Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রেনের গতিবেগ কমেছে

বিপুল বিনিয়োগেও বাড়েনি সেবার মান : বাড়ানো হয়েছে রানিং টাইম

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ট্রেনের গতিবেগ কমেছে। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে ট্রেনের নতুন সময়সূচী কার্যকর করা হয়েছে। তাতে ৫০ শতাংশ ট্রেনের রানিং টাইম (প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে গন্তব্যে পৌঁছার সময়) বাড়ানো হয়েছে। কমানো হয়েছে ট্রেনের গতিবেগ। তারপরেও ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় থামছেই না। বিশেষ করে রেলের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর বেশিরভাগই চলাচল করছে দেরিতে। ট্রেনের গতিবেগ কমানোকে শুভঙ্করের ফাঁকি হিসাবে দেখছেন ভুক্তভোগিরা। যদিও রেলের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পারায় সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। গত এক দশকে রেলওয়ে খাতে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে সরকার। তাতে রেলসেবার মান বাড়েনি। উপরন্তু রেল দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বেড়েছে শিডিউল বিপর্যয়ের প্রবণতাও। 

রেলওয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডবিøউটিটি) অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ২১টির রানিং টাইম বাড়ানো হয়েছে। সামান্য কমেছে ১৬টি ট্রেনের রানিং টাইম। অপরিবর্তিত রয়েছে আটটির। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলের ৪২টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে রানিং টাইম বেড়েছে ১৮টির। কমেছে ১৪টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টির। উভয় অঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে কোনো কোনো ট্রেনের রানিং টাইম সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে রানিং টাইম কমে যাওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগের সময় কমেছে মোটে ৫ থেকে ২০ মিনিট।
জানা গেছে, ২০০৭-১০ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের তিন বছর বিনিয়োগ প্রোগ্রামে বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। এরপর ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-১৫) খাতটিতে বিনিয়োগের লক্ষ্য রাখা হয় ৪৩ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) এ লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ পরিকল্পনায় বরাদ্দের পরিমাণ ক্রমে বাড়লেও রানিং টাইম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিতে এর কোনো প্রতিফলনই নেই। রেলসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিপুল বিনিয়োগের পরও ব্যবস্থাপনাগত নানা অসঙ্গতি ও দুর্নীতির কারণেই রানিং টাইম বাড়ছে।
রেলের পরিকল্পনা ও পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেলের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হলেও তা সুষম হয়নি। ট্র্যাকের উন্নয়ন করার পাশাপাশি নতুন কোচ আনা হলেও অধিকাংশ ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া সিংহভাগ সেতু, কালভার্ট এখনো জরাজীর্ণ। স্টেশন বন্ধ থাকায় কাঙ্খিত গতি পাচ্ছে না ট্রেনগুলো। এসব কারণে সেকশন অনুযায়ী ট্রেন চালানোর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ট্রেনের রানিং টাইম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
রেলওয়ের সর্বশেষ টাইম টেবিল বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি। এর আগের টাইম টেবিলটি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল ২০১৭ সালের ১ মার্চ। প্রতি বছর সময়সূচি পুননির্ধারণ করে নতুন টাইম টেবিল বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এবার নতুন টাইম টেবিল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ২ বছর ১০ মাস। এ সময়ে রেলওয়ের একাধিক বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়াও নতুন নতুন কোচ সংযোজন, ট্র্যাক সংস্কার, কালভার্ট ও ব্রিজ সংস্কার, নতুন নতুন সেতু নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় রেলের প্রায় প্রতিটি ট্রেনের সময়সূচিতেই রানিং টাইম কমে আসার কথা ছিল।
রানিং টাইম বাড়ানোর পরেও পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ ট্রেন সময় মেনে চলতে পারছে না। গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস চলেছে সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেন চলেছে পৌনে এক ঘণ্টা দেরিতে। ট্রেন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ ট্রেন যাত্রাস্থল থেকে সময়মতো ছাড়লেও পথিমধ্যে ক্রসিংয়ে মার খেয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় পাড়েই জট লেগে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে কন্ট্রোলের অপারদর্শিতাতো আছেই। পঞ্চগড় থেকে ঢাকামুখী বিরতিহীন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনকে পথিমধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখে কমিউটার ট্রেনকে আগে চালানোর ঘটনা ঘটছে অহরহ। এসব কারণে প্রতিনিয়ত ট্রেনগুলো সময় মেনে চলতে পারছে না।
দেশের জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ রেলরুট ঢাকা-চট্টগ্রাম। যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি রুটটিতে। এখানে প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয় ১৯৮৫ সালের দিকে। সে সময় এ রুটে যাত্রী চলাচলে সময় লাগত খুবই কম। পরবর্তী সময়ে রেলের বিনিয়োগ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও এ রুটে ট্রেনের রানিং টাইমও বেড়েছে। বিভিন্ন সময় কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েও রানিং টাইম কমাতে পারেনি রেলওয়ে। যদিও এরই মধ্যে ৩২১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল রুটটিতে দুটি ডাবল ট্র্যাকের সেতু (তিতাস ও ভৈরব) নির্মাণ হয়েছে। ডাবল লাইন হয়েছে লাকসাম থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত এবং টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত রেলপথ। অন্যদিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেলপথ ডাবল লাইন ছিল আগে থেকেই। এছাড়া এ রুটের পুরনো ট্র্যাকগুলোও সংস্কার করা হয়েছে। তার পরও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিরতিহীন ট্রেনের রানিং টাইম ৫ ঘণ্টার নিচে নামিয়ে আনতে পারেনি রেলওয়ে। বরং সর্বশেষ প্রণীত টাইমটেবিলে বিরতিহীন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের রানিং সময় ১০ মিনিট করে বাড়িয়ে ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রেলের নতুন ট্র্যাক, কোচ ও একাধিক উন্নয়ন হলেও অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশের কারণে ট্রেনের গতি কমে যায়। তাছাড়া ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়সহ বিভিন্ন কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ট্রেনের রানিং সময় বাড়ানো হয়েছে। ট্র্যাক, সেতু, কালভার্টসহ একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে আগামীতে এসব বর্ধিত রানিং টাইম সমন্বয় করা হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ