বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
২৬ জানুয়ারী (রবিবার) সিলেটে আয়োজিত বার্ষিক পুলিশ সামবেশে ও ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় পুরস্কার বিতরনী অনুষ্টানে যোগ দিয়েছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এ অনুষ্টানের প্রধান ও অনন্য আকর্ষণ ছিলেন তিনিই। এই অনুষ্টানে সিলেটে তার পোষ্টিং নিয়ে তোলে ধরেন বঞ্চনা থেকে গৌরবের শীর্ষে পৌছার স্মৃতি। স্মৃতির ঢালপালায় চুড়ান্ত প্রকাশ করেছেন এভাবে ‘প্রত্যেকটি জিনিসই হয় আল্লাহর ইচ্ছায়।’ যে ওলি-আউলিয়ার পূণ্যভূমিতে ঘটেছিল বঞ্চনা, সেই বঞ্চনা সাপে বর হয়ে হয়ে দেখা দিয়েছিল তার জীবনে। যেখানে অনুপস্থিতি হওয়া নিয়ে বুকে চাপা কষ্ট পেয়েছিলেন, ঠিক সেরকম এক অনুষ্টানে তিনিই অলংকিত করেছেন প্রধান অতিথির আসন। অতীত প্রসঙ্গ আওড়াতে গিয়ে বারবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অনুকরনীয় এই আদর্শিক আইকন। আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী সিলেটে কর্মময় জীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে যেয়ে বলেন, বেশ নষ্টালজিক কিছু স্মৃতি আছে এখানে। এই শহরে অল্প কিছুদিন এডিশনাল এসপি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) হিসাবে কাজ করেছি। ঠিক এ রকমই একটি পুলিশ সমাবেশ এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নতুনভাবে মোড় ঘুরিয়ে দেয় আমার জীবনে। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন আইজিপি এসেছিলেন এখানে। আনফরচুনেটলি (দুর্ভাগ্যবশত) তৎকালীন এসপি আমাকে এতো ভালবাসতেন (!), তার নির্দেশনায় সারাদিন অনুষ্টান মাঠে আসা হয়নি আমার। তার কাজে অনুষ্টান উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়ে বাইরে কাটিয়েছি সারাদিন । তবে সন্ধ্যার ডিনারে আইজিপি সাহেবের সাথে দেখা হয়ে যায় আমার। সেখানেই জিজ্ঞেস করলেন তিনি (আইজিপি), জাবেদ সারাদিন দেখলাম না আজ আপনাকে । কোথায় ছিলেন ? উত্তরে বললাম স্যার, ব্যস্ত ছিলাম অন্য কাজে, এজন্য দেখা হয়নি। উনি বললেন, জাবেদ কালকে আপনি আমার সাথে একটু কথা বলবেন। আমি বললাম, জ্বি স্যার। পরদিন কুমিল্লায় গেলেন উনি (আপজিপি)। রাতে উনি আমার সাথে কথা বললেন টেলিফোনে। উনি বললেন, জাবেদ আমি আপনাকে চাই, আপনি আমার সাথে চলে আসেন, কাজ করবেন আমার সাথে । আমি বললাম স্যার, আপনার সাথেই কাজ করছি আমি । আমি চাই যে, আপনি ঢাকায় আমার সাথে আমার স্টাফ অফিসার হিসাবে কাজ করবেন। আমি এডিশনাল এসপি সিলেটের পোস্ট রেখে আমি ঢাকায় চলে গেলাম স্টাফ অফিসার-টু-আইজিপি। এবং সেই ঘটনায়ই সম্ভবত জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল আমার । আসলেই প্রত্যেকটি জিনিসই হয় আল্লাহর ইচ্ছায়।’ ‘আজকে এখানে বসে আমার সারাক্ষণ সে কথাটি মনে হচ্ছিল। সেদিনও ছিল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। আজ আমি এখানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিলাম আইজিপি হিসাবে।’ আইজিপি যখন অতীত স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলেন তখন তার স্বর-ভঙ্গিও স্কেল উঠানামা করছিল। উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা ও মিডিয়া কর্মীরা পিন পতন নিরবতায় মন্ত্র-মুগ্ধের যাদুর মতো এ বক্তব্য শ্রবণ করেন তাঁর। নব্বইয়ের দশকে সিলেটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে কর্র্মরত ছিলেন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি। তখন সিলেটের এসপি হিসেবে আনোয়ারুল ইকবাল ও আব্দুর রহিম এ দু’জনই পর্যায়ক্রমে দায়িত্বরত পালন করেছিলেন। যদি অত্যন্ত সচেতনভাবে তৎকালীন এসপির নাম প্রকাশ করেননি আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী।
উল্লেখ্য যে, চাঁদপুর জেলার সদর থানাধীন মান্দারী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী । নিজ জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিষয়ে স্নাতক সম্মান ও প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী ৬ষ্ঠ বিসিএস-এ (১৯৮৪) পুলিশ ক্যাডারে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন। এরপর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে পিএইচডি করে তিনি । তার গবেষণার বিষয় ছিল-কমব্যাটিং টেরোরিজম ইন বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্টস । কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কাজ করেছেন। ড. জাবেদ পাটোয়ারী বত্রিশ বছরের গৌরবোজ্জল ক্যারিয়ারে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা পেশাদারিত্ব ও সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।তিনি অ্যাডিশনাল আইজি (গ্রেড-১) স্পেশাল ব্রাঞ্চ, অ্যাডিশনাল আইজি সিআইডি, অ্যাডিশনাল আইজি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, পুলিশ কমিশনার রাজশাহী, পুলিশ কমিশনার খুলনা, ডিআইজি সিআইডি, কমান্ড্যান্ট পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার নোয়াখালী, কমান্ড্যান্ট পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার রংপুর, পরিচালক পুলিশ স্টাফ কলেজ, এসএস সিটি এসবি-ঢাকা, এডিসি ডিএমপি, স্টাফ অফিসার টু আইজিপি, অ্যাডিশনাল এসপি সিলেট, রাষ্ট্রপতির লিয়াজো অফিসার এবং নেত্রকোণা জেলার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ড. জাবেদ পাটোয়ারী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কসভো, সিয়েরালিওন ও ক্রোয়েশিয়াতে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ক্লাস নিয়ে থাকেন তিনি। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে Victomology and Restorative Justice ও টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে Crimonology and Police Science বিভাগের একজন ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি। কর্মজীবনে বিপিএম এবং আইজিপি পদক পেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের বাবা। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আইজিপি হিসাবে যোগদান করেন ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।