Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুলরাজ্যে কর্মব্যস্ততা

দেশের ৭০ ভাগ উৎপাদন হয় যশোরে প্লাস্টিক ফুলে ক্ষুব্ধ চাষিরা বিক্রির টার্গেট ৬০ কোটি টাকা

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

ফুলরাজ্য যশোরের গদখালীর মাঠে মাঠে এখন ফুলের চাদর বিছানা। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। মাঠ ভরে গেছে নানা রঙের ফুলে। সবুজের মাঝে সাদা রজনীগন্ধা আর লাল, হলুদ. কমলা, খয়েরী ও মেজেন্ডা রঙের জারবেরা, ঝাউ কলম ফুল,গ্লাডিওলাস, লিলিয়াম, লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, কালো গোলাপ, হলুদ গোলাপ, গাঁদা, জবা ও জুইসহ বিভিন্ন ফুলের উৎপাদন হচ্ছে। মাত্র কয়েকবছরের ব্যবধানে কৃষির এই খাতটিতে সফলতা এসেছে বিরাট।

সর্বপ্রথম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ফুল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটার পর এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ফুল উৎপাদন হচ্ছে। এটিকে সৌন্দর্যের চিহ্ন ও রঙীন ইতিহাস হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বছরের বারোমাসই কমবেশি রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ফুল যশোর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যায়। আবার বিদেশেও রফতানি হয় কমবেশি। গদখালীর ফুলচাষি বরকত উল্লাহ বললেন, এখন শুরু হয়েছে ফুলের ভরা মৌসুম। চলছে বিশাল কর্মব্যস্ততা ।

ফুলচাষিদের কথা, এবারের ভরা মৌসুমে বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখে শুধু যশোরেই ৬০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নেওয়া হয়েছে। গদখালী ফুলচাষি সমবায় সমিতির কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বললেন, ভরা মৌসুমে নানা সমস্যায়ও পড়তে হয় চাষিদের। নানামুখী আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, যশোর ছাড়াও সারাদেশের ফুলচাষিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্লাস্টিক ফুলের কারণে। প্লাস্টিক ফুলে তাজা ফুলের বাজার নষ্ট করছে। আমরা বহুবার দেন-দরবার করে প্লাস্টিক ফুল আমদানি ও ব্যবহার বন্ধ করতে পারিনি।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যশোর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গাসহ ২৫টি জেলায় ১০সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। যার প্রায় ৭০ভাগ ফুল উৎপাদন হয় ফুলরাজ্য হিসেবে চিহ্নিত যশোরের গদখালি এলাকায়। প্রতি বছর প্রায় ২শ’ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় শুধু যশোরে। উৎকর্ষতার প্রতীক ফুল সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। ফুল ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু সৌন্দর্য কিংবা মিষ্টি সুবাতাস ছড়ানো নয়, এখন ফুল থেকে আসছে কাড়ি কাড়ি বৈদেশিক মুদ্রা। যা কিছুদিন আগে কল্পনাও করা যায়নি। যশোর-বেনাপোল সড়কের গা ঘেষা ঝিকরগাছার গদখালী ফুলের রাজ্য ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে নানা জাতের ফুল আর ফুল। মন মাতানো এক অভ‚তপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্য। যা দেখলে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগ ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসলেই বিপ্লব ঘটেছে ফুল চাষ ও উৎপাদনে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি জানায়, সারাদেশে ফুলকে ঘিরে চলছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বিশাল ব্যস্ততা। যারা ফুল চাষ, পরিচর্যা, ফুল তোলা, বান্ডিল করা, সংরক্ষণ, পরিবহন, ক্রয় ও বিক্রয় কাজে নিয়োজিত। তবে ফুলের মান বৃদ্ধি, সংরক্ষণ, চাষি পর্যায়ে আধুনিক পদ্ধতি ও কলাকৌশলের জ্ঞানের অভাব এবং সুষ্ঠু বাজারজাতকরণে বহুমুখী সমস্যার কারণে বিরাট সম্ভাবনার খাতটির আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না। প্লাস্টিকের ফুলে বাজার নষ্ট করায় প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে ফুলচাষি নিজাম উদ্দিনসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের বাদ প্রতিবাদ সত্বেও প্লাস্টিকের ফুল আমদানি বন্ধ হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফুলচাষিরা। এমনিতেই তো উৎপাদকদের পর্যাপ্ত ঋণ দেয়া, বিপণন ব্যবস্থার সহায়ক অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা রয়েছে তা মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত রয়েছে।

অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ একটু নজর দিলে অনায়াসেই খাতটির সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। এটি হলে স্বাচ্ছন্দ্যে খাতটির সঙ্গে জড়িতরা স্বপ্ন পুরণ করতে পারতেন। চাষি পর্যায় থেকে শুরু করে ক্রয়-বিক্রয়সহ বাণিজ্য নতুন মাত্রা যোগ হতো। আর্থিক দিক দিয়েও সংশ্লিষ্টরাসহ দেশ লাভবান হতো।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম আরো জানান, তবে আশার কথা ইতোমধ্যে ঢাকা গাবতলী ভেড়িবাঁধের পাশে স্থায়ীভাবে ফুলের একটি পাইকারী মার্কেট স্থাপন হচ্ছে। বিদেশে রফতানি বৃদ্ধির ব্যাপারেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা সেন্ট্রাল মার্কেটের লিংকে যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও সাভারে আরো ৪টি ফুল মার্কেট হবে। ফুলের রাজ্য যশোরের গদখালিতে কেন্দ্রীয় ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। গদখালির পানিসারায় ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও আধুনিক ফুল বাজার তৈরির ক্ষেত্রে ইউএসএইড সাপোর্ট দিচ্ছে। ফুল প্রকিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন হলে পিকসিজনে ফুল নষ্ট হবে না।

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর সেলিম রেজা বললেন, ফুলে বিশাল বাণিজ্য হয়। বছরে যেখানে কোটি কোটি টাকা ফুল উৎপাদন, বিকিকিনি এমনকি বিদেশেও রফতানি হয়, সেজন্য খাতটির দিকে বিশেষ নজর দেয়া জরুরি সংশ্লিষ্ট বিভাগের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুল

৮ জানুয়ারি, ২০২৩
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ