Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খোলা আকাশের নিচে কয়েক হাজার মানুষ

ফের রূপনগর বস্তিতে অগ্নিকান্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর বস্তির বাসিন্দা রহিমা। বস্তিতে আগুন লাগার পর তিনি আশ্রয় নেন শিয়ার বাড়ি রোডে। একই অবস্থা নাজমুল নামের আরেক বাসিন্দা। তিনি ওই বস্তির ৩৪ নম্বর রোডে একটি বাসায় বাসবাস করতেন। আগুন লাগার পর তিনিও খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। শুধু রহিমা ও নাজমুল নয়, গতকাল রূপনগর বস্তিতে আগুন লাগার পর তাদের মত কয়েক হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিজে আশ্রয় নেন। তারা কেউ ঘর থেকে তেমন কিছু নিতে পারেন নাই। এভাবে আগে আরো দুই বার ওই বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটে।

গতকাল ফের ওই বস্তিতে অগুন লাগার পর প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর আগেই কয়েকশত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে পানি সংকট ও বাতাসের কারণে বস্তিতে দ্রুত আগুন ছড়িয়েছে বলে জানান ফায়ার সর্ভিসের কর্মকর্তারা। এছাড়া আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে আগুন লাগার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে।

ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাজু শিকদার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, রূপনগরের রজনীগন্ধা অ্যাপার্টমেন্টের পেছনে ‘ট’ ব্লক বস্তিতে গতকাল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের সময় বাঁশ ও টিনের একটি ছাপরাঘরে আগুন লাগে। পরে সেখান থেকে অন্য ঘরগুলোয় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট প্রথমে ঘটনাস্থলে যায়। পরে পর্যায়ক্রমে ১৬ ও ২২টি ইউনিট সেখানে কাজ শুরু করে। তাদের সাথে সাধারণ মানুষও যে যার মতো পানি ও বালি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তারপরও আগুন নেভানো সম্ভব হচ্ছিল না। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের আরো তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। মোট ২৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা জানান, আাগুন লাগার সাথে সাথে বস্তির বাসিন্দারা ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু তারা কোনো মালামাল ঘর থেকে বের করে নিতে পারেননি।
আগুন নেভার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স ও মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, আগুনের খবর পাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে আমাদের ২৫টি ইউনিট আসে। আগুন লাগার পর বস্তিবাসীরা বিভিন্ন আসবাব দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল। যে কারণে গাড়ি ঢুকতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

তিনি বলেন, চরম পানি সংকট ছিল; যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার না থাকায় বরাবরের মতো এবারও পানি সংকটে পড়তে হয়েছে। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে পানি নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এছাড়া ফাঁকা জায়গায় তীব্র বাতাস থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে বড়ধরনের বেগ পেতে হয়। তারপরও ২৫টি ইউনিটের সাড়ে তিন ঘন্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ারের এই কর্মকর্তা বলেন, বস্তিবাসী ফায়ারের গাড়ি ঢুকতে বাধা দেয়। তারা ফায়ার কর্মী ও গাড়িতে আক্রমণ করে। এটা ঘরহারা বস্তিবাসী আবেগ থেকে করেছে বলে মনে করি। ধৈর্যের সাথে তাদের বুঝিয়ে এবং র‌্যাব পুলিশের সহায়তায় বস্তিবাসীদের বুঝিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তা নিশ্চিত হতে তদন্ত রিপোর্টের দরকার রয়েছে। এছাড়া পুরো বস্তিতে প্লাস্টিকের পাইপে গ্যাস লাইনের সংযোগ ছিল বলে দেখেছি আমরা। সেটিও তদন্তের আওতায় আসবে।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লা জানান, বস্তিতে প্রায় ১০ হাজার ঘরে ৪০ হাজার কক্ষ ছিল। অধিকাংশ ঘরই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একেক নেতার ২০টা, ৪০টা করে ঘর রয়েছে। বস্তির এসব নেতার তালিকা করা হবে।

তিনি বলেন, বস্তিবাসীর জন্য যত ধরনের সহযোগিতা দরকার আমরা করবো। সরকারি প্রশাসনের বাইরে আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মী বস্তিবাসীর পাশে থাকবে। বস্তিতে থাকা অবৈধ গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন এসব কথা বলছে তারা কারা? তারা এতোদিন কেন বলেনি? তাদের ধরা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য যতগুলো আশ্রয় কেন্দ্র দরকার, তা স্থাপন করা হবে। এছাড়াও যত বেলা খাবার দরকার হবে সব সরবরাহ করা হবে বলেও জানান ইলিয়াস মোল্লা।

এদিকে এলাকার সাবেক কাউন্সিলর হাজী রজ্জব হোসেন জানান, বস্তিতে কয়েক হাজারের বেশি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত দুই শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকশ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বস্তিতে ঘর হারানো হাজেরা খাতুন জানান, তিনি পাশবর্তী এলাকায় একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। প্রতিদিনের মত গতকাল সকালে কাজে যান। এ সময় সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কাজের বাড়ি থেকে বস্তিতে ধোঁয়া উঠতে দেখে তিনি ছুটে আসেন। পরবর্তীতে তার ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় কোনো কিছুই বের করতে পারেনি তিনি। তাই চোখের সামনেই সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, রূপনগরের ওই বস্তিতে গত বছর আগাস্ট মাসে প্রথম অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পরে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় দফায় আগুন লাগে। গতকাল তৃতীয় বারের মত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ