গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীতে এক ব্যবসায়ীকে থানায় তুলে এনে প্রায় সোয়া কোটি টাকার চেক সই করিয়ে নেওয়া অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মেহেদী শেখ নামের ওই ব্যবসায়ীকে গুলশানের কালা চাঁদপুরের বাসা থেকে নেওয়া হয় ধানমন্ডি থানায়। রাতভর সেখানে আটকে রাখা হয় তাকে। এমনটাই অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, মধ্যরাতে ব্যবসায়ী মেহেদী শেখের বাসায় আসেন পুলিশ। দরজা খুলতেই দরজার সামনে দাঁড়ানো পুলিশের দুই দারোগা। তাঁরা জানালেন, পাওনা ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য তাঁকে ধানমন্ডি থানায় যেতে হবে। মেহেদী শেখ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখতে চান। তা না দেখিয়ে জোর করে তাঁকে গুলশানের কালা চাঁদপুরের বাসা থেকে নেওয়া হয় ধানমন্ডি থানায়। সেখানে একটি কক্ষে রাতভর আটকে রাখা হয় মেহেদীকে। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে জানানো হয়, বাসা থেকে চেক বই এবং ট্রেড লাইসেন্সের মূল কপি আনতে হবে। আটক ব্যবসায়ীর দুই স্বজন এগুলো নিয়ে থানায় হাজির হন। একটি চেকে ৬৫ লাখ, আরেকটি চেকে ৬০ লাখ টাকা লিখে সই করতে বাধ্য করা হয় মেহেদীকে।
এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে ধানমন্ডি থানা থেকে ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশের গাড়িতে করে নেওয়া হয় পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমানের কার্যালয়ে। মেহেদী শেখের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গেই তাঁর মূল বিরোধ। উপকমিশনার সাজ্জাদ নিজের ডায়েরিতে কবে, কোন চেক ক্যাশ হবে, সেই তারিখ লিখিয়ে নেন। নিচে মেহেদীকে তারিখসহ সই করতে বলা হয়। আর চেকের পাতায় টাকার অঙ্ক লেখেন উপকমিশনারের শ্যালক মাসুদ হোসেন ওরফে শুভ্র।
গত ২২ জানুয়ারির এ ঘটনার নানা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে সাংবাদিকদের কাছে। এগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে তুলে নেওয়া, ধানমন্ডি থানায় সারা রাত রাখা এবং পরদিন মগবাজারে পুলিশের রমনা বিভাগের কার্যালয়ে নেওয়ার প্রমাণ মেলে। তা ছাড়া এ ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে মেহেদী ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি জীবনের নিরাপত্তা ও আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, এই অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
দুই পক্ষের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমানের সঙ্গে ব্যবসায়ী মেহেদীর বিরোধের সূত্রপাত টাকা লেনদেন নিয়ে। এই ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে গুঁড়া দুধসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতেন। সাজ্জাদুর রহমান তাঁকে নগদ ৫০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন, প্রতি মাসে এর বিনিময়ে আড়াই লাখ টাকা দিতে হতো। মেহেদী নগদ টাকা বুঝে নিয়ে ৫০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিলেন। প্রতি মাসে লাভের টাকা নিতেন পুলিশ কর্মকর্তার শ্যালক মাসুদ হোসেন।
ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় গত বছরের মাঝামাঝি মেহেদী লাভের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর জামানত হিসেবে দেওয়া ৫০ লাখ টাকার চেকটি ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। চেক প্রত্যাখ্যাত (ডিজঅনার) হলে মামলা করেন সাজ্জাদুর রহমানের শ্যালক মাসুদ হোসেন। সেই মামলায় জামিনে আছেন মেহেদী। এরই মধ্যে তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার দুটি চেকে সই নেওয়া হয়। এরপর সোয়া কোটি টাকার ওই চেক দুটি প্রত্যাখ্যাত হলে ৪ ফেব্রুয়ারি মেহেদীকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন সাজ্জাদুর রহমানের শ্যালক মাসুদ ও নিকটাত্মীয় হাদিউজ্জামান।
ব্যবসায়ীর সঙ্গে এমন লেনদেন বা টাকা উদ্ধারের কাজ পুলিশ কর্মকর্তা করতে পারেন কি না, জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও সাংসদ নূর মোহাম্মদ জানান, টাকাপয়সা উদ্ধারের দায়িত্ব পুলিশের নয়। তবে বিপদগ্রস্ত কেউ পুলিশের শরণাপন্ন হলে সাধারণত পুলিশ দুই পক্ষকে ডেকে সমঝোতা করে দেয়। সমস্যাটা হলো, কেউ এটা ভালো মন নিয়ে করে, কেউ করে খারাপ মন নিয়ে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে কোনো পুলিশ সদস্য যদি চাপ দেন, ভয়ভীতি দেখান, সেটা নিঃসন্দেহে অপরাধ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।