Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই যুগ ধরে শিকল পায়ে বন্দি জিয়া

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

পায়ে শিকল। চার পাশে ভাঙ্গা বেড়া। মেঝেতে স্যাঁতস্যাঁতে মাটি। ঘরের মধ্যে ছোট একটি চৌকি। চৌকির ওপর বসে রয়েছেন জিয়া। দেখলে মনে হবে সুস্থ, ভালো মানুষ বসে রয়েছেন। সামনে কেউ গেলে সিগারেট ও বিড়ি চায়। পেলে খুশি। মনের আনন্দে টানে।

প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন। নিজের নাম স্পষ্ট বলতে পারেন। কি করতেন সেটাও বলতে পারে। তবে অনেক কিছু এলোমেলো বলেন। ১০ গজের মধ্যে জিয়ার চলাফেরা। এই ১০ গজের মধ্যে গোসল, টয়লেট এবং খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। মূল বাড়ির মধ্যে নয়। বাড়ির পেছনে এমনি একটি ঘরের মধ্যে দুই যুগ শিকল পায়ে পার করছেন জিয়া।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের কছিমদ্দিন পাড়ার কাদের সরদারের মেঝো ছেলে জিয়া। ৫ ভাইয়ের মধ্যে মেঝ। অন্য ভাইয়েরা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। জিয়াও রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। দুই যুগ আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশপাশের মানুষের ক্ষতি করেন। বাড়ির জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেন। বাবা-মা টাকা যোগার করে পাবনায় নিয়ে যায়। ভালো হয়ে ফিরে আসেন। শুরু করেন কাজ। কিন্ত পুনরায় আবার পাগলামি। টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসার অভাবে শিকল পায়ে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। ছেলের এমন অবস্থা দেখে মা লায়লী বেগমও দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ রয়েছেন। মানুষ দেখলে তিনিও ভয় পান। কারো সামনে আসেন না। জিয়ার অন্য চার ভাই বিয়ে করে সংসার করছে। যার যার মতো আলাদা। জিয়া ছোট ভাই আকমালের কাছে থাকেন। আকমালের স্ত্রী শারমিন আক্তার বিয়ের পর থেকে তাকে দেখাশোনা করছেন। খাবার, গোসলের পানিসহ সকল প্রকার কাজ করে দেন।

জিয়ার বাল্য বন্ধু লিটন শেখ বলেন, ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছি। জিয়া খুব মেধাবী ছিল। অল্প বয়স থেকেই রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। কিন্ত হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা করানোর পর ভালো হয়েছিল। আমার বিশ্বাস সুষ্ঠু চিকিৎসা করালে জিয়া পুনরায় সুস্থ হয়ে আবারও কাজ করতে পারবে। জিয়ার বাবা কাদের সরদার বলেন, অর্থের অভাবে আমার মেঝ ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারের কাছে দাবি করে তিনি বলেন, আমার অসুস্থ ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো হয়ে যেত। আবারও কাজ কর্ম করতে পারতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্দি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ