বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
অর্থ না জানলেও মুসলিম জীবনে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত অনেকে ব্যবহার করে থাকেন, যা ইসলামি প্রভাবের প্রতিফলন। যেমন, একটি বহুল ব্যবহৃত বাক্য ‘আল্লাহ হাফেজ’ বা ‘খোদা হাফেজ’। কারো বিদায়কালে, কোথাও যাওয়ার কালে এ বাক্যের ব্যবহার মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এর অর্থ, ‘আল্লাহ যাত্রাকারীকে সকল বিপদাপদ হতে রক্ষা করুন, নিরাপদে রাখুন ইত্যাদি।’ আবার ফার্সি ভাষায় এইরূপও প্রচলিত আছে: ‘ব-সালামত মি রভী ও বায মি আয়ি।’ অর্থাৎ, ‘তুমি নিরাপদে গমন কর এবং নিরাপদে প্রত্যাবর্তন কর।’
আবার নানা স্তরে, নানা ক্ষেত্রে বিদায় কালে আল্লাহ হাফেজ বা এ বাক্যের সমর্থক বিভিন্ন বাক্য মূলত আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা ও নিরাপদে চলাফেরার লক্ষ্যে ব্যবহারের রীতি-প্রথা ইসলামেরই ঐতিহ্য, বৈশিষ্ট্য। এ কোরআনি বাক্যের মধ্যে আল্লাহর অস্তিত্বকে জানা-অজানাভাবে স্বীকার করে নেয়া হয়।
‘আল্লাহ হাফেজ’ বলার একটা পটভূমিকা রয়েছে। কোরআন-এর সূরা ইউসূফ-এর ৬৪ নং আয়াত: ‘ফাল্লাহু খাইরুন হাজেযাওঁ, ওয়া হুওয়া আরহামুর রাহেমীন।’ অর্থাৎ ‘অতএব, আল্লাহ উত্তম হেফাজতকারী এবং তিনিই সর্বাধিক দয়ালু।’
উক্ত সূরায় হজরত ইউসূফ (আ.)-এর ঘটনা সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। এক পর্যায়ে হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর নিকট তাঁর পুত্রগণ এসে অনুরোধ জানান, তাদের ছোট ভাই বিন ইয়ামিনকে তাদের সঙ্গে দিতে, তারা তাকে মিসরে নিয়ে যাবেন। হজরত ইয়াকুব (আ.) প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও পরে অনুমতি প্রদান করেন এবং তাদের বিদায় দান কালে উপরোক্ত দোয়া পাঠ করেন।
এ সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসীরে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। এখানে আমাদের উদ্দেশ্য কোরআনে এ দোয়ার ব্যবহার দেখানো। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর দোয়াটি মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এ দোয়ার নানা বৈশিষ্ট্যের কথা উলামায়ে কেরামের রচনাবলীতে দেখা যায়।
‘আল্লাহ হাফেজ’ বা ‘খোদা হাফেজ’ মুসলমানদের মধ্যে এটি নাম হিসেবেও ব্যবহার করতে দেখা যায়। এর উদ্দেশ্য, এ নামের বরকত হাসিল করা। মুসলমানদের বিশ্বাস, কোরআনের এ আয়াত দোয়া হিসেবে খাটি নিয়তে পাঠ করা অথবা পবিত্রতার সাথে ব্যবহার করা, রক্ষাকবচ স্বরূপ।
বুজুর্গাণে দ্বীনের মতে, আয়াতটি দোয়া হিসেবে ব্যবহার করলে নিরাপত্তাহীনতায় বিশেষ উপকার হয়। অনেকে ‘তাবীজ’ হিসেবে আয়াতটি ব্যবহার করে থাকেন। দোয়া হিসেবে এটি পাঠ করার নানা গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্যের কথা মাশায়েখ উলামার জবানে, কলমে দেখা যায়।
পরম দয়ালু আল্লাহর নিকট হেফাজত, নিরাপত্তা প্রার্থনা করা হলে তাতে আল্লাহর সাহায্য আশা করা যায়। কাজেই, শুধু বিদায়কালে নয়, সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।