Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে ব্রেক্সিট

ব্রেক্সিট হচ্ছে এমন একটি ইস্যু যা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে এমন একটি সংস্থা যেখানে এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কোনো স্বাধীনতা নেই - মেরি লে পেন

প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির প্রেসিডেন্ট মেরি লে পেন বলেছেন, ফরাসিরা ব্রিটিশদের এমন কীর্তি দেখে মাথা থেকে ক্যাপ নামিয়ে ব্রিটিশদের একটি অভিবাদন দিতেই পারে। এতে ফরাসিরা নিচু হবে না। ব্রিটিশদের এই সাহসী কাজের প্রশংসা ফরাসিদের করতেই হবে। যারা স্বাধীনতাকে ভালোবাসে, তারা ব্রিটিশদের এই কাজকে প্রশংসা করবেই। কথাগুলো তিনি বলেছেন সম্প্রতি ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত গণভোটের রায়ের প্রেক্ষিতে। পেন বলেন, বহুলোকের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণ করে গত ২৩ জুন ব্রিটেনের গণভোটে জিতে গেছে ব্রেক্সিট। অনেক ব্রিটিশ তাদের এই গণভোটকে স্বাধীনতার সঙ্গে তুলনা করছে। কেন করছে তা বুঝার জন্য বিষয়টির আরো গভীরে যেতে হবে সবাইকে।
ব্রেক্সিটকে অনেকেই অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে। কিন্তু প্রকৃত ইস্যুগুলোকে সামনে আনছে না এই শ্রেণির লোকরা। ব্রিটিশরা বহু আগেই জেনে গিয়েছিল ব্রেক্সিট হলে তাদের পাউন্ডের দামে হেরফের হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হবে। তারপরও তারা কেন ব্রেক্সিটের দিকে গেল? এর প্রধান কারণ হচ্ছে, আমরা কি কখনো চেয়েছি অনির্বাচিত ব্যক্তিরা আমাদের শাসন করুক? আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করি। যারা গণতন্ত্রের কথা বলি তারা কি একটি অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে নিজেদের স্বাধীনতা বিকিয়ে দিতে চাই? ব্রেক্সিট হচ্ছে এমন একটি ইস্যু যা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে এমন একটি সংস্থা, যেখানে এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কোনো স্বাধীনতা নেই। এসব সদস্য দেশ নিজেদের বাজেটের আকার নিজেরা নির্ধারণ করতে পারে না। এই জোটের দেশগুলো নিজ দেশের সীমান্ত নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে খোলা রাখতে বাধ্য হয়। এই জোট হচ্ছে ইউরোপের একটি বড় জেলখানা। ইউরোপের মানুষদের জেলখানায় বন্দি রাখা হচ্ছে এই জোটের কাজ। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করে থাকে এই জোটের সদস্যরা। এই জোটের প্রতিটি সদস্য দেশ বিরক্ত হয়ে গেছে। কারণ সদস্য দেশগুলোকে নিজেদের ইচ্ছামতো চলতে দেয়া হয় না। ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় কমিশনের কাছে সদস্য দেশগুলোর স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত। জোর করে একক মুদ্রার প্রচলন। আর এই সংস্থার লোকগুলো হচ্ছে ভ-। এরা স্পেনের জন্য আইন তৈরি করে পোল্যান্ডের লোক দিয়ে। দেশগুলো সার্বভৌমত্বের কথা শিকারই করে না এই সংস্থা। লে পেন বলেন, ব্রিটিশরাই যে ব্রেক্সিটের দাবিতে প্রথম বিদ্রোহ দেখালো তা কিন্তু নয়। ২০০৫ সালে ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস ইইউ জোট ছাড়ার জন্য গণভোট ডেকেছিল। দেশ দুটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত সংবিধান মেনে নিতে চায়নি। ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের মতো অন্য দেশগুলো এই সংবিধান স্থগিত রাখতে বলে। কিন্তু কয়েক বছর পর লিসবন চুক্তির মাধ্যমে এই সংবিধান ইউরোপের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ড নিজেও জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য গণভোটের পথে গিয়েছিল। তারাও লিসবন চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিল। ২০১৫ সালে গ্রিস ইইউ ছাড়ার জন্য গণভোটের ডাক দেয়। কিন্তু গ্রিসকে সেই পথে যেতে দেয়নি ইইউ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মানুষের ইচ্ছাকে অবদমন করে এই জোট কতদূর যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। ব্রিটেন যে নজির সৃষ্টি করল, তা অনুসরণ করতে পারে আরো অনেক দেশ। এটি ছড়িয়ে যাবে। কারণ মানুষের অধিকার হরণ করে বেশি দিন টেকা যায় না। আজ হোক কাল হোক ব্রিটেনের মতো গণভোটের দাবি ইইউ জোটের অন্য দেশগুলোতে উঠবেই। ব্রিটেন চলে গেলে যে ইউরোপী ইউনিয়ন গণতান্ত্রিক হয়ে উঠবে। এটা ভাবা ঠিক নয়। ইইউ আগের চেয়ে আরো বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবে। জার্মানি এই জোটকে নেতৃত্ব দেবে। আর জার্মানির সঙ্গী হিসেবে ফ্রান্স সব কাজে সিল-ছাপ্পর মারার কাজ করবে। এই জোটের পরিকাঠামোই এই রকম। এখন দেখবেন সব বিষয়েই জার্মানিকে ডাকা হচ্ছে। এই কারণে নিজেদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে হলে এই জোটের প্রতিটি সদস্য দেশকে আমি গণভোটের আয়োজন করতে বলব। নিজেদের স্বাধীনতা ধরে রাখতে এই গণভোটের আবেদন জানাতে হবে। আমি আমার দেশের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদকেও এই জোটে থাকা না থাকার জন্য গণভোট আহ্বান করার কথা বলব। আশা করি, প্রেসিডেন্ট আমাকে নিরাশ করবেন না। নিউইয়র্ক টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে ব্রেক্সিট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ