বাংলাদেশে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে শিশুর সঙ্গে সহিংস আচরণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এক থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশই তাদের লালন-পালনকারী বা বাবা-মার সহিংস আচরণের শিকার হচ্ছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে ‘মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০১৯’ এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফ যৌথভাবে এ জরিপ পরিচালনা করে। ৬৪টি জেলার ৬১ হাজার ২৪১টি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর এসব তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখার জন্য আরও দ্রুত অগ্রগতি প্রয়োজন। শিক্ষা ও খাবার পানির গুণগতমান, শিশু বিয়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মতো বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে বিস্তৃত সুরক্ষাম‚লক বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। অন্যদিকে শিশুদের প্রতি সহিংস শাসন বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। পনের বছরের নিচে প্রতি ১০ জনে ৯ জন শিশু তাদের অভিভাবক বা সেবা প্রদানকারীদের মাধ্যমে কোনো না কোনোভাবে সহিংস শাসনের শিকার হচ্ছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে শিশু অপুষ্টির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কিন্তু বেড়েছে শিশুদের প্রতি সহিংস শাসন। ৩৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে শৈশবকালীন শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তুলনাম‚লক কম। এ সংখ্যা গড়ে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১২-১৩ সালে যা ছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময়ে স্কুলে উপস্থিতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও এখনও ১৩ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ছয় দশমিক আট শতাংশ শিশু শ্রমের সঙ্গে জড়িত। স্কুলে যাওয়া শিশুদের তুলনায় এ হার বেশি। শিক্ষা শেষ না করে ঝড়ে পড়ার হারে প্রতি পাঁচজনের একজনই ছেলে। একইসঙ্গে গ্রামে শিশুদের বিয়ে এখনো ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য। দারিদ্র্য নিরসনে অগ্রগতি হলেও শিশুদের পুষ্টির হার ভালো নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ শিশু একবার হলেও মায়ের দুধ পান করেছে। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় এমন শিশুর সংখ্যা ৪৬ দশমিক ছয় শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিবিএস’র অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম ও ইউনিসেফের অফিসার ইনচার্জ অ্যালেন বালাডিন ডমসন।