পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ ও ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সউদী বাদশাহ পরিবারের জ্যেষ্ঠ এ দুই সদস্যকে শুক্রবার ভোরেই আটক করেন কালো পোশাক পরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে দাবি করা হয়, শাহী আদালত তাদের বিরুদ্ধে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে সিংহাসনচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে। এতে তাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড কিংবা শিরচ্ছেদ হতে পারে।
প্রিন্স আহমেদ ও বিন নায়েফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত সউদী সিংহাসনের উত্তরসূরি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বিন নায়েফ। তার ছোট ভাই নওয়াফ বিন নায়েফকেও একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্ষমতা সুসংহত করতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ধরপাকড় অভিযানে সর্বশেষ আটক হলেন আহমেদ ও বিন নায়েফ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক র্যান্ড কর্পোরেশনের নীতিবিশ্লেষক বেকা ওয়াসের ব্লমবার্গকে বলেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তার উত্থানের ক্ষেত্রে সব হুমকি ইতিমধ্যে তিনি সরিয়ে দিয়েছেন। পাল্টা প্রতিক্রিয়া ছাড়াই তার সমালোচকদের হত্যা করছেন। ‘আর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে এটা তার আরও বড় পদক্ষেপ। তাকে যাতে অতিক্রমের চেষ্টা করা না হয়, রাজপরিবারের সদস্যদের তিনি সেই বার্তা দিতে চেয়েছেন নতুন এই ধরপাকড়ের মাধ্যমে,’ -বললেন এই বিশ্লেষক।
আল-জাজিরার সাংবাদিক জামাল আল-শায়াল বলেন, সউদী রাজপরিবারের দুই জ্যেষ্ঠ সদস্যের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কী কারণে যে এই গ্রেফতার তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। আর এ বিষয়ে কিছু বলা অপ্রয়োজনীয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এর একটি সম্ভাব্য মতলব হতে পারে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের বয়স। তিনি এখন ৮৪ বছরে রয়েছেন। বাবার মৃত্যু কিংবা সিংহাসন ত্যাগের আগে সম্ভাব্য প্রতিদ্ব›দ্বীদের আটকে রাখতে চাচ্ছেন উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমান।
শাহী পরিবারে প্রিন্স আহমেদ বিশেষ মর্যাদা বহন করেন। কারণ বাদশাহ সালমানের একমাত্র জীবিত আপন ভাই তিনি। আর বাদশাহ আবদুল আজিজের জীবিত সন্তানদের একজন তিনি। কাজেই শাসক পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে তার ব্যাপক কদর রয়েছে।
এর আগে নিজের ভাইকে সিংহাসনের উত্তরসূরি মনোনয়ন দিতেন সউদী শাসকরা। কিন্তু বাদশাহ সালমান প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালে নিজের ছেলেকে এই পদে বসান। ২০১৮ সালে লন্ডনে বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হওয়ার সময় সউদী আরবের বর্তমান নীতির সমালোচনা করার পর থেকে প্রিন্স আহমেদকে প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে ভাবতে শুরু করেন যুবরাজ।
বিক্ষোভকারীরা তখন ইয়েমেনে সউদী নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। কাজেই প্রতিবেশী দেশটিতে মানবিক সঙ্কটের দায় নেয়ার ক্ষেত্রে বাকি রাজপরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন প্রিন্স আহমেদ। এক ভিডিওতে শাহীপরিবারের নাম নিয়ে তাকে বলতে শোনা গেছে, আল-সউদে এসব কী হচ্ছে? এসবের জন্য বাদশাহ ও তার সন্তানই দায়ী। এরপরে ইন্টারনেটে ক্ষুব্ধ সউদীরা প্রিন্স আহমেদের আনুগত্য মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু দ্রুতই এটা পরিষ্কার হয় যে, সিংহাসনের উত্তরসূরি হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। একটি বিবৃতি ইস্যু করে তিনি বলেন, তার মন্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তী বসন্তে তিনি দেশে ফিরে যান। বিমানবন্দরে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে আলিঙ্গন করেন। ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক রেখে আসতেই দেখা গেছে তাকে।
শাহী পরিবারের যেসব সদস্যকে অবাধ্য হিসেবে বিবেচনা করছেন যুবরাজ, তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, প্রিন্স আহমেদের ক্ষেত্রে প্রথমে তেমনটি ঘটতে দেখা যায়নি। তিনি অনেকটা স্বাধীনভাবেই দেশে ফিরে আসেন ও চলাচলের সুযোগ পান। বুধবার তিনি অবকাশ থেকে ফিরে আসেন এবং পরের দিনেই গ্রেফতার হন। ক্ষমতাসীন আল-সউদ পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নিয়ে গঠিত হাইয়াতুল বাইয়ার তিন সদস্যের একজন তিনি। ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যখন সিংহাসনের উত্তরসূরি করা হয়, তখন প্রিন্স আহমেদ তার বিরোধিতা করেন।
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ ছিলেন সাবেক যুবরাজ। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তাকে মোহাম্মদ বিন সালমানের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে আসছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি দেশের তিন সশস্ত্র বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যার মধ্যে সেনাবাহিনী ও ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীও রয়েছে। কাজেই ক্ষমতার লড়াইয়ে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ সুবিধা পাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ। মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে তার বেশ জানাশোনা আছে। শাহী পরিবারের মধ্যে যেটাকে সম্পদ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কেবল তাকে ক্ষমতাচ্যুতই করেননি, ব্যাপক অপমান ও লাঞ্ছনাও দিয়েছেন। নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বর্তমান যুবরাজের সহযোগীরা তাকে শারীরিকভাবে জবরদস্তি করেছেন। তাকে দীর্ঘ সময় আটক রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাবঞ্চিত করা হয়েছে। বিন নায়েফের সম্পদ জব্দ করা হয়। আর সামাজিকমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হয়, তিনি ব্যথানাশকে আসক্ত। তার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয় এবং স্বাধীন চলাচল বন্ধ করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালো উর্দি ও মাস্ক পরা লোকজন রিয়াদে তার ডেজার্ট ক্যাম্পে আসেন এবং তাকে ও তার ছোটভাইকে তুলে নিয়ে যান। এসময় তার বাড়িঘর তল্লাশি ও যোগাযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। সূত্র : ব্লমবার্গ, আল-জাজিরা, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ডেইলি মেইল ও নিউজউইক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।