মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই, গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসে সেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারত সফরের গিয়েছিলেন। রাজধানী দিল্লিতে তার উপস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী মোদির দল বিজেপির ইন্ধনে মুসলমানদের উপরে সহিংসতা চালায় হিন্দুত্ববাদিরা। চারদিন ধরে চলা সেই সহিংসতার ঘটনায় ভারতে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। অথচ সেই ঘটনার কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার’ জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন। তার কথায় মনে হয়েছে, ভারতের গণতন্ত্র ভেঙে পড়ার মতো ঘটনায় পরোক্ষভাবে সমর্থন আছে বিশ্ব পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের।
সহিংসতা চলার সময়ই মোদির সাথে বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানান, ‘আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছি এবং আমি বলব যে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ভাল কাজ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘মোদি ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চান। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, তার সরকার ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে।’ বাস্তবে, ভারতে এই ধর্মীয় স্বাধীনতা বিশেষত মুসলমানদের জন্য যথেষ্ট হুমকির মধ্যে রয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মোদি সরকারের একটি বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লিতে মুসলমানদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলছিল, সেখানে হিন্দুত্ববাদিরা হামলা করায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়। গত ১১ ডিসেম্বর দেশটির সংবিধান ও ধর্মীয় নীতি লঙ্ঘন করে এই নাগরিকত্ব আইন জারি করা হয়। যার ফলে সংখ্যলঘু মুসলিমদের রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই সহিংসতায় অন্তত ৫৩ জনের মৃত্যু ও ৫ শতাধিক আহত হন।
সাম্প্রতিক এই সহিংসতা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মোদির ভারতে এটি একটি অশান্তকর ধারার অংশ। ২০১৪ সালে মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। এই সহিংসতা ভারতের রাজনীতিতে চ‚ড়ান্তভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিন্দু মূল্যবোধের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতিকে সংজ্ঞায়িত করাই হচ্ছে বিজেপির ‘হিন্দুত্ব’ নীতি। এখনও যুক্তরাষ্ট্র ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুন্ন, কাশ্মীরে মুসলমানদের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত করে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো ঘটনাগুলো নিয়ে সমালোচনা করতে অস্বীকার করছে। মোদির নেতৃত্বে ভারত যে বিভাজনীয় মোড় নিয়েছে, তার প্রেক্ষিতে মোদির পক্ষে ট্রাম্পের সমর্থন মুসলমানদের জন্য বিপজ্জনক বার্তা।
নয়াদিল্লির সহিংসতা ছিল পরিকল্পিত ঘটনা। এতে বিতর্ক করার কিছুই নেই। সেখানে বহুদিন ধরেই মুসলমানদেরকে হুমকি হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছিল, তাদেরকে আলাদা করে ফেলা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া ও জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সহিংসতার সময় পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়। ঠিক যেমন বহু বছর আগে মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালীন গুজরাট দাঙ্গার সময় করা হয়েছিল।
দিল্লিতে বহু বছর ধরে হিন্দু ও মুসলমানরা মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস ও কাজ করে আসছিল। তবে গত মাসে সেখানে মুসলমানদের উপর হিন্দুদের চালানো সহিংসতার পর তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্কে চিড় ধরেছে। কাচের মতো ভেঙে গেছে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। বলা বাহুল্য এই সহিংসতায় ইন্ধন যুগিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা, যার জোরে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ভারতজুড়ে এই এজেন্ডা বাস্তবায়নেরই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হিন্দু অধ্যুষিত যমুনা বিহারে এখনও সহিংসতার চিহ্ন স্পষ্ট। আর এখানকার হিন্দু অধিবাসীরা গত মাসের শেষ দিকে হওয়া ওই দাঙ্গার জন্য সংখ্যালঘু মুসলিমদের দায়ী করছে। এর প্রতিশোধ হিসাবে তারা মুসলিম ব্যবসায়ী বর্জন করছে এবং মুসলিম শ্রমিকদের কাজে নিতে অস্বীকার করছেন। মুসলমানরা বলছেন, তাদের এমন এক সময়ে চাকরির সন্ধানে নামতে হয়েছে যখন করোনভাইরাস মহামারি ভারতের অর্থনীতির ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রয়টার্সের রিপোর্টার উত্তর-পূর্ব দিল্লির আটটি অঞ্চলের যে ২৫ জন হিন্দুর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাদের প্রায় সবারই মনোভাব মুসলিম বিদ্বেষী। এছাড়া রয়টার্স প্রায় ৩০ জন মুসলমানের সাথেও কথা বলেছে, তাদের বেশিরভাগ জানিয়েছে, তারাও আর হিন্দুদের বিশ্বাস করতে পারছেন না।
মধ্য দিল্লির মুসলিম গবেষক ও চিন্তাবিদ আদিল বলেন, ‘এখন আমরা নতুন এই অবস্থার সঙ্গে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি। এখন আমরা ক্যারিয়ার, চাকরি ও ব্যবসাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি না। এখন আমাদের কাছে নিরাপত্তা আর বেঁচে থাকাটাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।’ তিনি হিন্দুদের প্রতিশোধের ভয়ে নিজের তার পুরো নাম বলার সাহস পাননি।
২০১৪ সালে মোদীর বিশাল নির্বাচনী জয়ে উৎসাহিত হয়ে, কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলো একটি হিন্দু-প্রথম এজেন্ডা অনুসরণ করতে শুরু করেছিল, যা ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের আতঙ্কে ফেলে দেয়। তারপর থেকেই ছন্দ হারিয়েছে দেশটির সাম্পদায়িক সম্প্রীতির চিরচেনা চিত্রটি। কেননা সংখ্যাগুরু হিন্দু ভোটে ক্ষমতায় আসা বিজেপির এজন্ডা ছিল হিন্দু তোষণ। যার ফলে স্বভাবতই সামাজিক ও আর্থিক শোষণের মুখে পড়েন সেখান মুসলমানরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিন্দুদের কাছে পবিত্র বলে স্বীকৃত গরু পাচারের অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে বহু মুসলমানকে। গত বছরের আগস্টে ভারতের অধিকৃত ও একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থলে হিন্দুরা রামমন্দির নির্মাণ করতে পারবে বলে রায় দেয়। ১৯৯২ সালে স্থানীয় প্রশাসনের মদদে হিন্দুরা নির্মমভাবে ভেঙে ফেলেছিল ১৬ শতাব্দীতে নির্মিত ওই মসজিদিটি। তখন এই ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছিল বিজেপি। সূত্র : সিএনএন, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।