Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চিলকট প্রতিবেদন - অবৈধ ইরাক হামলার কারণে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন ব্লেয়ার

প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দীর্ঘ বিলম্বে হলেও অবশেষে প্রকাশিত ইরাক যুদ্ধ-সংক্রান্ত চিলকট রিপোর্ট বিশ্বময় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে উত্থাপিত হচ্ছে এই যুদ্ধের কার্যকারণ এবং উদ্দেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন। ইতিহাসের জঘন্যতম অন্যায় ও আগ্রাসীমূলক এই যুদ্ধ ইরাকসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যে অশান্তি ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়, তার রেশ বর্তমানে গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। আজকে যে আইএস সংকটকে দুনিয়াব্যাপী এক মহসংকট হিসাবে দেখা হচ্ছে তাও ইঙ্গ-মার্কিন অপশক্তির সেই আগ্রাসী যুদ্ধেরই ফল। চিলকট রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে জনরোষ ধুমায়িত হচ্ছে। লেবার পার্টি থেকে তার বহিষ্কার দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযানও শুরু হয়েছে। এমনকি ওই অন্যায় ও আগ্রাসী যুদ্ধের মূল হোতা বুশ-ব্লেয়ারের বিচারের দাবিও ক্রমশ সোচ্চার হয়ে উঠছে। ২৬ লাখ শব্দের ওই প্রতিবেদনে ইরাক যুদ্ধ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান জন চিলকট ব্রিটেনের ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বিতর্কিত সেনা সম্পৃক্ততা বলে মন্তব্য করেছেন। তদন্তে পাওয়া তথ্যের সারাংশ হিসেবে তিনি বলেন, ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি ভুল ছিল, যার ফল বিশ্ববাসীকে আজো ভোগ করতে হচ্ছে।
(পূর্ব প্রকাশের পর)
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পথ না খুঁজে যুক্তরাজ্য ইরাক অভিযানে নামে। এর মাধ্যমে তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষতি করেছে। চিলকোট বলেন, ত্রুটিপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য এবং অপর্যাপ্ত মূল্যায়নের ভিত্তিতে ইরাক বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ হওয়ার বিষয়টি এখন পরিষ্কার। তারা বিষয়গুলো পুনর্মূল্যায়ন করেনি, যেটি তাদের করা উচিত ছিল। ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার যে হুমকি ছিল সেটিও ব্লেয়ার সরকার ঠিকভাবে বিবেচনা করেনি। প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়, বিষয়টি অকারণ জোর দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। যুদ্ধের পর ইরাকে ওই ধরনের কোনো অস্ত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্লেয়ার একমাত্র লেবার প্রধানমন্ত্রী যিনি টানা তিনবার জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যুক্তরাজ্যবাসীর কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও ইরাক যুদ্ধ তার খ্যাতিতে কলঙ্ক লেপন করেছে। ইরাক যুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ সেনাদের পরিবার ওই যুদ্ধকে চরম ব্যর্থতা বলে মনে করে এবং এ বিষয়ে আদলতের দ্বারস্থ হওয়ার সম্ভাবনার কথাও তারা জানিয়েছে। চিলকোট প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে ইরাক যুদ্ধে ছেলে হারানো রজার বেকন বলেন, বিশেষ পক্ষগুলোকে আদালতে ডেকে তাদের কাজের কৈফিয়ত চাওয়া ও কোনো পথ যদি খুঁজে পাওয়া যায় তবে আমরা তাই করব। এটি আমাদের অধিকার। সাদ্দামকে উৎখাত করার পর পেরিয়ে গেছে ১৩টি বছর। আজও শান্তি ফেরেনি ইরাকে।
ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রকাশিত এক রিপোর্টে ওই যুদ্ধকে ‘ভুল’ ও ‘অপরিণামদর্শী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তের বছর আগে ইরাক আক্রমণে ব্রিটেনের যোগ দেয়া নিয়ে প্রকাশিত এক চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পথ থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার সরকার সামরিক আগ্রাসনে গেছে। আর এজন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে টনি ব্লেয়ারকে। এরই মধ্যে তাকে আলাদতের মুখোমুখি করার প্রস্তুতি শুরু করেছেন আইনজীবীরা।
ইরাক যুদ্ধ নিয়ে ২০০৯ সালে চিলকোট কমিশন গঠিত হয়। দীর্ঘ ছয় বছর এই কমিশন ইরাক যুদ্ধের যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। স্যার জন চিলকোট গত বছর বলেছিলেন, এ বছর তিনি রিপোর্টটি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে সক্ষম হবেন। নিজের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইরাক যুদ্ধের ১৩ বছর পর ওই যুদ্ধে ব্রিটেনের ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলেন তিনি। প্রতিবেদন ইরাক যুদ্ধকে ভুল ও অপরিণামদর্শী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্পষ্টতই গোয়েন্দাদের ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়ন ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ইরাকে হামলা চালানো হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার যে পরিস্থিতিতে যুদ্ধে যাবার আইনগত ভিত্তি ছিল বলে মনে করেছিল, তা যথাযথ ছিল না। অধীর আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করা এই প্রতিবেদন পেশ করার সময় চিলকোট বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে সাদ্দামের জীবাণু অস্ত্রের উৎপাদন অব্যাহত রাখার প্রমাণ মেলেনি। তিনি বলেন, ইরাকের ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র বিশ্বকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছ, এই কথা যত নিশ্চয়তার সাথে বলা হয়েছিল, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরাককে নিরস্ত্র করার জন্য সকল শান্তিপূর্ণ উপায়ে না শেষ করেই ২ ব্রিটিশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার সরকার সামরিক আগ্রাসনের পথ বেছে নেন। কোনো রকম বিচারবিশ্লেষণ ছাড়াই সৈন্য পাঠানো হয় ইরাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদ্দাম হোসেন সন্দেহাতীত অত্যাচারী একনায়ক হলেও নিরাপত্তা কাউন্সিলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেত। অনেক শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ থাকলেও তা নেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, নিহত সৈন্যদের পরিবার এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে আইনের কাঠগড়ায় নিতে পারবে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে হেগে আন্তর্জাতিক আদালতের সম্মুখীন হতে হবে তাকে। ব্লেয়ারকে আদালতে নিতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন আইনজীবীরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করার জন্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে তার বিরুদ্ধে। সূত্র : বিবিসি, ডেইলি মেইল, মিরর, দি গার্ডিয়ান। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিলকট প্রতিবেদন - অবৈধ ইরাক হামলার কারণে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন ব্লেয়ার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ