Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেন্দ্রীয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

বাইরে থাকল ৫ বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয়। এই ৫ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক কাউন্সিলে আগের নিয়মে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই ঘোষণার পরের দিন গতকাল বুধবার মঞ্জুরি কমিশনও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে সরে এসে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এদিন ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে সভা শেষে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, এসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে চারটি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গুচ্ছগুলো হচ্ছে- কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও সাধারণ। সাধারণ গুচ্ছে বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষায় তিনটি পরীক্ষা হবে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় কৃষিতে সাতটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ১১টি, প্রকৌশলে তিনটি এবং সাধারণ নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ইউজিসি চেয়ারম্যান জানান, অনলাইনে আবেদন করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিবেন শিক্ষার্থীরা। আসন পড়বে নিজের এলাকার কাছে। তিনি বলেন, আমাদের এই পাঁচটা (বুয়েট, ঢাবি, জাবি, রাবি, চবি) ক্যাম্পাস ছাড়া লজিস্টিক্যালি পরীক্ষা নেওয়া ডিফিকাল্ট। আমাদের সিট বণ্টন প্রভৃতি মিলিয়ে আমাদের অসুবিধা হতে পারে। সে কারণে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে গিয়েছি। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় আপত্তি জানালেও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কেউ চাইলে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় আসতে পারে বলে জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।
তিনি জানান, মার্চের দুই সপ্তাহের মধ্যে ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বে কমিটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে বসে ভর্তি পরীক্ষার মডালিটিজ, কোথায়-কীভাবে পরীক্ষা হবে, পরীক্ষার প্রশ্ন ও মূল্যায়ন প্রভৃতি বিষয় ঠিক করবে। একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে হবে একেকটি গুচ্ছের পরীক্ষা। কোন গ্রুপের লিড বিশ্ববিদ্যালয় কোনটা হবে, সেটি পরে ঠিক হবে।
কোনো শিক্ষার্থী একাধিক গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষায় বসতে চাইলে সেটা কী প্রক্রিয়ায় হবে, সে বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মীজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী বিবেচনায় সে প্রক্রিয়া থাকবে। একই বিভাগের শিক্ষার্থী অন্য বিভাগে যাওয়ার সুযোগও পাবে। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ও মূল্যায়ন সহজ। তবে আজকের বৈঠকে অধিকাংশ ভিসি সংক্ষিপ্ত উত্তরের প্রশ্নের পক্ষে মত দিয়েছেন। তারপরও সেটা টেকনিক্যাল কমিটি দেখবে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম জানান, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসছে, কেবল সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র পড়বে। ফলাফল ও ভর্তি প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমরা রেজাল্ট দিয়ে দিব। আর প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী, ভর্তি হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করবে শিক্ষার্থীরা। দিল আফরোজা বলেন, প্রতিটি গুচ্ছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তে এসএসসি ও এইচএসসির ফলের যে সর্বনিম্ন শর্ত, সেটাকে এখানে সর্বনিম্ন পয়েন্ট হিসাবে বিবেচনায় নেওয়া হবে। গুচ্ছের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষাকেও শিডিউলের মধ্যে বিবেচনায় আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের মাধ্যমে বলা হবে মেডিকেল ও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে আগে পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল প্রকাশ করে দেয়। আমরা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করতে চাই। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার পরে নেয়, আমরা সেটা চাইব। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টিতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে। এগুলোতে আসন আছে প্রায় ৬০ হাজার। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে প্রথমে গুচ্ছ ভিত্তিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউজিসি। কিন্তু হঠাৎ কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। যেখানে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে আলাদা তিনটি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কথা ছিল। কিন্তু পরে এটি নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়। অনেকে বলে আসছিলেন, গুচ্ছ ভিত্তি ভালো পদ্ধতি। কারণ, এটি একটি প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি। কারণ, মেডিকেল কলেজগুলোয় এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। এমনকি গত বছর সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এমন অবস্থায় আজকের সভায় আবারও গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য তিনটি পরীক্ষা (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখা) হবে। আর অন্যান্য গুচ্ছে সাধারণত একটি করে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এ ক্ষেত্রে যেসব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের বাইরের বিষয়ও পড়ানো হয় সেগুলোতে একাধিক পরীক্ষাও হতে পারে। তবে সেটাও হবে একই দিনে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই পরীক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী শাখা পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ বিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থী চাইলে মানবিকের কোনো বিষয়েও ভর্তির সুযোগ পাবেন। সে ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে এ ধরনের কোনো একটি ব্যবস্থা রাখা হবে। আগামী মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এই ভর্তি পরীক্ষার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ববিদ্যালয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ