চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মসজিদের ভেতরে ইদানিং লেখা থাকে, ‘নামাজের সময় মোবাইল বন্ধ রাখুন।’ আবার জামাতের জন্য কাতার সোজা করতে বলার সময় মাইকে ইমাম সাহেব বলেন, ‘যাদের কাছে মোবাইল আছে, দয়া করে মোবাইল বন্ধ করি।’
সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, মোবাইল বন্ধ করা প্রয়োজন শুধু নামাজের জন্য। জামাতের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদের ভেতর মোবাইল বেজে উঠলে সমস্যা নেই। অথচ হাদিস, ফিকাহ, যুক্তি ও সামাজিক প্রথার দাবি শুধু নামাজের সময় নয় বরং মসজিদের ভেতর যে কোনো সময় মোবাইল বেজে উঠা আপত্তিকর ও ক্ষতিকর।
সাধারণ রীতি অনুযায়ী, আমাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি অনেক অফিসের কর্মচারী-কর্মকর্তারা বসের কামরায় প্রবেশের পূর্বে মোবাইলের আওয়াজ বন্ধ করে নেন। অফিসের পরিবেশটাই এমন যে, বসের সামনে অধীনস্থের মোবাইল বেজে উঠা শিষ্ঠাচার ও ভদ্রতার লংঘন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকের কামরায় ছাত্র-ছাত্রীর মোবাইল বেজে উঠাকে শিষ্ঠাচার বিরোধী মনে করা হয়।
মহানবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীতে মসজিদগুলো অবশ্যই আল্লাহর ঘর। যে ব্যক্তি তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মসজিদে আসবে, তিনি তাকে সম্মানিত করবেন।’ –তাবরানি: ১০৩২৪
বর্ণিত হাদিস থেকে দু’টি কথা সুস্পষ্ট। এক. মসজিদ আল্লাহর ঘর। দুই. মসজিদে আসার উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। এমতাবস্থায়, আমাদের দেশ ও সমাজের প্রচলিত প্রথার বিচারে সহজেই বুঝা যায় যে, মসজিদের ভেতরে মোবাইল বেজে উঠা মসজিদের পবিত্রতা, আদব ও সম্মান নষ্ট করে।
আমাদের পকেটের চালু মোবাইল যখন তখন শব্দ করে বেজে উঠে মসজিদের ভাবগম্ভীর পরিবেশ নষ্ট করে- তাহলে চালু মোবাইল সঙ্গে রেখে মসজিদে প্রবেশ করা কতটুকু উচিৎ, তা আমাদের ভেবে দেখা দরকার। এ ছাড়াও বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ‘মসজিদের ভেতরে জোরে শব্দ করবে না।’
মোবাইল বেজে উঠার দ্বারা যেহেতু নামাজ, জিকির ও মোনাজাতরত মানুষ কষ্ট পায়- সেহেতু ফেরেশতারাও কষ্ট পায়। যখন জামাতের সময় নয়, যখন মসজিদের ভেতর কোনো মানুষ নেই তখনও মোবাইল বেজে উঠলে এ শব্দদূষণ দ্বারা ফেরেশতাদের কষ্ট হবে।
সাহাবি সায়িব ইবনে ইয়াজিদ বলেন, আমি মসজিদে দাঁড়িয়েছিলাম। এক লোক আমার দিকে কঙ্কর ছুঁড়ে মারল। আমি তাকিয়ে দেখলাম তিনি সায়্যিদুনা উমর (রা.)। তিনি আমাকে বললেন, ওই দু’ব্যক্তিকে ডেকে আনো। আমি তাদের ডেকে আনলাম, তিনি বললেন, তোমাদের পরিচয় কী? তারা বলল, আমরা তায়েফ থেকে এসেছি। তিনি বললেন, তোমরা যদি স্থানীয় হতে তবে অবশ্যই আমি তোমাদের শাস্তি দিতাম। তোমরা মসজিদে জোরে কথা বলছ? –সহিহ বোখারি: ৪৭০
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, হজরত উমর (রা.) মসজিদে দাঁড়ানো সায়িবের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তাকে শব্দ করে ডাক দেননি। বরং ক্ষুদ্র কঙ্কর ছুঁড়ে দিয়েছেন। ওই দু’ব্যক্তিকেও তিনি ডাক দেননি। বরং অন্য মানুষ পাঠিয়ে ডেকে এনেছেন। অতএব, হাদিসের আলোকে সহজেই প্রতীয়মান হচ্ছে, কাউকে কিছু বলার জন্য মসজিদের ভেতর শব্দ করে ডাক দেওয়া যাবে না। অথচ কিছু বলার জন্য ডেকে দিতেই আমাদের মোবাইলগুলো বেজে উঠে। হাদিসের শেষ বাক্য দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, মসজিদে জোরে কথা হজরত উমরের মতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তবে কি, মোবাইল বেজে উঠা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে না?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।