Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যরাতে সাংবাদিকের কারাদন্ড কুড়িগ্রামে

টক অব দ্য কান্ট্রি কুড়িগ্রামের ডিসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

মধ্যরাতে একজন সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছর কারাদন্ড দিয়েছেন। এ ঘটনা গতকাল ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। সর্বত্রই আলোচনা-বিতর্ক একজন জেলা প্রশাসক এমন করতে পারেন কি না? ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ হয়েছে। প্রশাসনেও তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এদিকে রাতে বাসা থেকে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে কারাদন্ড দেয়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করতে বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ডিসিকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এমনকি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারেন না। অবশ্য মধ্যরাতে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড দেয়ার অভিযোগের ঘটনা তদন্ত করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গতকাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করেছেন বিভাগীয় কমিশনার। মধ্যরাতে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেলে পাঠানোর ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে বিষয়টি আমলে নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মাদক পাওয়ার অভিযোগে এক বছরের কারাদন্ড দিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও প্রেস ক্লাবের বৈঠক থেকে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাসভবন থেকে একটি মহল তুলে নিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে এবং ডিসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের ওপর যদি অন্যায় হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই জেলা প্রশাসককে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমি এখনি খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট ও সাজা কোনও কিছুই আইনসম্মত নয়। ডিসি বলেই সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

জানা যায়, শুক্রবার মধ্য রাতে কুড়িগ্রাম ডিসি অফিসের দুই-তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট ১৫-১৬ জন আনসার সদস্যকে নিয়ে দরজা ভেঙে আরিফুল ইসলামের বাসায় প্রবেশ করেন।
আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে খাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিছলাম। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে আমার স্বামী ফোনে স্বজনদের বিষয়টি জানান। সদর থানার ওসি মাহফুজুর ইসলামকেও ফোন করেন। এ সময় তারা বাইরে থেকে গালাগাল করতে করতে একপর্যায়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢোকে। তারা আমার স্বামীকে মারধর শুরু করে। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও মারতে উদ্যত হয়। পরে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে একটা শার্ট পরারও সময় দেওয়া হয়নি। মাত্র পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে যায়। বাসায় কোনো তল্লাশি অভিযানও চালানো হয়নি। অথচ দাবি করা হয়েছে তার কাছে মদ ও গাঁজা পেয়েছে। তিনি বলেন, তুই অনেক জ্বালাচ্ছিস এ কথা বলেই মারধর শুরু করে আরিফকে। বাড়িতে আমার স্বামী, আমি আর আমার দুই শিশু সন্তান ছাড়া আর কেউ ছিল না তখন। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এডিশনাল এসপি ও ওসি সাহেব আমাদের বাসা পরিদর্শন করেছেন। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। আরিফুলের স্ত্রী জানান, ডিসি অফিসে রাত ২টার সময় মোবাইল কোর্ট বসানো হয়। এক বছরের কারাদন্ড দিয়ে তাকে রাত আড়াইটার দিকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়।

ডিসি অফিস দাবি, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। আরিফুল ইসলামকে কারাদন্ড দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান। কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মাহফুজুর ইসলাম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ডিসি অফিসের লোকজন মোবাইল কোর্টের জন্য আরিফুলকে নিয়ে যায়।

খবরে প্রকাশ, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দুর্নীতি বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া স¤প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। এ বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়। অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে সে দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) আ. গাফফার খান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে খোঁজ-খবর নিতে বলেছি। আশা করি রোববার ফিডব্যাক পাবো। তখন প্রয়োজন হলে অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এম. তারিকুল ইসলাম ইনকিলাববে বলেন, ম্যাসেজ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) চলে গেছেন। তিনি স্টেটমেন্ট নিয়েছেন। এখানে টাস্কফোর্স অভিযান এবং মোবাইল কোর্ট ভিন্ন বিষয়। আমরা আশা করি নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু তাহের মো. মাসুদ রানা ইনকিলাবে বলেন, আমি কুড়িগ্রামে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। এখানে সবার স্টেটমেন্ট নিচ্ছি। দুই পক্ষ এবং অন্যান্যদের স্টেটমেন্ট নেয়া হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্টটা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সাবমিট করব।



 

Show all comments
  • Sarkar Anwar ১৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 1
    মধ্যরাতে মোবাইল কোর্টে সাংবাদিকের জেল : কুড়িগ্রামের ডিসির অপসারণ ও তার সকল অপকর্মের বিচার চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Chcolet Gril ১৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    V sad news
    Total Reply(0) Reply
  • Arezaul Haque ১৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    ডিসির সমস্তকিছু বাতিল করা হউক,তাহলে দূর্নীতি কমবে
    Total Reply(0) Reply
  • Maruf Uddin ১৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 1
    স্বৈরদস্যুতার রাষ্ট্রে জনগণের জীবনের স্বাধীনতা অধিকার মালিকানা নিরাপত্তা কিছুই থাকে না। মানবতার রাষ্ট্রে সব মানুষ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সমান অংশীদারীত্ব পায়। অতএব, মানবতার রাজনীতির মাধ্যমে মানবতার রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে তথা ইনসানিয়াত বিপ্লব গড়তে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rashidul Islam ১৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    ভাবতে অবাক লাগে এই দূর্নীতিপরায়ন ডিসির বদলির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য কুড়িগ্রামের জনগণ একসময় আন্দোলন পর্যন্ত করেছিলেন। আজকে তারাই তার অপসারন বিচার চায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Asaduzzaman Asad ১৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    জামালপুরের ডিসির পক্ষ থেকে কুড়িগ্রামের ডিসিকে শুভেচ্ছা
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiqul Islam ১৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    দুর্নীতির দায়ে জেলা প্রশাসকের বিচার এবং সর্বচ শাস্তি বরখাস্ত করা উচিত ।
    Total Reply(0) Reply
  • shagor ১৫ মার্চ, ২০২০, ৮:৪২ এএম says : 0
    কিভাবে মদ গাজা পাওয়ার একটা ষড়যন্ত্র বানিয়ে ফেলল, তা আশ্চর্য!!! এভাবেই চলছে সব কিছু। খারাপ মানুষ সবই করতে পারে। সব মানুষই এখন খারাপ মানুষগুলোর কাছে যিম্মী।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৫ মার্চ, ২০২০, ১১:১৮ এএম says : 0
    We liberated our country from Pakistan -- to live in our country in peace with human dignity.. O'Allah this government have cross all the limit, now punish them and select a leader who will lead the country by the Law of Qur'an..
    Total Reply(0) Reply
  • md.Akbar Hussain ১৫ মার্চ, ২০২০, ১০:৪০ পিএম says : 0
    প্রমাণ হলে বাড়িতে চলে যেতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাংবাদিক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ