পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণাঞ্চলকে রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের বাস্তবায়ন এগুচ্ছে খুব ধীরলয়ে। ফলে রেললাইনবিহীন দক্ষিণাঞ্চলে ট্রেন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছার প্রতিফলন কবে বাস্তব রূপ লাভ করবে তা নিয়ে এখনো জনমনে সংশয় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ জোরালো করার তাগিদ স্থানীয়দের।
আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ফরিদপুরের ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন চালু করার লক্ষ্য থাকলেও তা ২০২৫ সালের মধ্যেও সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা । এমনকি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটির জন্য এখনো সংগ্রহ হয়নি কোন দাতাও। তবে চীনসহ কয়েকটি দাতা দেশ ও প্রতিষ্ঠানের এক্ষেত্রে আগ্রহ রয়েছে বলে জানা গেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ছাড়াও পিপিপি পদ্ধতিতে বিনিয়োগেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ ব্যক্ত করেছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনেক আগে থেকেই সরকার প্রধান ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্ট মহলের পদক্ষেপ এখনো খুব একটা জোরালো নয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, প্রকল্পটির বাস্তব কাজ শুরুর আগে এলাইনমেন্ট পর্যায়ে কিছুটা বিলম্ব ঘটলেও তা বাস্তবায়নে সমস্যা হবেনা। বৃটিশ যুগ থেকে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইতে প্রশ্ন ছিল, ‘রেল লাইন নেই কোন জেলায়’। উত্তর ছিল ‘বরিশাল জেলায়’ ! যদিও বৃটিশ যুগেই ফরিদপুর-বরিশাল রেল লাইন স্থাপনের লক্ষ্যে ১৮শ’ শতাব্দীর শেষভাগে জরিপ কার্যক্রম শুরু করে বৃটিশ-ভারত সরকার। প্রায় ৫০ বছর পরে জরিপ প্রতিবেদন পেশ করা হলেও ‘নদী-নালার দেশ দক্ষিণাঞ্চলে রেল লাইনে বিপুল সংখ্যক সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে’ বিধায় প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে দেশ বিভাগের পরে পুরনো জরিপের আলোকে পাকিস্তান সরকার ফরিদপুর-বরিশাল রেল যোগাযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ভ‚মি অধিগ্রহণও সম্পন্ন করে। কিন্তু এর পরে সে উদোগেও আর খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।
দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন পানি সম্পদমন্ত্রী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুর-এর উদ্যোগে ফরিদপুর প্রান্ত থেকে রেল লাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে ফরিদপুর থেকে তালমা পর্যন্ত লাইন নির্মাণ ও রেল যোগাযোগ শুরু হয়। ১৯৮২ সালে লাইন স্থাপন ও স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন করে পুকরিয়া পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার রেল যোগাযোগ চালু করা হয়। লাইন নির্মাণের লক্ষ্যে ভাংগা পর্যন্ত মাটির কাজও সম্পন্ন হয় এর আগেই। কিন্তু এরশাদ সরকার ক্ষমতা দখলের পরে ১৯৮৩ সালে ফরিদপুর-বরিশাল রেল লাইন প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অধিগ্রহণকৃত ভ‚মি অবমূক্ত করারও নির্দেশ দেয়। ফলে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকার বিষয়টি স্থায়ী রূপ লাভ করে।
কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলে রেল যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করায় ফরিদপুর থেকে পুকুরিয়া হয়ে ভাংগা পর্যন্ত পুনরায় লাইন স্থাপন এবং ভাংগাতে টার্মিনাল ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ২৬ জানুয়ারী ঐ লাইনটি উদ্বোধনও করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৮-এর অক্টোবরে ভাংগা-বরিশাল-পায়রা বন্দর-কুয়াকাটা রেল লাইন নির্মাণে বিস্তারিত সমীক্ষা ও নকশা প্রনয়ণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে আগামী মার্চের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তাবিত এ রেল লাইন, স্টেশন ও জংশন স্থাপনের সমীক্ষাসহ বিস্তারিত নকশা জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পরমর্শক প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি একটি খসড়া এলাইনমেন্ট রেলপথ বিভাগে জমা দেয়ার পরে তা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রস্তাবিত ঐ রেলপথের বেশ কিছু বাঁক সোজা করে রেলের গতি বৃদ্ধিসহ অপ্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ পরিহার করে তা অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত এ রেলপথের দৈর্ঘ্যও কিছুটা হ্রাস পাবার সম্ভবনা রয়েছে। কমবে ভ‚মির অপব্যবহারও।
সরকারের এ সিদ্ধান্তনুযায়ী পরমর্শক প্রতিষ্ঠানটি ঐ রেলপথের কয়েকটি স্থানে পুনরায় জরিপ পরিচালনা করে নতুন এলাইনমেন্ট তৈরি করবে বলে জানা গেছে। তবে কতদিনে এ কাজটি শেষ হবে তা বলতে পারেনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এমনকি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের পরিপূর্ণ নকশা দাখিল করা নিয়েও সংশয় ব্যক্ত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা।
তবে সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা দাখিল সম্ভব হতে পারে বলে রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র আশা করছে। এরপরে ভূমি অধিগ্রহন সম্পন্ন করতেও ২০২১ সাল পেরিয়ে ২০২২-এর প্রথমার্ধ লেগে যেতে পারে। অপরদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পরমর্শক নিয়োগসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে ২০২২-এর জুন পেরিয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও তা বাস্তবায়নে নূন্যতম ৫ বছর প্রয়োজন হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে রেলপথ বিভাগ থেকে কেউ কোন মন্তব্য না করলেও ২০২৭-এর জুলাই-এর আগে ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা বন্দর-কুয়াকাটা রেলপথ চালুর খুব একটা সম্ভবনা নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল। তবে ইচ্ছে করলে ভাংগা-বরিশাল সেকসনের ৯৫ কিলোমিটার রেলপথ ৩ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করে রেল যোগাযোগ চালু করা সম্ভব বলে মনে করছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞরা।
পরমর্শক প্রতিষ্ঠান ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রস্তাবিত সিঙ্গেল লেন ব্রডগেজ রেলপথে মোট ১১টি স্টেশনের প্রস্তাব করছে বলে জানা গেছে। এ রেলপথের জংশন থাকছে ফরিদপুরের ভাংগাতেই। যেখান থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রেলপথ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। ভাংগা থেকে একটি লাইন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় এবং অপর একটি লাইন ভাটিয়াপাড়া-কালনা-নড়াইল-যশোর হয়ে খুলনা ও বেনাপোল লাইনে সংযুক্ত হবে। প্রস্তাবিত ফরিদপুর-বরিশাল রেলপথে ভাংগা’র পরে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমান বন্দর,বরিশাল মহানগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী, পয়রা বিমান বন্দর ও পায়রা বন্দর ছাড়াও কুয়াকাটায়ও স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ঐ রেলপথ নির্মাণে একশ মিটার প্রশস্ত ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।