মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার ঘোষিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামের এই পরিকল্পনায় তিনি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ পরিকল্পনায় ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাবই করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বলেছেন, তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কোনো ইসরাইলি বা ফিলিস্তিনি নিজ বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হবেন না। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প যখন পরিকল্পনার ঘোষণা দেন, তখন তার পাশে ছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় ট্রাম্প বলেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য শেষ সুযোগ হতে পারে তার এই পরিকল্পনা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন। ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ নামের ওই প্রস্তাবের সমালোচনা করে এর বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন ফিলিস্তিনের রাজনীতিবিদ ও অ্যাক্টিভিস্টরা।
ট্রাম্পের ইহুদি ধর্মাবলম্বী জামাতা জ্যারেড কুশনারের তত্ত¡াবধানে খসড়াকৃত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামের ওই পরিকল্পনা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে উন্মোচনকালে ট্রাম্প বলেন, ফিলিস্তিনিরা দারিদ্র্য ও সহিংসতার মধ্যে বাস করছে। যারা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়াতে চায় তাদের দাবার ঘুঁটি হিসেবে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে, শান্তির পথে ইসরাইল আজ বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক জেরুজালেম শহরকে ইসরাইলি ভ‚খন্ড হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলি দখলদারিত্বের ফলে শরণার্থীতে পরিণত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভ‚মিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ও গাজা উপত্যকা নিয়ে নামমাত্র একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে; যে রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনও সেনাবাহিনী থাকবে না।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট ফাকরি আবু দায়েব বলেছেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) যে অংশ তাদের (ইসরাইল) দিয়েছেন, ওই অংশের মালিকানা তার নেই। যাদের দিয়েছেন, তাতে তাদেরও কোনও অধিকার নেই। নতুন বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প ইতিহাসের পুনাবৃত্তি করছেন, এতে এটা স্পষ্ট।’
উল্লেখ্য, ১৯১৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস আর্থার বেলফোর ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য তথাকথিত আবাসভ‚মি বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ব্রিটেনের অবস্থানের কথা ঘোষণা করেন। এটা ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে পরিচিত।
বেলফোর ঘোষণার দিকে ইঙ্গিত করে আবু দায়েব বলেন, ‘এই চুক্তি কেবলই ইসরাইলের স্বার্থ নিশ্চিত করবে, এটা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ম‚লভিত্তি, জেরুজালেম, জর্ডান উপত্যকা ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আমরা এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছি এবং এটার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবো।’
ফিলিস্তিনের সাবেক মন্ত্রী জিয়াদ আবু জায়েদ বলেছেন, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা কখনও রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমের দাবি ছাড়বো না। এমনকি জর্ডান বা পশ্চিম তীরের অন্য কোনও স্থানকেও মেনে নেবো না। ফিলিস্তিনের অধিকার ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর ভাগ করার এখতিয়ার নেই।’
ইসরাইলের আইনসভা নেসেটের ফিলিস্তিনি সদস্য আবু সাহাদা বলেছেন, ‘এই ঘোষণার অনেকদিন আগে থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।’ এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জেরুজালেমে মার্কিন দ‚তাবাস স্থান্তান্তর ও গোলান মালভ‚মি দখল করা হয়েছে।
এর আগে ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে একে প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেছেন, আমি ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুকে বলি, জেরুজালেম বিক্রির জন্য নয়। আমাদের অধিকার বিক্রির জন্য নয়। এ নিয়ে দর কষাকষির জন্য নয়। আপনাদের পরিকল্পনা যড়যন্ত্র সফল হবে না।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভ‚মি থেকে উচ্ছেদ করে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। ১৯৬৭ সালের আরব যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে। ফিলিস্তিনিরা চায় পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে এর রাজধানী বানাতে। পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের অবিভাজ্য রাজধানী বলে দাবি করে থাকে ইসরাইল। অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে অবৈধভাবে নির্মিত বসতিতে প্রায় ৬ লাখ ইসরাইলি বসবাস করে। এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনতার প্রতিরোধকে সন্ত্রাসবাদ আখ্যা দিয়ে আসছে ইসরাইল। সূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।