Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিলন বিরহ সঙ্কটে

আজ রাতে ব্রেক্সিট, ইইউ পার্লামেন্টে ভ‚মিধস সমর্থন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ব্রিটিশ রাজনীতিতে ঝড় তোলা বহুল আলোচিত ব্রেক্সিট আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টায়। বুধবার রাতে এ বিষয়ে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে শেষ অধিবেশন বসে। সেখানে ব্রিটেনের ব্রেক্সিট চুক্তিকে ভ‚মিধস সমর্থন দিয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই অধিবেশনটির একদিকে ছিল উল্লাস। একদিকে ছিল বেদনা। অনেকটা কত আনন্দ বেদনায় মিলন বিরহ সঙ্কটে। চুক্তি অনুমোদন হওয়ার পর ব্রিটিশ অনেক সদস্যকে উল্লাস করতে দেখা গেছে। আবার অনেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছেড়ে যাওয়ার বেদনায় কেঁদেছেন। কান্নাভেজা আলিঙ্গনে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেছেন। ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলেও ব্রিটেনের প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভালবাসা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে।

কেউ কেউ আশা প্রকাশ করেছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে নতুন করে যুক্ত করার স্বপ্নকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই পার্লামেন্টে এমন অবিমিশ্র অবস্থা আগে কখনো দেখা গিয়েছে কিনা তা জানা নেই। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি অনুমোদন করেছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট। এ পার্লামেন্টে ‘ব্রেক্সিট উইড্রয়াল এগ্রিমেন্ট’-এর পক্ষে ৬২১ জন সদস্য ভোট দিয়েছেন। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৪৯ জন পার্লামেন্টারিয়ান। এর আগে ব্রাসেলসে অবস্থিত এই পার্লামেন্টে চুক্তিটি নিয়ে আবেগঘন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এর পর অনুষ্ঠিত হয় ভোট। এরপর ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যরা আউলড ল্যাং সাইনি’তে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের প্রস্তাব অনুমোদন করে।

এই পার্লামেন্টের বেশ কিছু ব্রিটিশ সদস্য বলেছেন, তারা আশাবাদী ছিলেন একদিন ব্রিটেন ফিরে আসবে। এর মধ্যে রয়েছেন ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজে। ইউরোপিয় ইউনিয়নে দেয়া তার শেষ বক্তব্যে নাইজেল ফারাজে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আজ শুক্রবার গ্রিনিচ মিন টাইম রাত ১১টায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগ করার কথা রয়েছে ব্রিটেনের। এর আগে অক্টোবরে উইড্র চুক্তি অনুমোদন ও তাতে সম্মত হয় ব্রিটেন ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন। এতে স্বাক্ষর করেন পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি। এরপর তিনি বলেন, ভবিষ্যত সম্পর্কের বিষয়ে প্রয়াত লেবার দলের এমপি জো কক্সের কথাগুলো স্মরণ করা উচিত উভয় পক্ষের। তা হলো, আমাদেরকে বিভক্ত করার চেয়ে অনেক কিছু আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে দেয়।

আবেগ জড়ানো কণ্ঠে তিনি ব্রিটেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা ইউরোপিয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সব সময়ই আপনারা ইউরোপের অংশ হয়ে থাকবেন। আপনাদেরকে বিদায় কথাটা বলা খুব কষ্টের। তাই আমার অন্য সহকর্মীদের মতো আমি বিদায় না বলে বলতে চাই আবার দেখা না হওয়া পর্যন্ত বিদায়। এটা বুঝাতে তিনি ইংরেজিতে একটি শব্দ ব্যবহার করেন। তা হলো- অ্যারাইভেডেরসি। বুধবারের এই অধিবেশনে ব্রেক্সিট বিতর্কে দুই পক্ষকে দেখা গেছে দুইদিকে। ব্রিটেনের ৭৩ জন সদস্য রয়েছেন এই পার্লামেন্টে। ইউরোপিয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের সদস্যপদের ইতি ঘটছে- এতে একপক্ষ উল্লাস করেছেন। অন্য একপক্ষ বিলাপ করেছেন। কিছু এমপি এই সময়টাকে গান গেয়ে, কেউ সর্বদা আমরা ঐকবদ্ধ থাকবো লেখা স্কার্ফ পরে চিহ্নিত করে রাখেন।

ইউরোপিয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট বিষয়ক মুখপাত্র গাই ভারহোফস্টাডট বেদনাভরা বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, যে দেশ ইউরোপকে স্বাধীন করতে দু’বার রক্ত দিয়েছে তারা এই ইউরোপ ছেড়ে যাচ্ছে এটা আমাদের কাছে বেদনার। তিনি আরো বলেন, পার্লামেন্টে ব্রিটিশ এমপিরা একগুঁয়েমি সত্তে¡ও বুদ্ধিমত্তা এনেছিলেন। তাদেরকে মিস করবে এই পার্লামেন্ট। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের মধ্যে সৃষ্টি হবে নতুন এক অংশীদারিত্ব। তাদের ব্রেক্সিট বিষয়ক চুক্তি অনুমোদন দেয়া হলো তারই প্রথম পদক্ষেপ। ব্রিটেন শুক্রবার ইউরোপিয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাচ্ছে। এরপর তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে যৌথ শক্তি হিসেবে কাজ করবে উভয় পক্ষ।

ব্রিটেনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদেরকে সব সময়ই আমরা ভালবাসবো। আপনাদের কাছ থেকে আমরা দূরে সরে যাবো না। ব্রিটেনের জন্য শুভ কামনা করেন ইউরোপিয় ইউনিয়নের ব্রেক্সিট বিষয়ক মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ার। আবেগী হয়ে পড়েন নাইজেল ফারাজে ও তার ব্রেক্সিট পার্টির সদস্যরা। তারা পার্লামেন্ট থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে ইউরোপিয় ইউনিয়নের পতাকা দোলাতে থাকেন। কান্না বিজড়িত মলি স্কট ক্যাটোকে তার সহকর্মীরা জড়িয়ে ধরেন। এ সময় তিনি ব্রেক্সিট নিয়ে ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করেন। আশা প্রকাশ করেন, কোনো একদিন তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে ফিরে যেতে পারবেন।

গ্রিন পার্টির এই সদস্য বলেন, এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে নতুন করে যোগ দেয়ার মতো সময় নয়। তবে এই স্বপ্নকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে অবশ্যই শিক্ষা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন এই পার্লামেন্টে বেলজিয়ামের সদস্য ফিলিপ্পি ল্যাম্বার্ট। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • Khondokar Mamun ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
    ব্রিটিশরা যে ভাবে সারা বিশ্বে জুলুম নির্যাতন আর দখলদারিত্ব দেখিয়েছে সে জন্য তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mohiuddin ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৫ এএম says : 0
    Britain is suffering the punishment for the misrule to the people of the world, remember it.
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাফিজ ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
    দ্রুত ঝামেলা মিটে যাক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রেক্সিট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ