় নির্বাহী অফিসারগণ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে তার প্রমাণও পেয়েছেন। জরিমানাও করা হয়েছে এসব ক্ষেত্রে।

বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টাআইন ফাঁকিদাতা প্রবাসীদের উদ্দেশে মাইকং করছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
একশ্রেণির কাণ্ডজ্ঞানহীন বিদেশফেরত ব্যক্তি কী করছে!
পক্ষান্তরে চলছে ভিন্ন দৃশ্য। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মার্কেট, বিপণিকেন্দ্র, শপিং মল, সুপারশপ এখনও খোলাই রাখা হয়েছে। অথচ মার্কেটগুলো থেকে কারোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর কী নিশ্চয়তা? সদ্য বিদেশফেরতরা তো সেখানেই ঘুরছেই। জমায়েত বন্ধ থাকার কথা থাকলেও সেখানে মানুষের জটলা তৈরি হচ্ছে। নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, স্টেশন রোড, চকবাজার, মুরাদপুর, টেরিবাজার, হকার্স মার্কেট, ষোলশহর, জিইসি এলাকা ঘুরে দেখা গেল, মার্কেটগুলো খোলা। অবাধে হচ্ছে বিকিকিনি। লোকজন জড়ো হয়ে দরদাম করছে। কিনছে। দেখলে মনে হবে যেন দেশের পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক। করোনার বিপদ নেই বুঝি সেখানে! দক্ষিণ হালিশহর, ইপিজেড, অলংকার, কর্ণেল হাট, এ কে খান, বহদ্দারহাট, বাকলিয়ায়ও সেই একই চিত্র।
এসব মার্কেট, শপিং মল ও বিপিণিকেন্দ্রকে ঘিরেই বেপারোয়া ঘোরাঘুরি করছেন সদ্য বিদেশফেরত প্রবাসী অনেকেই। আসছেন এখানে কর্মরত বিদেশি লোকজন। জাহাজের বিদেশি নাবিকগণও। এতে করে কারোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির প্রশ্নটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরণের শঙ্কা-দুশ্চিন্তা ও ভীতি। জনমনেও আতঙ্ক রয়েছে। সচেতন মানুষের কথাবার্তায় তা বেরিয়ে আসছে। অনেকেই বলছেন, প্রথম দিকেই কড়াকড়ি ব্যবস্থা ঢাকা ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে না থাকায় বিদেশফেরত অনেকেই এখন হিসাব তথা নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়ে গেছে। চট্টগ্রামবাসীর শঙ্কার সঙ্গে বিরক্তি অশেষ।
চট্টগ্রামবাসী কী চানÑ
বাস্তবতার গুরুত্ব বিবেচনা করেই চট্টগ্রাম মহানগরীর সব মার্কেট-শপিং মল, সুপারশপ অনতিবিলম্বে এবং তা এক্ষুণি বন্ধের জোরালো তাগিদ এসেছে সচেতন নাগরিকমহলের পক্ষ থেকে। তারা বলছেন, আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) পর্যন্ত অপেক্ষা করা কেন? সময়োচিত সিদ্ধান্ত হবে এক্ষুণি বন্ধ করাটা। তা আরও আগেই করা উচৎ ছিল। জনগণের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজন। আজও সচল থাকা এসব মার্কেটে বিচরণরত বিদেশফেরত ও কোয়ারেন্টাইন ফাঁকিবাজ প্রবাসীর সম্ভাব্য কোন ছোঁয়া বা উৎস থেকে কারোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বা আশঙ্কাকে তুচ্ছ করে দেখা যায় না। তাই ওষুধ-পথ্য, খাবারের দোকান চালু থাকুক। মার্কেটগুলো আপাতত বন্ধ হওয়াই কাম্য।
আজ সকালে নগরীর কয়েক জায়গায় স্থানীয় নগরবাসী বলাবলি করছিলেন, ‘চট্টগ্রামে মার্কেট আপাতত শপিং মল বন্ধ হলে আপত্তি কার? ক্ষতিটা কোথায়? ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেরি করাই বা কেন? বিদেশফেরতদের বেপরোয়া ঘোরাঘুরির সুবিধার জন্য? নাকি সুপারশপগুলোর ফ্রিজ ভর্তি পঁচা বাসি গোশত মাছ মুরগি বিক্রি সুবিধার জন্য? তারা ক্ষোভ-অসন্তোষের সাথে বলেন, বিয়েশাদি, সামাজিক অনুষ্ঠান, মাহফিল, ক্লাব-সংগঠন ও সমিতির অফিস, কমিউনিটি সেন্টার, কোচিং সেন্টার, পার্ক-বিনোদন স্পট, সিনেমা হল সবই তো বন্ধ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বন্ধ হলো। চসিক নির্বাচনও জনদাবি পূরণে বন্ধ করতে হয়েছে ইসিকে। আজ থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধ করা হলো। অথচ বর্তমান সঙ্কটকালে মার্কেট শপিং মলগুলো খোলা রাখার কী যুক্তিটা? কেনাকাটার বিলাসী মন তো এখন কারো নেই’।
তাদের সাফ কথা, দেশের অন্য কোথায় কখন মার্কেট বন্ধ করা হবে না হবে সেটা বুঝি না চট্টগ্রামে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত আসা উচিৎ। বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে এটাই হবে কল্যাণ কাজ। হোম কোয়ারেন্টাইন ফাঁকিবাজ প্রবাসীরা ছাড়াও চট্টগ্রামে অবস্থানরক বিদেশি নাগরিকগণ এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হয়ে আসা জাহাজের বিদেশি নাবিকরাও শহরে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই তিনটি উৎস থেকে যে কোন সময়েই অঘটন তথা করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির ছোঁয়ায় স্থানীয় জনগণের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তার দায় কার?



 

Show all comments
  • Mohammed Ibrahim. ২৪ মার্চ, ২০২০, ৬:০২ পিএম says : 0
    I think Chittagong Pandemic situation will be deadly because of unconsciousness of local community.People under estimate the situation. Most of the people are not inhabited cleanliness. Tea Stall,small hotel are serving foods in very ugly situation.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Ibrahim. ২৪ মার্চ, ২০২০, ৬:০২ পিএম says : 0
    I think Chittagong Pandemic situation will be deadly because of unconsciousness of local community.People under estimate the situation. Most of the people are not inhabited cleanliness. Tea Stall,small hotel are serving foods in very ugly situation.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Ibrahim. ২৪ মার্চ, ২০২০, ৬:০৩ পিএম says : 0
    I think Chittagong Pandemic situation will be deadly because of unconsciousness of local community.People under estimate the situation. Most of the people are not inhabited cleanliness. Tea Stall,small hotel are serving foods in very ugly situation.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ