সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
তৌ হি দ হো সে ন
আবিদ শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে আম গাছের ছায়ায় বসে আছে। গাছে থোকা-থোকা কাঁচা-পাকা আম ঝুলে আছে। আবিদের নিজ হাতে রোপণ করা এই ছোট্ট আম গাছটিতে এবার অনেক আম ধরেছে। আবিদের পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে রোদেল বাবার কুলে খবরের কাগজ ছুড়ে দিয়ে বলল, ‘এই নাও তোমার পত্রিকা।’ বলেই সে আবার গুটিগুটি পায়ে দৌড়ে বাসায় চলে গেল। আবিদ পত্রিকায় চোখ বুলাতেই প্রথমেই যে হেড লাইনটি তার চোখে পড়লো তা দেখেই সে স্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেল। “আজ বাবা দিবস।” আবিদ জন্মের পরে বাংলা বর্ণমালার যে বর্ণটা সে উচ্চারণ করেছিল তা হলো ‘বা’। ‘বা’ থেকে বাবা। আবিদ জানতে পারে তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার জন্মদাতা মা চলে যায় না ফেরার দেশে। এর পর থেকে বাবাই তার বাবা। বাবাই তার মা। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে আবিদের পরনের কাপড় ধোয়া, সবই তিনি করেছেন নিজ হাতে। আত্মীয়স্বজন তার বাবাকে বিয়ে করার কথা বললে তিনি বলতেন, ‘আমার ভয় হয়, আবার বিয়ে করলে আমার আবিদের অযতœ হবে। অমঙ্গল হবে।’ আবিদের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি সারাটা জীবন একাই পার করে দিয়েছেন হাসিমুখে। আবিদের আজো মনে পড়ে, প্রথম দিন যখন আবিদকে তার বাবা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিল, সেদিন সে ভয়ে বাবা হাত-ই ছাড়েনি। বাবা তাকে সাহস দিয়ে বলেছিল, ‘আবিদ ভয় পেও না। ওনারাই হবে তোমার স্কুল সময়ের অভিভাবক। তার বাবা তাকে হাত ধরে ধরে বর্ণ লিখতে শিখাতো। আবিদ যখন পঞ্চম শ্রেণির স্কলারশিপ পরীক্ষা দেয় তখন ছিল শীতকাল। তার বাবা ফজরের নামাজ পড়েই রান্না শুরু করেছিল। সাইকেলের পেছনে বসিয়ে তাকে গঞ্জে নিয়েছিল। সেদিন কুঁয়াশায় তার বাবার মাথার চুল একদম ভিজে গিয়েছিল। আবিদ যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে গঞ্জের স্কুলে ভর্তি হয় তারপর থেকে প্রায় দুই বছর প্রতিদিন তার বাবা সাইকেলের পেছনে বসিয়ে তাকে একবার স্কুলে নিয়ে যেত। এতটুকু ছেলে সাইকেলে করে একা একা স্কুলে গিয়ে আবার কোন দুর্ঘটনা ঘটায় বলে তিনি আবিদকে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে দিতেন না। ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর দিন আবিদের বাবা সারা দিন না খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ভবন ও ভবনে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। ভর্তি করানোর পরও তার বাবা এই নিয়ে চিন্তা করতেন যে তার ছেলে হলে কী খাবে। শোবার জন্য পর্যাপ্ত আরামদায়ক জায়গা পাবে কি না। পড়াশোনা শেষ হলে তার বাবা নিজ হাতে আবিদের জন্য চাকরির আবেদন লিখে বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিতেন। অর্থাৎ সারাটি জীবন আবিদের বাবা ছায়ার মতো সঙ্গী হয়ে ছিলেন তার সাথে। আবিদ যে বছর বিসিএস দিয়ে চাকরিতে যোগ দেয় সে বছরই একদিন তার বাবা তাকে চিঠি লিখল, ‘বাবা আবিদ, ইদানীং আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তুমি একবার বাড়ি এসো। আবিদ বাড়ি ফিরে দেখে তার বাবা অসহায়ের মতো শুয়ে আছে। বৃষ্টির পানি টিনের চালের ফাঁক দিয়ে বাবার বিছানা ভিজিয়ে দিয়েছে। আবিদ তার বাবাকে ভাত খাইয়ে দিতো। আবিদের কাছে তার বাবাকে তখন চার বছরের শিশুর মতো মনে হতো। আবিদের বাবা একদিন বলল, ‘আবিদ আমার শরীরের অবস্থা যা তাতে কখন কী হয় জানি না। আমার কিছু হলে তুমি শরীরের প্রতি যতœ নিবে না। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে না। তাই আমি তোমাকে বিয়ে করাতে চাই। আবিদ উত্তরে বলেছিল, ‘হবে বাবা। আগে তুমি সুস্থ হয়ে নাও।’ কিন্তু আবিদের বাবার আর বউ দেখা হয়নি। দিন পনের পর তিনিও চলে গেলেন আবিদকে এতিম করে। আজ আবিদ তার পৈতৃক ভিটাতে তিনতলা বাসা বানিয়েছে। গরমে তার একমাত্র ছেলের কষ্ট হবে বলে রুমে এসি বসিয়েছে। শান বাঁধানো ঘাট করেছে বাড়ির সামনের পুকুরটাতে। বাড়ির উত্তর দিকটায় করেছে নানান রংয়ের ফুলের বাগান যে সকল ফুল তার বাবা দারুণ পছন্দ করতো। এর কিছুই তার হতভাগা বাবা দেখে যেতে পারেননি। আবিদ তার মা, বৃদ্ধ বাবাকে হারিয়ে বিনিময়ে পেয়েছে রোদেলের মতো ছোট্ট বাবা। এসব ভাবতে ভাবতে মনের অজান্তেই বেরিয়ে এলো একটি দীর্ঘশ্বাস। সে বিরবির করে বলতে থাকে, ‘জগতের সকল বাবা-ই সুখী হোক; বাবা দিবসে এই কামনাই করি। আমার বাবার আত্মাকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।