গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : দেশজুড়ে আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের এক মাস আজ। এখনও খোলেনি এই হত্যাকাÐের রহস্যের জট। খুনিরা চিহ্নিত-এমন দাবি করা হলেও কার নির্দেশে কেন এই হত্যাকাÐ তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশের রহস্যময় আচরণ হত্যা রহস্যকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।
ইতোমধ্যে কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের কাউকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমাÐের অনুমোতি পায়নি পুলিশ। ঈদের পর এবিষয়ে আদালতে শুনানি হতে পারে। ফলে মামলা তদন্তে এখন ‘ঈদের বিরতি’ চলছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ডিবি পুলিশের সিনিয়র সহকারি কমিশনার (এসি) মো: কামরুজ্জামান বলেন, মামলা তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। হত্যাকাÐে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। হত্যাকাÐে ব্যবহৃত অস্ত্র, মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়েছে। চারজন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমাÐের আবেদন করা হয়েছে। ঈদের ছুটির পর আদালতে এ বিষয়ে শুনানী হবে। তবে এখন পুলিশ বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান তিনি।
গত ৫ জুন সকালে শিশুপুত্রকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে নির্মম হত্যাকাÐের শিকার হন মিতু। খুনিরা কুপিয়ে ও গুলি করে এক মিনিটের কম সময়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। খুনের পর পর পুলিশ খুনের জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করে তদন্ত শুরু করে।
তবে এক পর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় খুনি চক্রের সদস্যরা সবাই পুলিশের জালে। হত্যাকাÐে ব্যবহৃত অস্ত্রও পুলিশের হাতে। এরমধ্যে হঠাৎ করে মধ্যরাতে ঢাকার বাসায় থেকে বাবুল আক্তারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। স্বরাষ্টমন্ত্রী দাবি করেন কয়েকজন কিলার ধরা পড়েছে তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে।
তবে স্ত্রী খুনের বিশ দিনের মাথায় স্বামীকে মধ্যরাতে তুলে নিয়ে ১৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। মামলার সঠিক তদন্ত নিয়েও সৃষ্টি হয় নতুন রহস্য। এরমধ্যেই পুলিশ খুনিচক্রের সদস্য ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতারের দাবি করে। পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ওয়াসিম ও আনোয়ার মিতুর হত্যা মিশনের সরাসরি অংশ নিয়েছে। ওয়াসিম মিতুকে গুলি করেছে, আর সহযোগিতা করেছে আনোয়ার।
তিনি দাবি করেন পুলিশের এক সোর্স কামরুল শিকদার ওরফে আবু মুছা এই খুনের মূলহোতা। সে টাকার বিনিময়ে খুুনিদের ভাড়া করেছে। মিতু হত্যা মিশনে সরাসরি ৭ থেকে ৮ জন অংশ নিয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে মুছার কার নির্দেশে কেন মিতুকে খুনের জন্য খুনি ভাড়া করেছে কিংবা খুনের আসল রহস্য কি সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি পুলিশ কমিশনার। তার সাফ জবাব মুছাকে ধরা গেলে সবকিছু পরিস্কার হবে। ওইদিন ওয়াসিম ও আনোয়ারকে আদালতে পাঠানো হলে তারা দুই জনেই খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তারা জানায় ওয়াসিম নয় মুছা নিজেই মিতুকে গুলি করেছে। আর নবীসহ বাকিরা তাকে কুপিয়েছে।
তারা আরও জানায় মুছা বলেছে, এই মহিলা (মিতু) জঙ্গিদের অর্থদাতা, সে পুরো পৃথিবীতে যায় তাকে খুন করতে হবে। এরপর পুলিশ হত্যাকাÐে ব্যবহৃত অস্ত্র যোগানতাদা ভোলাইয়া ও তার সহযোগী মুনিরকে অস্ত্রসহ আটক করে। পুলিশ দাবি করে খুনের জন্য মুছাকে অস্ত্র সরবরাহ করে ভোলা। খুনের পর ওই অস্ত্র মুছা আবার তাকে ফেরত দিলে সে তা মুনিরকে রাখতে দেয়। অস্ত্রসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে দশ দিনের রিমাÐে আবেদন করে পুলিশ।
এর পুলিশ হত্যা মিশনে থাকা শাহজাহান ও মূলহোতা আবু মুছার বড়ভাই সাইদুল ইসলাম সাকুকে গ্রেফতার করা কথা স্বীকার করে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য দাবি করেন হত্যাকাÐে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি মুছাকে সরবরাহ দেয় তার ভাই সাকু। তাদের দুজনকেও এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দশ দিনের রিমাÐের আবেদন করে ডিবি। আদালত ঈদের পর শুনানির দিন ধার্য করেন।
এদিকে হত্যাকাÐের মূলহোতা আবু মুছা, তার সহযোগি নবী ও রাশেদকে অনেক আগেই পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে দাবি করে তাদের পরিবার।
হত্যাকাÐের মূলহোতাকে নিয়ে পুলিশের লুকোচুরি আবার বাবুল আক্তারকে নিয়ে নানামুখি গুণঞ্জনে এই মামলা তদন্তের ফলাফল নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে মিতুর বাবা মা অভিযোগ করেছেন পুলিশ তদন্তে পেশাদারিত্বের পরিচয় না দিয়ে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
মুছার স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন
মিতু হত্যার ঘটনায় কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছাকে পুলিশ ১৩ দিন আগে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী পান্না আক্তার। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার না করায় মুছার ভাগ্যে আসলে কি ঘটেছে জানতে চেয়েছেন তার স্ত্রী পান্না। গতকাল (সোমবার) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুছা দোষ করলে অবশ্যই দোষী হবে, সাজা পাবে। তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হোক। তাকে আদালতে হাজির করা হোক। বিচারে যেটা হবে সেটা আমরা মেনে নেব। কিন্তু তাকে মেরে ফেলার কথা আসছে কেন? মুছার ভাগ্যে কি ঘটেছে আমাদের জানান। আমি স্ত্রী হিসেবে আমার স্বামীকে জীবিত ফেরত চাই। আমার ধারণা সে বেঁচে আছে। অনেকে বলছে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলনে মুছাকে গ্রেফতারের বর্ণনাও দেন পান্না আক্তার।
তিনি জানান, ২২ জুলাই সকাল ৭টার দিকে মুছা, পান্না ও তাদের দুই ছেলে এবং মুছার বড় ভাই সাইদুল ইসলাম সিকদার নগরীতে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলেন। সকাল ৯টার দিকে একদল পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে হাজির হয়। পুলিশ সবাইকে বন্দর এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। সকাল ১১টার দিকে মুছা ও তার ভাইকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়। আটক অভিযানে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম এবং পুলিশ পরিদর্শক নেজাম উদ্দিনকে (বতর্মানে ইমিগ্রেশনে কর্মরত) পান্না আক্তার চিনতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আটকের ১০ দিন পর গত শুক্রবার সাইদুল ইসলাম সিকদারকে পুলিশ রাঙ্গুনিয়া থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। কিন্তু গত ১৩ দিন ধরে মুছার কোন খোঁজ পাচ্ছি না। আমি রাঙ্গুনিয়া থানায় জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার জিডি গ্রহণ করেনি। মুছার পরিবারের সদস্যদের পুলিশ কয়েকদিন নজরবন্দি করে রেখেছিল বলেও দাবি পান্না আক্তারের।
মুছা ২০০৩ সাল থেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পান্না আক্তার। তবে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে মুছা কাজ করত কিনা সেটা জানা নেই বলে জানিয়েছেন পান্না। তিনি বলেন, আমি বাবুল আক্তারকে চিনি না। কখনও তার নাম শুনিনি। কখনও তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। বাবুল আক্তারের বিষয়ে কখনও আমার স্বামী আমাকে কিছু বলেনি। এখন শুনছি মুছা নাকি খুনের নির্দেশদাতা। মুছা কেন খুন করতে যাবে? তার কি স্বার্থ? মুছাকে আদালতে হাজির করা হোক। তারপর সবকিছু পরিস্কার হবে। সংবাদ সম্মেলনে মুছার দুই ছেলে শামসুদ্দোহা সিকদার সানি (১০) ও নূরুদ্দোহা সিকদার সানজু (৭) এবং শ্বশুর ফারুক সিকদার উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।