নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : ঘরোয়া হকির মর্যাদাপূর্ণ আসর গ্রীনডেল্টা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম শিরোপা জয় করলো ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব। গতকাল বিকালে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মেরিনার ৩-২ গোলে ঊষা ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। বিজয়ী দলের হয়ে ওয়াকাস শরিফ, আরশাদ হোসেন ও ইশতিয়াক আহমেদ একটি করে গোল করেন। ঊষার পক্ষে দু’গোল করেন হাসান যুবায়ের নিলয় ও পুষ্কর খিসা মিমো।
এর আগে প্রিমিয়ার লিগে ২০০৬ ও ২০১০ সালে মেরিনার দু’বার রানার্সআপ হলেও এবারই প্রথম তারা শিরোপার স্বাদ পেলো। যে কারণে দারুণ খুশী দলের কর্মকর্তারা। ক্লাবের সাফল্যে মেরিনারের হকি কমিটির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় কাউন্সিলর আলহাজ একেএম মমিনুল হক সাঈদ তাৎক্ষণিক ১০ হাজার মার্কিন ডলার বোনাস ঘোষণা করেন। এই অর্থ পুরস্কার হিসেবে দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। প্রিমিয়ার হকি লিগে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিততে এবার শক্তিশালী দলই গঠন করেছিলো ঢাকা মেরিনার ইয়াংস। সাফল্য পেতে তারা সুদূর জার্মান থেকে উড়িয়ে এনেছে জাতীয় দলের সাবেক কোচ গেরহার্ড পিটারকে। আর এই জার্মানকে পেয়েই যেন বদলে গেছে আরামবাগের দলটি। লিগের প্রথম পর্বে আবাহনীর বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র করলেও ঊষার কাছে ১-৪ গোলে হেরেছিলো মেরিনার। তবে সুপার সিক্স পর্বের পাঁচ ম্যাচের সবকটিতেই জয় তুলে নিয়ে সেরার খেতাব জিতলো তারা। লিগের শেষ ম্যাচে ঊষার বিপক্ষে যেখানে ড্র করলেই শিরোপা তাদের হতো, সেখানে ম্যাচ জিতেই সেরা হয়েছে মেরিনার। তবে তাদের শিরোপা জয়কে কিছুটা হলেও কলংকিত করেছেন সমর্থকরা। ম্যাচের ২০ মিনিটে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্স ও গ্যালারিতে ভাঙচুর চালায় মেরিনার সমর্থকরা। তারা ভিআইপি বক্সের সামনে গøাস ও বেশ কিছু চেয়ার ভাঙচুর করে। এই তাÐবের প্রভাব পড়ে মাঠেও। ফলে কিছু সময় খেলা বন্ধ থাকে। যা হোক শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। এ কথাটি মাথায় রেখে মেরিনারে খেলোয়াড়রা শেষটা দারুণ করেছেন তাই সাফল্যও তুলে নিয়েছেন।
এবারের লিগে মেরিনার ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে, রানার্সআপ ঊষা ৪০, আবাহনী ৩০ পয়েণ্ট নিয়ে তৃতীয়, ২৯ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডান চতুর্থ এবং ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাব পঞ্চম ও সমান পয়েন্ট পেয়ে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ষষ্ঠস্থান অর্জন করে।
কাল ঊষার জন্য ছিলো ডু অর ডাই ম্যাচ। শিরোপা পেতে হলে জয়ের বিকল্প নেই তাদের। অন্যদিকে মেরিনার অনেকটা নির্ভার ছিলো। কারণ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য তাদের দরকার এক পয়েন্ট। তাই এমন সমীকরণে ধীরে-সুস্থেই শুরু করে তারা। কিন্তু ঊষা শুরু থেকেই ছিলো আক্রমণাত্মক। ম্যাচের ১৬ মিনিটে ঊষার হাসান যুবায়ের নিলয় ভাঙেন গোলের খরা। পাকিস্তানি ফরোয়ার্ড আলি সানের জোরালো হিট ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি মামুনুর রহমান চয়ন। বল নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে হেরে যান আশরাফুল। কয়েক পা সামনে গিয়ে জোরালো হিটে মেরিনারের গোলরক্ষক মেহরাব হোসেন কিরণকে ফাঁকি দিয়ে গোল করেন নিলয় (১-০)। দু’মিনিট পর মেরিনার দুর্গে দ্বিতীয় আঘাত হানেন ঊষার পুষ্কর খিসা মিমো। এ সময় নিলয়ের কোনাকুনি হিট তিনি বক্সের উপরে আয়ত্তে নেন। জায়গা করে নিয়ে রিভার্স হিটে গোল করেন মিমো (২-০)। ব্যস, এই পর্যন্ত। এরপরের কাহিনী মেরিনারের। দু’গোলে পিছিয়ে পড়ে হঠাৎই যেন ক্ষেপে ওঠেন মেরিনার সমর্থকরা। বিশ মিনিটে হাফলাইন বরাবর মেরিনারের মিডফিল্ডার ইশতিয়াককে ফাউল করেন নিলয়। পাকিস্তানি ফরোয়ার্ড মো. তৌফিক ওমানি আম্পায়ারের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হলে তাকে সবুজ কার্ড দেখানো হয়। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে মেরিনার সমর্থকরা গ্যালারির ও ভিআইপি বক্সে ভাঙচুর চালায়। এ সময় সেখানে হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক বসা ছিলেন। এ ঘটনায় ২০ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। খেলা ফের শুরু হলে ব্যাকফুটে চলে যায় ঊষা। মেরিনারকে ম্যাচে ফেরান পাকিস্তানি ফরোয়ার্ড ওয়াকাস শরিফ। ২৬ মিনিটে বক্সের ডানপ্রান্ত খেকে রিভার্স হিট বাতাসে উড়িয়ে মেরেছিলেন আরশাদ হোসেন। গোললাইনের ওপর দাঁড়ানো ওয়াকাস শরিফ সোজা স্টিকে বল পোস্টের ভেতরে নিয়ে যান। গোলের বাঁশি বাঁজান আম্পায়ার (১-২)। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে মেরিনারের ইশতিয়াক একটি গোল করলেও পরে ভিডিও রিভিউতে তা বাতিল হয়। প্রথমার্ধের ৩৫ মিনিটের খেলা শেষ করতে সময় লাগে পুরোপুরি এক ঘণ্টা! দ্বিতীয়ার্ধে সতর্ক শুরু করে দুই দলই। তবে আক্রমণের ধারাবাহিকতায় ম্যাচে সমতা আনে মেরিনার। এবার উৎস নয়, গোলদাতা হিসেবে আবির্ভূত হন আরশাদ। ৫০ মিনিটে ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করে তিনি ভাঙেন ঊষার ডিফেন্স। ইশতিয়াকের পুশে মাঝ স্টিক দিয়ে বল গোললাইন অতিক্রম করান আরশাদ (২-২)। দ্বিতীয়ার্ধে খাপছাড়া ছিল ঊষা। অন্যদিকে শিরোপা জিততে মরিয়া ছিল মেরিনার। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ সময় পর্যন্ত কোনও পেনাল্টি কর্নার আদায় করতে পারেনি ঊষা। এমনকি মূল অস্ত্র আলিম বেলালকেও ব্যবহার করতে পারেনি তারা। মেরিনারের কেনিয়ান মিডফিল্ডার উইলিস ও চেক ডিফেন্ডার টমাস ফুচাসকা গড়ে তোলেন দুর্ভেদ্য এক প্রাচীর। তবে ম্যাচের অন্তিম সময়ে মেরিনারের পক্ষে তৃতীয় গোলটি করেন ইশতিয়াক (৩-২)। ফলে ড্র নয়, জয় দিয়েই শিরোপ উদযাপন করে আরামবাগের দলটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।