মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দীর্ঘ বিলম্বে হলেও অবশেষে প্রকাশিত ইরাক যুদ্ধ-সংক্রান্ত চিলকট রিপোর্ট বিশ্বময় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে উত্থাপিত হচ্ছে এই যুদ্ধের কার্যকারণ এবং উদ্দেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন। ইতিহাসের জঘন্যতম অন্যায় ও আগ্রাসীমূলক এই যুদ্ধ ইরাকসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যে অশান্তি ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়, তার রেশ
বর্তমানে গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। আজকে যে আইএস সংকটকে দুনিয়াব্যাপী এক মহসংকট হিসাবে দেখা
হচ্ছে তাও ইঙ্গ-মার্কিন অপশক্তির সেই আগ্রাসী যুদ্ধেরই ফল। চিলকট রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে জনরোষ ধুমায়িত হচ্ছে। লেবার পার্টি থেকে তার বহিষ্কার
দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযানও শুরু হয়েছে। এমনকি ওই অন্যায় ও আগ্রাসী যুদ্ধের মূল হোতা বুশ-ব্লেয়ারের
বিচারের দাবিও ক্রমশ সোচ্চার হয়ে উঠছে। ২৬ লাখ শব্দের ওই প্রতিবেদনে ইরাক যুদ্ধ-সংক্রান্ত তদন্ত
কমিশনের প্রধান জন চিলকট ব্রিটেনের ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে
বিতর্কিত সেনা সম্পৃক্ততা বলে মন্তব্য করেছেন। তদন্তে পাওয়া তথ্যের সারাংশ হিসেবে তিনি
বলেন, ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি ভুল ছিল, যার ফল
বিশ্ববাসীকে আজো ভোগ করতে হচ্ছে।
(পূর্ব প্রকাশের পর)
ইনকিলাব ডেস্ক : ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সম্পৃক্ততা নিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত চিলকট তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্বময় হইচই ফেলে দিয়েছে। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে ব্রিটেন সরকারের মন্ত্রীদের যুক্তি, পরিকল্পনা এবং সামরিক হস্তক্ষেপ যে ভুল ছিল তা ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত এই সামরিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্যার জন চিলকটের প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রুটিপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দেশের মানুষকে না জানিয়ে এই যুদ্ধে জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। ইরাক যুদ্ধের পর কী ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে এবং সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে হামলাকারী প্রধান শক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য কারোরই কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
২৬ লাখ শব্দের ওই প্রতিবেদনে স্যার জন ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বিতর্কিত সেনা সম্পৃক্ততা বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এই উপসংহারে এসেছি যে, ইরাক যুদ্ধে যোগ দেওয়া ছাড়াও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা যেত, যার কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। শান্তিপূর্ণ উপায়েই ইরাককে নিরস্ত্র করা যেত। সমস্যা সমাধানে ওই মুহূর্তে সেনা সম্পৃক্ততাই শেষ কথা ছিল না।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তে পাওয়া তথ্যের সারাংশ তুলে ধরতে গিয়ে স্যার জন চিলকট বলেন, ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি ভুল ছিল, যার ফল আজো ভোগ করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সেনা অভিযান হয়তো কিছু কারণে জরুরি ছিল। কিন্তু ২০০৩ সালের মার্চ মাসে সাদ্দাম হোসেনের পক্ষ থেকে কোনো হুমকি ছিল না এটা ঠিক। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বেশির ভাগ সদস্যের অভিমত ছিল যে, সেখানে জাতিসংঘের পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখা হোক। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরাকে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়।
ইরাক যুদ্ধ থেকে পাওয়া শিক্ষা ভবিষ্যতে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে কাজে লাগবে বলেও মনে করেন জন চিলকট। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে বহুবার যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের শক্তি প্রমাণিত হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, যেখানে ব্রিটিশদের ইচ্ছের সঙ্গে মার্কিনিদের ইচ্ছের মিল থাকবে না সেখানেও সমর্থন দিতে হবে। ইরাক হামলার ক্ষেত্রে তাই করা হয়েছে।
ভ্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য এবং মূল্যায়নের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য ইরাক যুদ্ধে জড়ায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন স্যার জন। তিনি বলেন, এসব তথ্য দ্বিতীয়বার যাচাই করা হয়নি, অথচ তা করা উচিত ছিল। ইরাকে আক্রমণ চালানোর পর যখন মারণাস্ত্র পরিদর্শকরা ইরাক পরিদর্শনে যান, তখন তারা সেখানে টনি ব্লেয়ারের বর্ণনা অনুযায়ী অস্ত্রের বিপুল ভা-ার দেখতে পাননি। অথচ যুদ্ধের আগে বলা হচ্ছিল, ইরাকে বিপুল বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে যা গোটা পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ।
ইরাকে বিপুল গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মজুদ রয়েছে এমন তথ্য প্রচার করে যুদ্ধের সমর্থন চাওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে স্যার জন চিলকট বলেন, ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে ইরাকে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র রয়েছে। তাদের বিশ্বাস ছিল, সাদ্দাম হোসেন এসব অস্ত্র জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শকদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের এই দাবি তারা প্রমাণ করতে পারেননি। এ ছাড়া ইরাকে সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার পর কী হবে তা নিয়েও যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র কারো কোনো পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ছিল না। বিবিসি, ডেইলি মেইল, মিরর, দি গার্ডিয়ান। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।