পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশ কমে গেছে বড় ধরনের দরপতনের কবলে পড়ে। অবমূল্যায়িত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ভালো অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপদ অবস্থায় রয়েছে সাতটি খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মূল্যায়নের অন্যতম হাতিয়ার মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও)। যে প্রতিষ্ঠানের পিই যত কম, ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ঝুঁকি তত কম। সাধারণত যেসব প্রতিষ্ঠানের পিই ১০-১৫ এর মধ্যে থাকে, সেই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বড় ধরনের দরপতনের কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেশ নিচে অবস্থান করছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে মধ্যে তিন কার্যদিবসে দরপতন হয়। এতে সপ্তাহ শেষে ডিএসইর পিও রেশিও অবস্থান করছে ১২ দশমিক ১৮ পয়েন্টে।
এমন পতনের বাজারে সাতটি খাতের পিই রেশিও ১৫ পয়েন্টের নিচে রয়েছে। এ খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক, প্রকৌশল, বীমা, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ এবং সেবা ও আবাসন। অপরদিকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে- কাগজ ও মুদ্রণ, আর্থিক এবং পাট খাত। এ তিনটি খাতের পিই রেশিও ৪০ পয়েন্টের ওপরে।
বাজারের এ পরিস্থিতে সব থেকে কম পিই রেশিও রয়েছে ব্যাংক খাতের। সপ্তাহ শেষে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ৭ দশমিক ১৬ পয়েন্টে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা টেলিযোগাযোগ খাতের পিই ১০ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট অবস্থান করছে। এর পরের স্থানেই রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতের পিই ১০ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে রয়েছে।
১৫ পয়েন্ট নিচে পিই থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে- সেবা ও আবাসন খাতের পিই ১২ দশমিক ১৪ পয়েন্ট, বীমার ১৩ দশমিক ৭৮, প্রকৌশলের ১৪ দশমিক ৯৮ এবং খাদ্য খাতের ১৪ দশমিক ৩২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অপরদিকে সব থেকে বেশি পিই রেশিও থাকা খাতগুলোর মধ্যে আর্থিক খাতের ৪৫ দশমিক ২০ পয়েন্ট, পাট খাতের ৪৩ দশমিক ৮৬, পেপার খাতের ৪১ দশমিক ১৮, সিমেন্ট খাতের ৩৬ দশমিক ৩৫ এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ৩০ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বাকি খাতগুলোর পিই ৩০-এর নিটে। এর মধ্যে- বস্ত্র খাতের ১৬ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৬ দশমিক শূন্য ৯, তথ্য প্রযুক্তির ১৯ দশমিক ৬৩, বিবিধ খাতের ২৩ দশমকি ২৫, সিরামিক খাতের ২৬ দশমিক ৫১ এবং চামড়া খাতের ২১ দশমিক ১১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আসছে আরও তিন ব্যাংক
এদিকে নতুন করে তিন ব্যাংককে বাজারে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বাজারে তালিকাভুক্ত রূপালি ব্যাংকের শেয়ার আরও ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে সরকারি সাত কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্তে নেয়া হয়।
স¤প্রতি ধারাবাহিক পতনের মুখে পড়ে পুঁজিবাজার। সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং দীর্ঘমেয়াদে আস্থা ফেরাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মালিকানার তিন ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক হলো- সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে আজ রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
সম্প্রতি সাতটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ওইদিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার। এখানে যারা আছে তারা বিক্ষিপ্তভাবে আছে। লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই সাত প্রতিষ্ঠানকে শিগগিরই বাজারে আনা হবে। তাদের দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ে তারা তাদের সম্পদের পরিমাণ যাচাই করে জানাবেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাজার চাঙা করতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড (বিআরপিএল) এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডকে (জিটিসিএল) বাজারে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোববারের বৈঠকে সরকারি সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের শেয়ার কীভাবে আনা যায় এবং কত অংশ ছাড়া যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে অংশীজনসহ বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেয়া হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের শেয়ার আরও ছাড়া যায় কি-না, সে বিষয়েও আলোচনা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা বিশ্নেষণ হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণীসহ সা¤প্রতিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের থাকার কথা রয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।