নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : দীর্ঘ ৫৮ বছর বড় বড় কোন টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পায়নি তারা। ইউরোতেও মূল পর্বে খেলার সুযোগ হয়েছে এবারই প্রথম। তাতেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছে গ্যারেথ বেলের ওয়েলস। পিছিয়ে থেকেও ফিফা র্যাংকিং অনুযায়ী ইউরোপের সেরা দল বেলজিয়ামকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে প্রথমবারের মত তারা জায়গা করে নিয়েছে আসরের সেমিফাইনালে। ২৪ বছর পর এই প্রথম নতুন কোন দল আসরের শেষ চারে পা রাখল।
দুই দলকেই বলা হচ্ছিল সোনালী প্রজন্মের দল। বেলজিয়ামে যেমন আছে একঝাঁক তরুণ খেলোয়াড়, ওয়েলসে তেমনটা না থাকলেও বেল-রামসিতেই উদ্দিপ্ত দলটি। সেই বাছাই পর্ব থেকেই যুক্তরাজ্যের দলটি এতটাই বেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল যে, তাদের নামই হয়ে গিয়েছিল ‘বেলের ওয়েলস’। তবে এবার সময় হয়েছে দলটাকে শুধুই ওয়েলস নামে ডাকার। অন্তত পরশুর ম্যাচটি সে কথাই বলে। ওয়েলসের হয়ে গোল করেন অ্যাশলে উইলিয়ামস, হল রবসন কানু ও স্যাম ভোকস। তবে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মধ্যেই জয়ের যে তীব্র ক্ষুধা এদিন দেখা গেছে তাতে এতক্ষণে হয়তো একটা বার্তা পৌঁছে গেছে পর্তুগালের কাছে। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ রোনালদোরা।
পরশু লিলির ম্যাচটি উত্তপ্ত ছিল শুরু থেকেই। ওয়েলস তিনটি গোল করেছে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের রক্ষণ নিয়েও ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাদেরই বেশি। বেলজিয়ামদের কাছে কঠিণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে তাদের। শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণে ওয়েলস রক্ষণকে তটস্থ করে রাখে হ্যাজার্ড, ডি ব্রæইন, লুকাকুরা। এগিয়ে যেতেও তাই সময় নেইনি বেলজিয়াম। ত্রয়োদশ মিনিটে হ্যাজার্ডের পাস থেকে দলকে এগিয়ে নেন রাদিয়া নাইনগোলান। দ্রæতই সমতায় ফিরতে পারত ওয়েলস, কিন্তু খিবো করতোয়ার দৃঢ়তায় সেটা একটু বিলম্ব হয় মাত্র। প্রথমার্ধেই রামসির কর্নার থেকে হেডারের মাধ্যমে দলকে সমতায় ফেরান উইলিয়ামস। এই গোলের পর যেন দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ে ভিনসেন্ট কোম্পানির দল। তিন মিনিটের মধ্যেই তারা নষ্ট করে তিন-তিনটি সুযোগ। বিরতির পরও গোলের জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালায় তারা। কিন্তু কোন সাফল্য তো পায়-ই নি, উল্টো পাল্টা আক্রমণে কানুর গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। হাঙ্গেরির জালে শেষ ১২ মিনিটে ৩ গোল দেয়া বেলজিয়াম এরপরও গোলের জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালায়। কিন্তু সুফল মেলেনি। নির্ধারিত সময়ের চার মিনিট আগে ওয়েলসের জয় আরো পোক্ত করেন ভোকস।
এই জয়কে ওয়েলসের ফুটবল ইতিহাসের সেরা রাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন সাবেক ওয়েরস তারকা রায়ান গিগস। আনন্দে আত্মহারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি গিগস বলেন, ‘আমি দারুণ গর্বিত। কোনো সন্দেহ ছাড়াই এটি ওয়েলসের ফুটবল ইতিহাসে সেরা রাত। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২ নম্বরে থাকা দলটিকে এমন সাধারণ বানিয়ে ম্যাচ জেতা অসাধারণ ব্যাপার। এটাই এখন পর্যন্ত আমাদের সেরা নৈপুণ্য।’ বেলজিয়ামের মত দলের বিপক্ষে এমন পারফর্মেন্স যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না ওয়েলস কোচ ক্রিস কোলম্যান। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘এমন রাত শুধু স্বপ্নেই দেখা যায়। কিন্তু আপনি জানেন না, সত্যিই এমন কিছুর অভিজ্ঞতা হবে কি না। যদি আপনি খুব সৌভাগ্যবান হন, তবেই সেই স্বাদ পাবেন। আসলেই অবিশ্বাস্য লাগছে।’ অপরদিকে পরাজিত কোচ মার্ক উইলমটসের কন্ঠে হারের হতাশা, “আমরা ফেভারিট থেকেই আসর শুরু করেছিলাম। যখন আপনি ভুল করবেন, তখন সেটা শুধরে নিতে চাইবেন। কিন্তু দুর্দান্ত ওয়েলসের সামনে আমরা অনেক বেশি ভুল করেছি।”
সেমিফাইনালে ওয়েলসের প্রতিপক্ষ পর্তুগাল। এই ম্যাচে দেশের হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হবেন রিয়াল মাদ্রিদের দুই সতীর্থ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও গ্যারেথ বেল। এদিন শেষ হাসিটা কে হাসবেন, এ নিয়ে নানা রকম আলোচনা শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে। বেল কি পারবেন রোনালদোকে হারিয়ে ইতিহাসের আরো উপরে উঠতে? তাঁর সতীর্থ রবসন-কানু অবশ্য দারুণ আত্মবিশ্বাসী এ ব্যাপারে, ‘ওদের দু’জনের (রোনালদো ও বেল) জন্যই এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। দু’জনেই যার যার দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী, ওই ম্যাচ থেকে আমরা ইতিবাচক ফল নিয়েই ফিরব।’ রোনালদোদের বিপক্ষে একটা অপূর্ণতাই থাকবে ওয়েলস দলে। জোড়া হলুদ কার্ডের দন্ডে ৬ জুলাইয়ের ম্যাচে খেলতে পারবেন না দলের অন্যতম বড় তারকা মিডফিল্ডার অ্যারোন রামসি।
এ পর্যন্ত দুই দলের যে পারফর্মেন্স তাতে জয়ের আশা করতেই পারেন বেলরা। ব্যক্তিগত লড়াইয়েও রোনালদোর তুলনায় ঢের এগিয়ে বেল। এদিন গোল করতে না পারলেও আসরের যৌথ সর্বোচ্চ ৩টি গোল তার নামে। প্রতি ম্যাচেই দলের জয়ে বিশেষ অবদান তার। অপরদিকে পর্তুগাল শেষ চারে পা রাখার প্রতিটা পদেই ছিল তাদের ভাগ্যের ছোঁয়া। রিয়াল তারকাও আছেন নিজের ছায়ার আড়ালে। এখন পর্যন্ত গোল্ডেন বলের বড় দাবিদার তাই বেলই। আর এ কারণেই স্বতীর্থ বেলে মুগ্ধ রবসন-কানু, ‘সে যেভাবে খেলছে, তা অসাধারণ। ওর তুলনা হয় না।’ সময়ের দুই সেরা ফুটবলার রোনালদো ও মেসির সঙ্গে বেলের তুলনা করতে গিয়ে উচ্ছ¡সিত রবসন-কানু বলেন, ‘ওরা দু’জনেই ভালো, বিশ্বমানের খেলোয়াড়। কিন্তু আমাদের দলে একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে, যে ওদের দু’জনের চেয়েও ভালো।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।