Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বেচ্ছাসেবক দল ৭ জনে বন্দি

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে খুঁড়িয়ে চলছে কার্যক্রম

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

সংগঠন পুনর্গঠন করে শক্তিশালী করতে ৭জনকে তিন বছরেরও বেশি সময় আগে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠন, ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখার কথা ছিল তাদের। কমিটির মেয়াদ (তিন বছর) শেষ হওয়ার পরও সেই ৭ জনের হাতেই রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল। নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েকদফা বৈঠক করে কমিটি ঘোষণার জন্য সময়সীমা বেধে দিয়েও কাজ হয়নি। উল্টো কমিটিতে ব্যক্তিগত কর্মীদের পুনর্বাসনের করে সংগঠনটিকে ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। বিষয়টি নিয়ে তারেক রহমান নিজেও কথা বলেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলে ব্যক্তিগত নয়, ত্যাগীদের দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে অংঙ্গসংগঠনগুলোর ওপরই নির্ভর করে বিএনপি। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী ছাত্রদলের নেতাাও পুনর্বাসনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে। কিন্তু যাদেরকে কমিটি গঠন ও শক্তিশালী করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই সংগঠনকে কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। পদ প্রত্যাশী একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান কমিটির ৭জনকে তিন বছরের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কমিটি গঠন ও সংগঠন শক্তিশালী করতে এই সময় যথেষ্ট। কিন্তু তাদের আন্তরিকতা আছে কিনা সে বিষয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, দীর্ঘদিনেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় পদপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও এখন হতাশায় ভুগছেন। পদ-পদবী না থাকায় অনেকে মন মরা হয়ে রাজনীতিবিমুখও হচ্ছেন। কর্মসূচি ঘোষণা হলে খুব বেশি জনশক্তি দেখা যায় না। যুবদল ও ছাত্রদল তৃণমূল পর্যায় থেকে তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত উভয় সংগঠনের টিমের নেতারা তৃণমূল পুনর্গঠনে মাঠে কাজ করছেন। অথচ দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক দলের তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ বন্ধ। আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় যুবদল ও ছাত্রদলের মতো স্বেচ্ছাসেবক দলের তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সংগঠনের ওপর। তারা আরো বলেন, আগামীতে দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সংগঠনে ধরে রাখা কঠিন হবে। কেনান তৃণমূলে যুবদলের পুনর্গঠন অব্যাহত থাকায় দীর্ঘদিন পদ-পরিচয়হীন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা তখন যুবদলের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে, যা সংগঠনের জন্য হবে আত্মঘাতী।

স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা জানান, গতবছর ২৫ অক্টোবরের মধ্যে কমিটি গঠনের জন্য এক বৈঠকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারা ওই নির্দেশনা অনুযায়ি কমিটি গঠন করতে পারেননি। পরে গত ডিসেম্বরে পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটি দলীয় ফোরামে জমা দেয় স্বেচ্ছাসেবক দল। সেই তালিকা পর্যালোচনা করার পর দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ৭ নেতার মধ্যে ২জনের কর্মী সমর্থক দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানার পর গত ১২ মার্চ ৭জনের সাথে স্কাইপিতে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, দলকে ব্যক্তিগত সংগঠন যেনো না করা হয়, বরং পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে যারা ত্যাগী, সভা-সমাবেশ করে, যোগ্য এমন কর্মীদেরকেই নেতা বানাতে হবে। কারো পছন্দের লোককে জায়গা দিতে গিয়ে যেনো ত্যাগী কোন কর্মী বাদ না পড়ে। তিনি খসড়া কমিটি ফিরিয়ে দিয়ে ১৯ মার্চের মধ্যে আংশিক কমিটির ৭জনের মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়ে ১৯ মার্চ আবার স্কাইপিতে বৈঠক করার কথা রয়েছে তারেক রহমানের।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন বছর মেয়াদী এই কমিটির মেয়াদ গত বছরের ২৭ অক্টোবর শেষ হয়েছে। ছাত্রদলের মতো সরাসরি ভোটে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপি হাইকমান্ডের। তা বাস্তবায়নে গত অক্টোবরে সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ তাকে বুঝাতে সক্ষম হন যে- স্বল্প সময়ের জন্য হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা দরকার। কেননা আংশিক কমিটি রেখে নতুন কাউন্সিল হলে অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী বাদ পড়বেন, যারা কোনো সাংগঠনিক পরিচয় দিতে পারবেন না। পূর্ণাঙ্গ হলে নতুন কাউন্সিলের আগেই অনেক নেতার রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে। নেতাদের এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ৩০১ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটি দলীয় ফোরামে জমা দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বলেন, আমরা কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বেচ্ছাসেবক

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ