নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এর আগেও বহুবার মাড়িয়েছেন এই পথ। এই বিসিবিই আকবরদের দ্বিতীয় ঘর। মিরপুর একাডেমি ভবনে থেকেই নিজেদের তৈরি করেছেন তারা দিনের পর দিন অনুশীলন আর অক্লান্ত পরিশ্রমে। তবে গতকাল সেই একই চত্বর যেন অচেনা এক স্বপ্নপূরী। আগের রাত থেকেই লাল-সবুজ-নীল-সাদা রঙের রঙিন বাতি দিয়ে বধু সাজে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছে বিশাল বিশাল ব্যানার। যাতে লেখা ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’। আর এই ব্যানারে শোভা পাচ্ছে অধিনায়ক আকবর, শরিফুল ইসলামসহ বিশ্বজয়ী বীরদের ছবি।
পুরো স্টেডিয়াম চত্বর তখন লোকে লোকারণ্য। ‘আকবর’, ‘আকবর’ ধ্বনীতে মুখর মিরপুরের আকাশ-বাতাস। বিশ্বজয়ী বীরদের একনজর দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন ছেলে-বুড়ে, নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা সকলেই। ভক্ত-সমর্থকদের ঢল ঠেলে ধীরে ধীরে গর্বের লাল-সবুজ পতাকায় মোড়ানো বাসটি যখন স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক পেরিয়ে যেখানে নামবার কথা বিশ্বজয়ী যুবাদের, সেটিও সম্ভব হয়নি সাধারণের ভালোবাসার ভীড়ে। সংবর্ধনার শুরুটা হবার কথা ছিল লাল গালিচায়। সেটিও করা যায়নি ভালোবাসার চাপে। এই ভালোবাসায় ভর করেই তো বাংলাদেশে ক্রিকেটের আজকের এই অর্জন! বিশ্বজয়!
এই দিনটির জন্য কত প্রতীক্ষা। বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরে ফিরবে বাংলাদেশের কোনো দল, এ যেন ছিল দিবাস্বপ্ন! বিশ্বকাপ কেন, বড় কোনো কাপ জিতেই যে এতদিন ফেরা হয়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তারুণ্যের জয়গান গেয়ে আকবর আলীরা মেটালেন আক্ষেপ। যুব বিশ্বকাপ জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্বপ্নের ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। ফাইনালের পরদিন আইসিসির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে টাইগার যুবারা। এবার বিশ্বজয়ের মুকুট পরে ফিরল দেশে। সময়টা উৎসবে-আনন্দে মেতে ওঠার।
অতীতে অনেকবারই বিজয়ী ক্রীড়াবিদদের বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন বাংলাদেশ। কিন্তু গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্পূর্ণ অন্য আবহ। অন্য রকম উৎসব। এবার যে বিশ্বজয়ী ক্রীড়াবিদদের বরণ করে নিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় অন‚র্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী যুব ক্রিকেট দল ঢাকায় এসে পৌঁছে বিকেল ৫টার একটু আগে। আকবর আলী, তৌহিদ হৃদয়দের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। এ সময় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বিসিবির অন্যান্য পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩ জানুয়ারি অনেকটা নীরবেই দেশ ছেড়েছিল আকবর আলীর দল। ফেরার পালায় চিত্রটা পুরো ভিন্ন। বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে ক্রিকেটারদের নিয়ে অবতরণ করেছে এমিরেটস এয়ারয়াইন্সের ফ্লাইট। এই সময়টা, এই ফ্লাইটটাও নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ঢুকে যাবে। বরণের-উদযাপনের প্রতিটি মুহূর্ত লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। ক্রিকেটারদের সাদর অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দর থেকে মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম পর্যন্ত সাজ সাজ রব। সেই দুপুর থেকেই ফুল নিয়ে পথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে ভক্ত-সমর্থকরা, বাংলাদেশ-বাংলাদেশ স্লোগানে মুখর। অনেকেই ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা জার্সি বানিয়ে গায়ে জড়িয়ে এসেছিলেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে।
আকবরদের সেখানে বরণ করে নেওয়ার পর বিমানবন্দর এলাকায় আর রাখা হয়নি কোন আয়োজন। বিমানবন্দরে অন্যান্য যাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই সেখানে তেমন কোন অনুষ্ঠান রাখেনি বিসিবি। এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। বিমানবন্দর থেকে হোম অব ক্রিকেটে যাবার জন্য ছিল বিশেষ বাসের ব্যবস্থা। লাল-সবুজে মোড়ানো বাসটিও সাজানো হয়েছে আকবর-মাহমুদুল-শরিফুলদের ছবি দিয়ে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় বিমানবন্দর থেকে ক্রিকেটারদের গাড়িবহর সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে এসে পৌঁছায় মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে।
একাডেমি ভবনের ঠিক সামনে বাস থেকে নেমেও মধুর বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রাকিবুল, হৃদয়, জয়দের। ভালোবাসার জোয়ার সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে নিরাপত্তা কর্মী থেকে শুরু করে বিসিবি কর্মকর্তাদেরও। বাস থেকে নেমে দীর্ঘ ভ্রমণ ধকল কাটিয়ে উঠতে ঘন্টাখানেক সময় নিয়েই আকবর আলীর দল পৌঁছে সংবর্ধনাস্থল মিরপুর স্টেডিয়ামের মূল ভেন্যুতে। যেখানে আগে থেকেউ প্রস্তুত অস্থায়ী মঞ্চ। পেছনে বিশ্বজয়ীদের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘ওয়েলকাম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন’। তার সামনেই টেবিলে রাখা দুটো বিশাল কেক। তাতে পচেফস্ট্রুমে শিরোপাহাতে উল্লাসরত যুবাদের ছবি সাঁটা। ড্রেসিংরুম থেকে মঞ্চ পর্যন্ত বিছানো হয় লাল গালিচা। এই গালিচা পেরিয়ে একে একে এসে আলোকিত করেন মঞ্চ। দু’পাশে দুটি কেক তার মাঝে ঠাঁই পেয়েছে ঝা চকচকে আরাধ্য ট্রফিটি। একটি কেক কাটেন বিশ্বজয়ী দলনেতা আকবর অপরটি বিসিবি সভাপতি। পরে একে অন্যকে কেক খাইয়ে ভাগ করে নেন বিজয় আনন্দ। এসময় একে একে দাগানো হয় ১৯টি আতশবাজি। অনূর্ধ্ব-১৯ বোঝাতেই এই সংখ্যাকে বেছে নেয়া হয়। ইতিহাসের সাক্ষী হতে এই মহেন্দ্রক্ষণে সংবাদমাধ্যমকর্মী ছাড়াও ভিআইপি গ্যালারিতে হাজির ছিলেন হাজার হাজার ভক্ত-সমর্থকও।
এরপরই একটি সংবাদ সম্মেলন করে বিসিবির আয়োজনে নৈশভোজে যোগ দেন গোটা বিশ্বজয়ী দলের সদস্যরা। রাতেই যুবারা ফিরে যান নিজ নিজ ঘরে। ঢাকার বাইরের ক্রিকেটাররা পরিবারের টানে আজ সকালে ধরবেন বাড়ির পথ। কেউ চাইলে অবশ্য রাতেও যাবার অনুমতি ছিল বিসিবির। সপ্তাহখানেকের ছুটি শেষ করে ঢাকায় ফেরার পর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গণসংবর্ধনায় যোগ দেবেন যুবারা। তবে সেই সংবর্ধনার তারিখ এখনো সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।