মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রতি বছর বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের যতটা উৎপাদন হয়, তার এক তৃতীয়াংশই নষ্ট হয়। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন বা ফাও-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য।
উৎপাদন যতটা হচ্ছে, তার এক তৃতীয়াংশই নষ্ট হচ্ছে। চাল, গম, ডালের মতো দানাশষ্য যেমন নষ্টহচ্ছে, তেমনই নষ্ট হচ্ছে শাক-সবজি, ফল, দুধ, মাছ-মাংস। সব মিলিয়ে নষ্ট হওয়া খাবারের পরিমাণ বছরে ১৩০ কোটি টন। এই তথ্য ভয়ঙ্কর, কারণ, অক্সফোর্ড বিশ্বিবদ্যালয়ের গবেষক ম্যাক্স রোসার ও হানা রিটশির গবেষণা জানাচ্ছে, বিশ্বের প্রায় ৮২ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভোগেন। ৬৯ কোটি লোকের খাদ্য একেবারেই সুরক্ষিত নয়। ১৮০ কোটি মানুষের খাদ্য সুরক্ষা মাঝারি স্তরে রয়েছে। অর্থাৎ, তাঁরাও প্রয়োজনীয় খাদ্য পান না।
এই অবস্থায় শুধুমাত্র খাবার নষ্টের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলির বছরে ৬৮ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের ক্ষতি ৩১ হাজার কোটি ডলার। উন্নত দেশে ৬৭ কোটি টন ও উন্নয়নশীল দেশে প্রতি বছর ৬৩ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হচ্ছে।
ভারতে যে কোনও শহরের বাজারে গেলেই পরিস্থিতিটা বোঝা যায়। প্রতিদিন সেখানে নষ্ট হওয়া ফল, সবজির ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বাস্তব পরিস্থিতি অবশ্য তার চেয়েও অনেক খারাপ। ফাও জানাচ্ছে, ৩০ শতাংশ দানাশষ্য, ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আলু, পেঁয়াজ, গাজর, বিটের মতো মাটির নিচের সবজি এবং ফল ও অন্য সবজি, ২০ শতাংশ তৈলবিজ, মাংস, ও দুগ্ধজাত সামগ্রী ও ৩৫ শতাংশ মাছ নষ্ট হচ্ছে। প্রতি বছর ধনী দেশগুলি ২২ কোটি টন খাবার নষ্ট করে, যা আফ্রিকায় দক্ষিণ সাহারার দেশগুলির মোট উৎপাদনের (২৩ কোটি টন) প্রায় সমান। যে পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয় তা বিশ্বে মোট যে খাদ্যশষ্য উৎপাদন হয় তার অর্ধেকের বেশি। ২০০৯-১০ সালে মোট খাদ্যশষ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩০ কোটি টন।
ভারতে যোজনা কমিশনের প্রাক্তন উচ্চপদস্থ আমলা এবং পরিকল্পনা বিশারদ অমিতাভ রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের কাছে সমস্যাটা হল উৎপাদনের পর প্যাকেজিং, সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের। আর বিদেশে কৃষিজাত পণ্যের ভ্যালু এডিশন হয়, কারখানায় গিয়ে প্রসোসিং হয়, তারপর তা দোকানে পৌঁছয়, তাই দাম বেড়ে যায়। সে জন্য আর্থিক দিক থেকে ক্ষতির অঙ্কটা উন্নত দেশে বেশি। ওদের খাবার নষ্ট হওয়ার কারণ, বাজারে প্রচুর প্রসেসড খাবার আসে। তা কতদিনের মধ্যে খাওয়া নিরাপদ তার একটা তারিখ থাকে। অনেক সময় চাহিদা কমে গেলে তারিখ পেরিয়ে যায়, খাবার বিক্রি হয় না। নষ্ট হয়। আমাদের এখানে প্রক্রিয়াকরণের অভাবে, ঠিকমতো সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর খাদ্য নষ্ট নয়।’
ফাও জানাচ্ছে, ইউরোপ ও উত্তর অ্যামেরিকায় জনপ্রতি খাবার নষ্টের পরিমাণ ৯৫ থেকে ১১৫ কেজি। এটাই সাহারার দক্ষিণের দেশ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এসে কমে দাঁড়াচ্ছে ৬ থেকে ১১ কেজি। ধনী দেশগুলিতে লোকে বছরে ৯০০ কেজি খাবার খেয়ে থাকেন। আর গরিব অঞ্চলে বছরে জনপ্রতি উৎপাদন হয় ৪৬০ কেজি। উন্নয়নশীল দেশে শষ্য তুলে নেওয়ার পর ও প্রক্রিয়াকরণের সময় ৪০ শতাংশ ক্ষতি হয়। উন্নত দেশে ক্ষতি হয় বিক্রির সময় ও ক্রেতাদের হাতে খাবার আসার পর। দোকানে আসার পর বিপুল পরিমাণ খাবার নষ্ট হয় গুণগত মানের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেয়ার কারণে।
খুব স্বাভাবিকবাবেই খাদ্য নষ্ট হওয়ার অর্থ প্রাকৃতিক সম্পদ নয়-ছয় করা। কারণ, খাদ্য উৎপাদনে জল, জমি, শক্তি, শ্রম, অর্থ ব্যয় হয়েছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়েছে। তা আবিশ্ব উষ্ণায়ণ ও আবহাওয়া বদলের কারণ হয়েছে। ফাও বলছে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে চাষ, সংরক্ষণের ওপর নজর দিতে হবে এবং সাপ্লাই চেন ভালো করতে হবে, কৃষকদের সরসরি সাহায্য করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থারউন্নতি ঘটাতে হবে। আর প্যাকেজিং শিল্পকে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। উন্নত দেশগুলিতে ক্রেতাদের মনোভাব খাবার নষ্টের বড় কারণ। ফাও মনে করছে, ওখানে সচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি। তা ছাড়া যে সব খাবার ফেলে দেওয়া হয়, তার উপকারের দিকটাও জানানো দরকার। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।