ছেলেবেলার ঈদের স্মৃতি
এমাজউদ্দীন আহমদঅতীতের স্মৃতি সব সময় অত্যন্ত মধুর। হাজারো অনিশ্চয়তায় ভরা বর্তমানের জন্য অনেক সময় মনটা
শেখ দরবার আলম
॥ এক ॥
দৈনিক ইনকিলাবের তরফ থেকে আমাকে নজরুলের ঈদ-ভাবনা ওপর লিখতে বলা হয়েছে। এই বিষয়টিতে সরাসরি যাওয়ার আগে দু’একটা কথা উল্লেখ করতে চাই।
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়, জাতীয় কবি বলা হয়, মুসলিম জাগরণের কবি বলা হয়। এ রকম আরো অনেক কিছুই বলা হয়। এর সবগুলোই সঠিক বলা হয়। ঠিকই আছে। অন্যায়, অবিচার, অসাম্য, শোষণ, পরাধীনতা এসবের বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহীই তো ছিলেন! ১৯২১-এর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে লেখা বিদ্রোহী কবিতা সচিত্র মাসিক “মোসলেম ভারত” থেকে কপি করে নিয়ে গিয়ে সাপ্তাহিক “বিজলী”তে ছাপা হয়েছিল ১৯২২-এর ৬ জানুয়ারি। তারপর অনেক পত্রিকায় সেটা পুনর্মুদ্রিত হলো। সেই যে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলে অভিহিত করা হলো, তাঁর সেই পরিচিতি আজো বহাল আছে।
১৯২৯-এর ১৫ ডিসেম্বর কলকাতায় অ্যালবার্ট হলে বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলমান গুণীজনরা তাকে জাতীয় কবি বলে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি জাতীয় কবি। ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্টের আগে যেমন ১৯৪৭-এর ১৪ অক্টোবর পরেও তেমনি?
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে নজরুল বারংবার “আল্লাহর বান্দা” এবং “নবীর উম্মত” বলে অভিহিত করেছেন তবে তৌহীদবাদী মুসলমান হয়েও কিংবা হয়তো তৌহীদবাদী মুসলমান বলেই তিনি চাননি কেবল মাত্র মুসলমানের কবি হতে।
ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের প্রতিবেশী বড় সমাজের জন্য নজরুল কত কিছুই তো লিখলেন! বললেন, সাহিত্য ও শাস্ত্র এক জিনিস নয়। তারপরও অনেক মুসলমানই বলেন, তিনি মুসলিম জাগরণের কবি! এটাও কি সত্যি নয়?
পুরোপুরিই সত্যি! তবে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র এ রকম সব বড় বড় কবি-সাহিত্যিকরা যে রকম হিন্দু জাগরণের সাহিত্যিক, হিন্দু জাগরণের কবি নজরুল ঠিক সে রকম মুসলিম জাগরণের সাহিত্যিক এবং মুসলিম জাগরণের কবি নন। কেননা, নজরুল হিন্দু জাতিকে কিংবা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে প্রতিপক্ষ ও শত্রু হিসেবে শনাক্ত করেননি। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের প্রতিবেশী বড় সমাজের বড় বড় কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেই তাঁদের হিন্দু জাতির জাগরণ ঘটাতে মুসলিম জাতিকে প্রতিপক্ষ ও শত্রু হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন। এর অনেক প্রমাণ আছে। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে হোক, বর্ণের বা গায়ের রঙের ভিত্তিতে হোক, ভাষার ভিত্তিতে হোক কিংবা কোনো অঞ্চল বা আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে হোক, নজরুল কোথাও কখনোই কোনো জনগোষ্ঠীকে প্রতিপক্ষ ও শত্রু হিসেবে শনাক্ত করেননি। তাই নজরুল ছিলেন যথার্থই মানবতাবাদী কবি, যথার্থই বিশ্ব কবি। তাঁর সাহিত্যের আবেদন যথার্থই বিশ্বজনীন।
আজ এই ভারতীয় উপমহাদেশে এবং বিশ্বে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন কী?
অর্থনৈতিক সাম্য ও সামাজিক সাম্য এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সমাজের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত, আইনগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহাবস্থান। কবি কাজী নজরুল ইসলাম অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে, আপোষহীনভাবে এটাই চেয়েছিলেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন সাম্য ও সহাবস্থানের কবি। তাঁর সমগ্র জীবন ও সৃষ্টির দিকে চোখ রেখে আমার মনে হয়েছে যে তিনি সাম্য ও সহাবস্থানের কবি। তাঁর এই পরিচয়টাই সবার কাছে তুলে ধরলে তাঁর প্রতি সুবিচার করা হবে। এটাই চাইতেন তিনি।
॥ দুই ॥
মানুষকে তাঁর সৃজনশীল কাজ থেকে, প্রকৃত বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। সে দিকটা চিন্তা করলে বিস্মিত হতে হয়। তিনি আক্ষরিক অর্থেই এক অনন্য সাধারণ মানুষ, এক বিস্ময়কর মানুষ ছিলেন। তাঁর পিতৃপরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পত্তি ছিল না, উপযুক্ত ঘরবাড়ি ছিল না। তাঁর আত্মীয় ডাক্তার কাজী কায়েম হোসেনের মেয়ে হাসনাকে ভালোবাসতেন তিনি। একটা চালচুলোহীন পরিবারে মেয়ে দেবেন না বলে হাসনার মা নজরুলের সঙ্গে তাঁর মেয়েকে মিশতে দিতে চাননি।
কবি, নাট্যকার, স্কুল পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা প্রকাশক আলী আকবর খান কলকাতা থেকে নজরুলকে দৌলতপুরে নিয়ে এসে তাঁর মেজো ভাই ওয়াছির আলী খানের মেয়ে হেনার সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। একটা চালচুলোহীন যুবকের সঙ্গে ওয়াছির আলী খান অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মেয়ে বিয়ে দিতে চাননি।
আলী আকবর খান তাঁর বিধবা মেজো বুবু আসমাতুন্নেছাকে যে কোনোভাবে হোক রাজি করিয়েছিলেন। চৌদ্দ বছর বয়সের মেয়ে সৈঈদা খাতুনের সঙ্গে নজরুলের বিয়ে দেয়ার জন্য। অর্থাভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকা চৌদ্দ বছর বয়সের সদ্য কিশোরী সৈঈদা খাতুন তাঁর ছোট মামা আলী আকবর খানের জোরাজুরিতে এগিয়ে গিয়ে নজরুলের সঙ্গে আলাপও করেছিলেন এই সুন্দরী সদ্য কিশোরীকে স্বপ্ননারী ভেবে নিয়ে সাধ করে নার্গিস আসার খানম নামও রাখলেন কবি। কিন্তু পানির জাহাজে চাকরিরত তাঁর রোজগারে বড় ভাই চালচুলোহীন, উপযুক্ত রুজি-রোজগারহীন পাত্রের সঙ্গে যখন তার বোনের বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অমত প্রকাশ করলেন তখন তার ওপর নির্ভরশীল তার বিধবা মা আসমাতুন্নেছার মতটাও গেল বদলে। চালচুলোহীন, উপযুক্ত রুজিরোজগারহীন বিয়ের পাত্রকে নিয়ে বাড়ির চাকর-চাকরানীরাও কম ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করেনি। এর রকম একটা পরিবেশ-পরিস্থিতিতে চৌদ্দ বছর বয়সের একটা সদ্য কিশোরীর পক্ষে এ রকম উপযুক্ত ঘরবাড়িহীন, চালচুলোহীন, উপযুক্ত রুজিরোজগারহীন বিয়ের পাত্রকে উপেক্ষ-অবজ্ঞা করাটাই স্বাভাবিক ছিল। কার্যত স্বপ্ননারীর এই উপেক্ষ-অবজ্ঞার কারণেই বাইশ বছর বয়সের নজরুলের বিয়ের উদ্যোগটা ব্যর্থ হলো। স্বপ্ন নায়িকা অবজ্ঞা প্রকাশ না করলে প্রেমিক নজরুলের স্বপ্নভঙ্গ হতো না। বিধবা গিরিবালা দেবী আত্মীয় পরিবারে গলগ্রহ হয়ে ছিলেন বলেই কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিয়ে একটা সংসারের কর্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন মঞ্চ নাটক, বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানী, রেডিও, বিভিন্ন চলচ্চিত্র এ রকম বিভিন্ন জায়গা থেকে নজরুল সে সময় ভালো রোজগার করেছিলেন সেসব জায়গাও ছিল হিন্দু সমাজ প্রভাবিত।
এর অনেক আগে শিয়ারসোল রাজ হাই স্কুলে পড়ার সময়ে তিনি একটু শান্তিতে স্বস্তিতে মুসলিম ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন এক হিন্দু জমিদারের অর্থানুকূল্যে। ১৭৫৭-র ২৩ জুনের পলাশীর ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধ যুদ্ধ প্রহসনের পর সম্মানজনক জীবিকার এবং সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের সহায়ক শিক্ষার ক্ষেত্রে অধিকার-বঞ্চিত হওয়ার কারণে মুসলমান সম্পর্ক হতদরিদ্র, অশিক্ষিত, অসচেতন, অসংগঠিত ও অপরিণামদর্শী হয়ে পড়েছিলেন। শৈশবে, বাল্যে, কৈশোরে এবং প্রথম যৌবনে নজরুল এটা তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন। এই অভিজ্ঞতাই তাকে সাম্যবাদী রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলেছিল। সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিষয়ে পড়াশুনা করতেও উৎসাহিত করেছিল। বিভিন্ন ধর্মীয় সমাজের ধর্ম ও ধর্মশাস্ত্র নিয়েও তিনি পড়াশুনা করেছেন। একজন যথার্থ সাম্য ও সহাবস্থানকামী কবি হওয়ার প্রস্তুতি তিনি নিয়েছিলেন। ইসলাম বিষয়ক পড়াশুনাও তিনি খুব গভীরভাবে করেছিলেন। তিনি জানলেন যে, সাম্যবাদ এর সমাজতন্ত্রের চিন্তাও ইসলাম থেকেই এসেছে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রতি তিনি অত্যন্ত গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই তাঁর কাছে হয়েছিলেন আদর্শ মানুষ, আদর্শ মুসলমান। ইসলামের ইতিহাসের সমস্ত শ্রদ্ধেয় চরিত্র, ইসলামের ইতিহাসের সব কিছুই তাঁর কাব্যে, তাঁর সঙ্গীতে, তাঁর অভিভাষণে উঠে এলো। সমস্ত মুসলিম সভ্যতাই উঠে এলো নজরুলের কবিতায়, গানে এবং অভিভাষণে।
॥ তিন ॥
নজরুল সাহিত্যে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সভ্যতাই যখন উঠে আসতে পারলো তখন কলেমা, রোজা, নামাজ, হজ, যাকাত এ রকম সবই উঠে এলো। মোহররম, কোরবানী, ঈদুজ্জোহা, ঈদুল ফেতর, শবে বরাত ইত্যাদি কিছুই বাদ গেল না। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামী গানের একটা বইয়ের নাম জুলফিকার। হযরত আলী রাদি আল্লাহু আনহুর তরবারি। হযরত ওমর (রা.), হযরত বেলাল (রা.), ইসলামের ইতিহাসের এ রকম অনেক শ্রদ্ধেয় মানুষকে নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন।
কাব্যে আমপারার অনুবাদ করেছেন “কাব্য আমপারা”। কাব্যে হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী লিখেছেন “মরুভাস্কর”। স্পর্শকাতর মনে আবেগ, আন্তরিকতা ও অনুভূতি মিশ্রিত গদ্যে “বিশ্বনবী” ও তো আসলে তারই লেখা! তারই অসুস্থতার, দুর্দিনের এবং অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ছাপাতে নিয়ে গিয়ে আর এক কবি নিজের নামে ছেপে নিয়েছেন।
॥ চার ॥
পরিবারে এবং কর্মস্থলে নজরুল হিন্দু ধর্ম, হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্য ও হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি প্রভাবিত পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে থেকেই মুসলমানদের মধ্যে পুনর্জাগরণ ঘটানোর লক্ষ্যে, মুসলমানদের ঈমান-আকিদা যাতে ঠিক থাকে সেই লক্ষ্যে অনেক গঠনমূলক কাজ করেছিলে। যারা মুসলমান ঘরের মেয়ে বিয়ে করার সৌভাগ্য অর্জন করে মুসলমানদের মধ্যে থেকে কাজ করে জীবনযাপন করার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা কেউ কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো ইসলামের এত ব্যাপক ও বিশাল খিদমত করে যেতে পারেননি। এটা নজরুল জীবন ও সৃষ্টির অত্যন্ত বিস্ময়কর জায়গা।
মানুষ মহৎ হলে, মানুষ সিনসিয়ার হলে, মানুষ অনন্য সাধারণ হলে তার সৃষ্টিও মহৎ হবে, তাঁর সৃষ্টিও সিনসিয়ার হবে, তাঁর সৃষ্টিও অনন্য সাধারণ হবে। ইসলামকে নজরুল অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্ম হিসাবে, ম্যাকানিকাল রিচুয়ালস্ হিসাবে গ্রহণ করেননি। যদিও তার লেখায় বিশেষ করে সঙ্গীতে নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত এসবের অনেক তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর হক আদায়ের তাগিদ অনেক আছে। কিন্তু মানুষের হক আদায়ের তাগিদটা আছে বোধহয় অনেক বেশি মর্মস্পর্শী হয়ে। কেননা মানুষ অসহায়, অনেক মানুষই অসহায়। কিন্তু আল্লাহ তো আর অসহায় নন। তাঁর জীবনবোধটা ছিল এ রকম যে, মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করার চেষ্টা করলে, মানুষের অসহায়ত্ব দূর করার চেষ্টা করলে আল্লাহ খুশী হন, আল্লাহ খুশী হবেন।
॥ পাঁচ ॥
এবার নজরুলের ঈদ-ভাবনার কথায় আসি। দুটো ঈদ তো মুসলমানদের দুটো ধর্মীয় উৎসব। খুশীর ঈদ আসার কথা নজরুলের অনেক কবিতায়, নজরুলের অনেক গানে অবশ্যই আছে। কিন্তু সেসবের মধ্যে ইনসাফ কায়েম করার, অর্থনৈতিক সাম্য ও সামাজিক সাম্য কায়েম করার তাগিদটাও অপরিহার্যভাবেই আছে। পার্টি করার পার্টিজান আউটলুক নজরুলের ছিল না বলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজ আট বছর যাবৎ করেও শেষ পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে থাকার তাগিদ তিনি অনুভব করেননি। কিন্তু বাস্তবে অর্থনৈতিক সাম্য এবং সামাজিক সাম্য পুরোপুরিই কায়েম হোক এটা তিনি অত্যন্ত আন্তরিকভাবেই সব সময়ই চাইতেন। আসমান জমিন অর্থনৈতিক বৈষম্য বজায় থাকলেও যথার্থই ঈদ হয় এটা তিনি বিশ্বাস করতেন না। যে কোনো রকমের অবিচারের বিরুদ্ধে, অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন পুরোপুরিই আপোষহীন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, আল্লাহ কোনো বৈষম্য পছন্দ করেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, আল্লাহ চান যে তাঁর বান্দারা সমস্ত বৈষম্যেরই অবসান ঘটাক। নজরুল যখনই কোনো ঈদের আনন্দের কথা লিখতেন তখনই শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদের হক আদায়ের কথাও উল্লেখ করতেন। কোনো মানুষের অন্তরটা যদি বিশাল হয়, অপরিসীম প্রশস্ত হয় এবং মনটা যদি হয় অত্যন্ত স্পর্শকাতর তা হলে তিনি ইসলামের মূল শিক্ষাটা তাঁর বুকে ধারণ করতে পারেন। সেই বিশাল অন্তর, সেই অপরিসীম প্রশস্ত অন্তর, সেই অত্যন্ত স্পর্শকাতর মন কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছিল। তাই ঈদের আনন্দের কথা বলতে গিয়ে বঞ্চিত মানুষদের কথা, মেহনতি মানুষদের কথা অবশ্যম্ভাবীভাবেই তাঁর মনে পড়তো, অপরিহার্যভাবেই তাঁর মনে পড়তো। কবি কাজী নজরুল ইসলাম অনেক বড় কবি ছিলেন যথার্থই, বিশ্বকবি ছিলেন। তাঁর কাব্যে, তাঁর সাহিত্যে যথার্থই বিশ্বজনীন আবেদন আছে। কিন্তু মানুষ নজরুল ছিলেন আরো অনেক বড়, আরো অনেক মহৎ। এই মানুষ নজরুলকে তাঁর লেখার মধ্যে, তাঁর সমস্ত কথার মধ্যে, সমস্ত বক্তব্যের মধ্যেই পাই। নজরুল আমার মতো অনেক মানুষকেই ইসলামের প্রতি আপোষহীন আনুগত্য পোষণ করতে অনুপ্রাণিত করেছেন, মুসলিম উম্মার ঐক্য ও সংহতি কামনায় আপোষহীন করেছেন। আল্লাহর দান আছে। “আল্লাহর বান্দা” এবং “নবীর উম্মত” হিসাবে কবি কাজী নজরুল ইসলামেরও দান আছে। আল্লাহ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে দান করার সেই অপরিসীম মানসিক সামর্থ্য দিয়েছিলেন। সেসব আমাদের চর্চার বিষয় করলে আমরাই উন্নীত হবো। সমস্ত হীনমন্যতা কাঠিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে পারবো, আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে যথার্থই উদার এবং প্রকৃত মানুষ হতে পারবো।
লেখক : নজরুল গবেষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।