Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘নিজের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করবো’

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ইতিহাস গড়ে নিজ যোগ্যতাবলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসর ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-খ্যাত অলিম্পিক গেমসে সরাসরি খেলার সুযোগ পেলেন দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান। বিশ্ব গলফ র‌্যাংকিংয়ে ৫৬তম অবস্থানে থেকে ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেন তিনি। এবারের অলিম্পিকে ৬০ জন গলফার সরাসরি খেলতে পারবেন, যাদের মধ্যে সিদ্দিকুর অন্যতম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া আসরে খেলার সুযোগ পেয়ে তিনিই হলেন প্রথম বাংলাদেশী যিনি ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে নয়, নিজ যোগ্যতায় সরাসরি অলিম্পিকে খেলার অনন্য রেকর্ড গড়লেন। সোমবার এ তথ্য জানার পর উচ্ছ¡সিত এই গলফার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ‘সরাসরি অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুব আনন্দ লাগছে। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এমন বড় আসরে খেলার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাকে। বেশী খুশী লাগছে এই কারণে যে, রিও অলিম্পিকে প্রথমবার খেলতে যাচ্ছি, অথচ কোন ওয়াইল্ড কার্ড নয়, সরাসরি যোগ্যতাবলেই খেলার সুযোগ পেয়েছি। ব্রাজিলে আমি নিজের সেরাটা দিয়েই চেস্টা করবো দেশের মান বাড়াতে। আমার ধারণা আমি কিছু একটা করে দেখাবো।’ তিনি আরো বলেন,‘১৯৯৬ সালে যখন থেকে গলফ খেলা শুরু করেছিলাম তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল অলিম্পিকে খেলবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরনে যে এতটা পথ পাড়ি দিতে হবে, তা আগে ভাবতে পারিনি। প্রায় ২০ বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে আমাকে। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। তবে আমার একজন পার্টনার পেলে ভালো হতো। একা একা কেমন লাগবে জানি না।’
গলফে এতটা পথ পাড়ি দেয়া সিদ্দিকুরের জন্য সহজ ছিলো না। এ প্রসঙ্গে তার কথা,‘ এই অবস্থানে আসতে কম কষ্ট করতে হয়নি আমাকে। আমার অতীত সবাই জানেন। আল্লাহ কোথা থেকে আমাকে কোথায় এনেছেন। আসলে কষ্ট না করলে কিছুই পাওয়া যায় না। আমি কষ্ট করেছি, যার প্রতিদানে আল্লাহ আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। সৌভাগ্যও দিয়েছেন তিনি। আশা ছিলো গলফার হবো। তা হয়েছি। ভারতে খেলার স্বপ্ন ছিলো সেটা পুরণ হয়েছে। এশিয়ান ট্যুরের আশা ছিল। তাও দু’বার জিতেছি। আসলে খেলতে খেলতেই স্বপ্নের জাল বুনেছি এবং তা বাস্তবে রুপ দিয়েছি। আমার সাফল্যে বাবা-মা খুব খুশী। তাদের কল্পনায়ও ছিলো না আমি এতোটা উপড়ে উঠতে পারবো। আমাকে নিয়ে এখন তারা গর্ব করেন।’ রিও অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ¡সিত এই গলফার দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার আমি গলফ থেকে সরাসরি অলিম্পিকে খেলব। আশা করি আগামীতে দেশের অন্য ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদরাও এ যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন। আমি সহ ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে বাংলাদেশের যে সব ক্রীড়াবিদ এবারের অলিম্পিকে খেলতে যাচ্ছেন তারা সবাই যেন দেশের মান রাখতে পারি সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’ ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে আগামী ৫ অগাস্ট বসছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ অলিম্পিক গেমসের এবারের আসর। শত বছরেরও বেশী পুরোনো এই ক্রীড়া আসরে বিশ্বের সেরা অ্যাথলেটরা প্রতীক্ষায় থাকেন নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে পদক জিততে। তারা যোগ্যতার মাপকাঠিতেই অলিম্পিকে অংশ নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের গলফার সিদ্দিকুর রহমান তাদেরই একজন। তিনি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেই সরাসরি অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যা বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ড।
দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে গলফের সঙ্গে যুক্ত সিদ্দিকুর রহমান। ২০০৫ সাল পর্যন্ত অ্যামেচার গলফার হিসেবে এশিয়ায় ১২টি ইভেন্টে শিরোপা জিতেছেন তিনি। যার মধ্যে বাংলাদেশে পাঁচটি, দু’টি করে পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও নেপাল এবং একবার ভারতে শিরোপা জেতেন। ২০০৬ সালে পেশাদার গলফ জগতে প্রবেশ করেন সিদ্দিকুর। অংশ নেন ভারতের প্রফেশনাল গফল ট্যুরে। এরপর কেবলই এগিয়ে যাওয়ার পালা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার এই গলফারের। ক্যারিয়ারে দু’টি এশিয়ান ট্যুরের ট্রফিও জেতেন ১৯৮৪ সালে জন্ম নেয়া সিদ্দিকুর। ২০১০ সালের ১ আগষ্ট ব্রæনাই ওপেন এবং ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন এশিয়ান ট্যুর শিরোপা জেতেন তিনি। প্রথম পেশাদার গলফার হিসেবে লাল-সবুজের পতাকা উড়ান বিদেশে। এক সময় ‘বাংলার টাইগার উডস’ নামেও আখ্যায়িত হন। রিও অলিম্পিকে খেলতে ২ আগস্ট ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে থাইল্যান্ডের কিংস কাপে লড়বেন সিদ্দিকুর রহমান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘নিজের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করবো’
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ