পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফ্লাইওভার চালুর পর সড়কে যানজটের তেমন হেরফের দেখছিনা। উপরে একেবারেই ফাঁকা, নীচে নিত্যজটলা, বিশৃঙ্খলা। ফ্লাইওভারের পিলারে নালা নর্দমা সঙ্কুচিত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকায় পানি জমে যাচ্ছে, ডুবে যাচ্ছে দোকানপাট-এভাবে নিজেদের দুর্ভোগের কথা জানালেন বহদ্দারহাটের ব্যবসায়ী আমীর হোসেন। ১৪ জন মানুষের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই ফ্লাইওভারের মতো চট্টগ্রাম নগরীর সবকটি ফ্লাইওভার আর ওভারপাসের চিত্র এখন এমন।
ফ্লাইওভারগুলোতে যানবাহন চলছে হাতে গোনা। আর নীচে সড়কে আগের মতোই তীব্র জট। এসব ছোট ছোট ফ্লাইওভারে উঠা-নামার পয়েন্টে নিত্যজটলা হচ্ছে। বিঘিœত হচ্ছে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল। অব্যবস্থাপনার কারণে ফ্লাইওভারে খুন, ছিনতাই এবং দুর্ঘটনাও ঘটছে। গেল বর্ষায় মুরাদপুর ফ্লাইওভারে উপরে-নিচে পানি জমে খালের রূপ ধারণের সেই ছবি দেশে-বিদেশে তোলপাড় হয়। এ ঘটনাকে চট্টগ্রামের জন্য লজ্জার বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
গেল দশ বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ওভারপাস আর চারটি ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদ, বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী, এমনকি সরকার দলীয় মন্ত্রী এমপিদের প্রবল বিরোধীতার মুখে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এসব স্থাপনাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘উন্নয়নের জঞ্জাল’। অপরিকল্পিত এবং অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার ভবিষ্যতে স্মার্ট-মেগাসিটি হিসাবে বন্দরনগরীর বিকাশকে রুদ্ধ করবে বলেও মত দেন তারা।
পরিকল্পিত নগরায়ন ও স্থাপনা নির্মাণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর। অথচ এই সংস্থার উদ্যোগেই নির্মাণ করা হয়েছে এসব স্থাপনা। ফ্লাইওভার নির্মাণের আগে কোন প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ১৯৯৫ সালে প্রণিত সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানেও এ ধরনের কোন ফ্লাইওভার নেই। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পিত নগরায়ন আর বিকাশমান নগরীর ভবিষ্যৎ বিবেচনায় না নিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। আর এজন্য তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের অদূরদর্শিতাকে দায়ী করেন।
২০১০ সালে হঠাৎ করে সিডিএ নগরীর বহদ্দারহাট জংশনে একইসাথে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করে। পরে সেখান থেকে সরে এসে বহদ্দারহাট মোড়ে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণকালে দুই দফা গার্ডার ধসের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ভয়াবহ গার্ডার ধসে ১৪ জনের প্রাণহানি হয়। পঙ্গুত্ববরণ করেন আরও অনেকে। ওই দুর্ঘটনার পর এক কিলোমিটারের বেশী দীর্ঘ এই ফ্লাইওভারের বাকি কাজ এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ১০৬ কোটি টাকার এই ফ্লাইওভারটি ২০১৩ সালে চালু হয়। চার বছর পর ফ্লাইওভারের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকামুখী র্যাম্পটি চালু হয়।
তার আগে ২০১২ সালে চালু হয় বন্দর এলাকায় নির্মিত নগরীর প্রথম ফ্লাইওভার। এক কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে এই উড়াল সড়কটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ও সিসিটি টার্মিনালের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কমুখী বন্দর টোল রোডের সাথে সংযুক্ত। ফলে আমদানি-রফতানি কন্টেইনার ওই পথে সহজে আনা নেওয়া করা যাচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দরমুখী ভারী যানবাহন চলাচলে এই ফ্লাইওভারে শতভাগ সুফল মিলছে।
সিডিএর উদ্যোগে ৬৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারটি চালু হয় ২০১৪ সালের জুনে। তার আগে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কদমতলী ফ্লাইওভারও চালু হয়। প্রায় একই সময়ে খুলে দেওয়া হয় দেওয়ানহাট ওভারপাস। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব ফ্লাইওভারে যানবাহন চলছে হাতে গোনা। ট্রাফিক সার্জেন্টরা বলছেন, ফ্লাইওভারগুলোতে ব্যক্তিগত কিছু যানবাহন এবং দূরপাল্লার কিছু গাড়ি চলছে। তবে গণপরিবহনসহ বেশিরভাগ যানবাহন চলছে আগেই মতো সড়কে।
এতে নগরীর যানজট কমেনি। ফ্লাইওভারের জন্য সড়ক সম্প্রসারণ করা হলেও তা বেদখলে চলে গেছে। কদমতলী, বহদ্দারহাট ও দেওয়ানহাটে ফ্লাইওভারের নীচের সড়কে অবৈধ পার্কিং। তাই উপরে ফাঁকা থাকলেও নীচে আগের মতেই জটলা। এসব ফ্লাইওভারের নেই পর্যাপ্ত সড়ক বাতি। ফলে রাতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে।
কদমতলী ফ্লাইওভারে বেশ কয়েকটি ছিনতাই ও খুনের ঘটনাও ঘটে। মুরাদপুর ফ্লাইওভার থেকে চুরি হয়ে যায় রেলিংয়ের লোহা, বৈদ্যুতিক তার। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এসব ফ্লাইওভারে বৃষ্টির পানি জমছে। নির্মাণকালে দফায় দফায় নকশা পরিবর্তন করায় এসব ফ্লাইওভার নির্মাণে সময় এবং অর্থ দুটোই বেশি লেগেছে। তখন নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখনও দুর্ভোগের অবসান হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকার পর সম্প্রতি ফ্লাইওভারের দেখভাল করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনকে দিয়েছে সিডিএ।
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক প্রকৌশলী এম. আলী আশরাফ ইনকিলাবকে বলেন, প্রাক সম্ভাব্যতা যাছাই ছাড়াই এসব ফ্লাইওভার করা হয়েছে। সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানেও এসব স্থাপনা নেই। খুব বেশিদিন লাগবে না এসব ফ্লাইওভার ভাঙতে হবে। মেট্রোরেল নির্মাণসহ মহানগরীর বিকাশে এসব স্থাপনা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, সিডিএ দাবি করে তারা ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে, তবে তা নামমাত্র। প্রকল্প গ্রহণের পর তড়িঘড়ি করে কথিত স্টাডির নামে অপরিকল্পিত এসব প্রকল্পকে জায়েজ করা হয়েছে। সত্যিকারের স্টাডি হলে এসব স্থাপনা হতো না। অপরিকল্পিত এসব প্রকল্পে জনগণের অর্থের অপচয় হয়েছে। নগরবাসী এর খেসরাত দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও চরম মূল্য দিতে হবে।
ফ্লাইওভার অপরিকল্পিত এবং অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেতা স্থপতি সুভাষ বড়–য়া বলেন, এসব ফ্লাইওভার সাধারণ মানুষের কোন কাজে আসছে না। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের জন্য এসব প্রকল্প উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে অথবা যারা তিনশ, পাঁচশ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করতে পারছেন তারাই ফ্লাইওভারের সুবিধা পাচ্ছেন। জনগণের অর্থে যেকোন প্রকল্প জনগণের জন্যই হওয়া উচিত। অপ্রয়োজনীয় এসব স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করে সিডিএর প্রকৌশলীদের রোষানলে পড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এখন প্রধানমন্ত্রীও জানেন চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে কী হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।