নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন রেকর্ড রান তুলে জয়ের সুবাতাসই পাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের রানের পাহাড়ে চাপা পড়েছে সফরকারীরা। দিন শেষে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ৫৬০ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। দেশের মাটিতে টেস্টে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৫৫৬ রান। জবাবে জিম্বাবুয়ে শেষ বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে মাত্র ৯ রান তুলতেই হারায় দুই ব্যাটসম্যানকে। নাঈমের জোড়া ধাক্কায় সফরকারীরা ২৮৬ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শেষ করেছে। তাই বলা যায় ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছে জিম্বাবুয়ে। আর সব মিলিয়ে বাংলাদেশ তৈরি করে ফেলেছে জয়ের পথ। টেস্টে কাল দারুণ একটি দিন পাড় করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে স্বাগতিক সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল যা তার সবটাই প্রায় পূর্ণ করেছেন মুশফিকুর রহিম-মুমিনুল হকরা। এই দু’জনের ব্যাট থেকে এসেছে বড় ইনিংস। সেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। আর ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান মুফকিুর রহিম। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর এটাই মুমিনুলের প্রথম সেঞ্চুরি। আর ক্যারিয়ারের নবম। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৩২ রান। অন্যদিকে রেকর্ডময় ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরিতে মুশফিক নিজেকে তুলে নিলেন নতুন উচ্চতায়। তিনি ২০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড তার আগেই ছিল। এবার রেকর্ডটি করলেন আরো সমৃদ্ধ। তামিমকে ছাড়িয়ে দেশের পক্ষে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক এখন মুশফিক। তার ক্যারিয়ারে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির পাশাপাশি দল গড়ল রেকর্ড রানের কীর্তি।
ম্যাচের দ্বিতীয় দিন রোববার মুমিনুল ও মুশফিক জুটি যথেষ্ট ভুগিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। কালও এই দুজনকে থামানোর পথ পায়নি সফরকারীরা। দু’জনের ব্যাট থেকেই রানের বন্যা ছুটেছে। দিনের প্রথম সেশনেই ২৮ ওভারে আসে ১১১ রান! মুমিনুল শতকে পৌঁছেন ১৫৬ বলে। ছুঁয়ে ফেলেন বাংলাদেশের হয়ে তামিমের আগের নয় সেঞ্চুরির রেকর্ড। মুশফিকুর রহিম লাঞ্চে গিয়েছিলেন ৯৯ রানে। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই পা রাখেন শতকে। ১৮০ বল খেলে ১৮ চারের মারে করেন সেঞ্চুরি। এসময় ব্যক্তিগত মাইলফলকের পাশাপাশি ধরা দেয় জুটির কীর্তিও। তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি জুটিতে দু’জনে গড়েন বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। মুমিনুলের বিদায়ে দু’জনের ২২২ রানের জুটি ভাঙে। জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি স্পিনার আইন¯েø এনডিলোভুর দারুণ ফিরতি ক্যাচে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত তিনি ২৩৪ বলে করেন ১৩২ রান। পরের উইকেটে মিঠুন পারেননি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে। তবে লিটন দাস কাজের কাজটি ঠিকই করেছেন। ঠান্ডা মাথার তিনি সঙ্গ দেন মুশফিককে। এ দুই জনের চমৎকার ব্যাটিংয়ে গড়ে ওঠে আরেকটি শতরানের জুটি। তবে হাফসেঞ্চুরি করেই ফিরে যান লিটন। তিনি আউট হন জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক রেজিস চাকাভার দারুণ ক্যাচে। ইনিংসে এটি ছিল জিম্বাবুয়েন কিপারের পঞ্চম ক্যাচ। লিটন আউট হওয়ার পর তাইজুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান মুশফিকুর। শেষ পর্যন্ত ৩১৫ বল খেলে স্পর্শ করেন মাইলফলক। ডাবল সেঞ্চুরির পর তা উদযাপনটাও করলেন অন্যরকম! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের টেস্টেই বাংলাদেশের রেকর্ড ২১৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। কিন্তু এবার নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ মেলেনি। তার আগেই ইনিংস ঘোষণা করে মুশফিকের দল।
শেষ বিকেলে স্বাগতিকরা যে লক্ষ্য নিয়ে বোলিংয়ে নামে তা পূরণ হয় প্রথম ওভারেই। নাঈম হাসানের দারুণ এক ডেলিভারিতে দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হন জিম্বাবুয়ের ওপেনার প্রিন্স মাসভাউরে। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নাঈমের দারুণ ডেলিভারিতে পরের বলেই লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ডোনাল্ড টিরিপানো। শূণ্য রানে দুই উইকেট হারিয়ে দিশেহারা সফরকারী দল। নাঈমের সামনে হ্যাটট্রিকের হাতছানি। তবে অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর সামলান হ্যাটট্রিক বলটি। কেভিন কাসুজাকে সঙ্গে নিয়ে পার করেন তৃতীয় দিন।
জিম্বাবুয়ের সামনে এখন ম্যাচ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ আজ কিভাবে মোকাবেলা করে তারা সেটাই এখন দেখার বিষয়। বৃষ্টি না হলে ম্যাচ বাঁচানো তাদের জন্য হবে প্রায় অসম্ভব।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, একমাত্র টেস্ট ৩য় দিন
টস : জিম্বাবুয়ে (ব্যাটিং), মিরপুর
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ১০৬.৩ ওভারে ২৬৫।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস (আগের দিন ৭১ ওভারে ২৪০/৩) তামিম ৪১, শান্ত ৭১, মুমিনুল ৭৯*, মুশফিক ৩২*; তিরিপানো ১/৪০, নিয়াউচি ১/৪১
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
মুমিনুল ক এন্ড ব এনলভু ১৩২ ২৩৪ ১৪ ০
মুশফিক অপরাজিত ২০৩ ৩১৮ ২৮ ০
মিঠুন ক চাকাভা ব এনলভু ১৭ ২৩ ৩ ০
লিটন ক চাকাভা ব সিকান্দার ৫৩ ৯৫ ৫ ০
তাইজুল অপরাজিত ১৪ ১৯ ১ ০
অতিরিক্ত (বা ৮, লেবা ৩, নো ৫, ও ৫) ২১
মোট (৬ উইকেট, ১৫৪ ওভারে) ৫৬০ ডিক্লে.
উইকেট পতন : ১-১৮ (সাইফ), ২-৯৬ (তামিম), ৩-১৭২ (শান্ত), ৪-৩৯৪ (মুমিনুল), ৫-৪২১ (মিঠুন), ৬-৫৩২ (লিটন)।
বোলিং : তিরিপানো ৩০-৬-৯৬-১, নিয়াউচি ২৭-৩-৮৭-১, সিকান্দার ৩০-২-১১১-১, তিশুমা ২৫-২-৮৫-১, এনলভু ৪২-৪-১৭০-২।
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
মাসভাউরি বোল্ড নাঈম ০ ২ ০ ০
কাসুজা ব্যাটিং ৮ ১৮ ০ ০
তিরিপানো ক লিটন ব নাঈম ০ ১ ০ ০
টেলর ব্যাটিং ১ ৯ ০ ০
অতিরিক্ত (নেই) ০
মোট (২ উইকেট, ৫ ওভারে) ৯
উইকেট পতন : ১-০ (মাসভাউরি), ২-০ (তিরিপানো)।
বোলিং : নাঈম ৩-১-৪-২, তাইজুল ২-০-৫-০।
*তৃতীয় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।