নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
১৯৯৬ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিষেক। সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় জো ব্রায়ান্টের ছেলে কোবিকে বেছে নিয়েছিল শার্লট হরনেটস ফ্র্যাঞ্চাইজি। নিজেদের জন্য নয়, শার্লট কোবিকে দলে নেয় বিখ্যাত বাস্কেটবল দল লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্স বা এলএ লেকার্সের পক্ষ হয়ে। লেকার্সের অভিজ্ঞ ভøাদ দিভাচের সঙ্গে কোবিকে অদলবদল করেছিল শার্লট। এরপর ইতিহাস। টানা ২০টি মৌসুম এনবিএ রঙিন হয়েছে কোবি ব্রায়ান্টের জ্বলজ্বলে উপস্থিতিতে। ২০ মৌসুমের ১৮ বারই এনবিএর অলস্টার দলে জায়গা পেয়েছেন ১৯৭৮ সালে জন্ম নেওয়া ব্রায়ান্ট। ২০০৮ সালে এনবিএর মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার (এমভিপি) হয়েছিলেন ব্রায়ান্ট। লেকার্স তার সময়ে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এনবিএতে। দেশের হয়েও বড় অর্জন আছে কোবির। ২০০৮ ও ২০১২ সালে দুইবার অলিম্পিকে সোনা জয়ের কৃতিত্ব আছে তার। ক্রীড়া জগতের এই তারকা ২০১৮ সালে এক অ্যানিমেটেড শর্টফিল্মের জন্য জিতেছেন অস্কারও।
লেকার্স ও ব্রায়ান্ট সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছিল এক সময়। দলটির হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছিলেন ব্রায়ান্ট। শুরুতে ব্রায়ান্ট পাশে পেয়েছিলেন এনবিএ হল অব ফেম শাকিল ও’নিলকে। দুজনে মিলে ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০১-০২ মৌসুমে টানা তিনটি শিরোপা এনে দেন লেকার্সকে। এরপর ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ মৌসুমেও এনবিএ জেতে লেকার্স। পাঁচটি শিরোপাতেই সবচেয়ে বড় অবদান রেখে বাস্কেটবল ইতিহাসে নিজের নাম কী দারুণভাবেই না লিখে রাখেন ব্রায়ান্ট।
২০০৬ সালে টরন্টো র্যাপটর্সের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৮১ পয়েন্ট পেয়েছিলেন ব্রায়ান্ট। যা কিনা এনবিএ ইতিহাসে এক ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেই ব্রায়ান্ট ২০০৬ সালের এপ্রিলে নিজের বিদায়ী ম্যাচেও ইয়ুটা জ্যাজের বিপক্ষে পান ৬০ পয়েন্ট। ব্রায়ান্টের অবসরের পর তার পরা দুটি জার্সি নম্বর ৮ ও ২৪ কেও উঠিয়ে রাখে লেকার্স। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথম ১০ বছরে ৮ ও শেষ ১০ বছরে ২৪ নম্বর জার্সি পড়েছেন ব্রায়ান্ট।
দুবার মৌসুমে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়া ব্রায়ান্ট এনবিএ ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোরার। এনবিএর নিয়মিত মৌসুমে ৩৩৬৪৩ পয়েন্ট তার। তার ওপরে আছেন করিম আবদুল জব্বার (৩৮৩৮৭), কার্ল ম্যালন (৩৬৯২৮) ও লেব্রন জেমস (৩৩৬৫৫)। লেব্রন জেমস তো গত শনিবারই পেরিয়েছেন ব্রায়ান্টকে। তাঁকে পেছনে ফেলার পর সঙ্গে সঙ্গে টুইট করেছিলেন ব্রায়ান্ট, লিখেছিলেন, ‘খেলাটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিং জেমস। তোমাকে সম্মান জানাতেই হয় ভাই।’
খেলা ছাড়ার পর নিজেই বাস্কেটবল দল গঠন করেন ব্রায়ান্ট। তার মেজ মেয়ে জিয়ান্নি খেলত সেই দলে। ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টি থেকে ব্যক্তিগত হেলিকপ্টারে করে ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে খেলতে নিতে বেড়িয়েছিলেন। সেই যাত্রাই হলো তার শেষ যাত্রা। হেলিকপ্টারটিতে ব্রায়ান ও তার কন্যার সঙ্গে জিয়ানার বাস্কেটবল দলের এক সহখেলোয়াড়, ওই খেলোয়াড়ের মা-বাবা ও পাইলট থাকার কথা এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অরেঞ্জ কোস্ট কলেজের বেইসবল কোচ জন আলটোবেলিও হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন বলে সহকারী কোচ রন লা রুফার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে অরেঞ্জ কাউন্টি রেজিস্টার। আরোহীদের ৯জনই নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা। মর্মান্তিক ঘটনায় কোবের এমন প্রস্থানে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গণে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
কোবের স্মরণে লিগ ওয়ানে গোল করে তা উৎসর্গ করেছেন পিএসজি তারকা নেইমার। লিলের বিপক্ষে ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটি করে এক হাতের দুই আঙুল এবং অপর হাতের চারটি আঙুল উঁচিয়ে কোবির জার্সি নম্বরকে (২৪) ইঙ্গিত করেন এই তারকা ফরোয়ার্ড।
শোক প্রকাশ করেছেন মেসি-রোনালদোও। নিজেদের ব্যক্তিগত টুইটার থেকে টুইট করেছেন কোবি ব্রায়ান্টের অকাল প্রয়াণে। শোকে মুহ্যমান মেসি ব্যক্তিগত টুইটারে লেখেন, ‘আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কোবির পরিবার এবং বন্ধুদের জন্য আমার অনেক ভালোবাসা থাকবে। তোমার সঙ্গে দেখা হওয়া এবং সময় কাটানো আমার কাছে অনেক বেশি কিছু ছিলো। পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষদের মধ্যে তুমি ছিলে অন্যতম।’
এদিকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কোবিকে স্বপ্নের নায়ক উল্লেখ করে বলেন, ‘কোবি এবং তার মেয়ে জিয়ান্নার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বড়ই ব্যথিত হয়েছি। কোবি একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি এবং অনেকের কাছে প্রেরণার উৎস ছিলেন। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং এই দুর্ঘটনায় নিহত সকলের পরিবারের প্রতি ভালোবাসা থাকবে। ভালো থাকবেন কিংবদন্তি!’
অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী শেন ওয়ার্ন তার টুইটে লেখেন, ‘অন্যসবার মতো আমিও নিস্তব্ধ হয়ে গেছি। কোবে ব্রায়েন্ট ও তার ১৩ বছরের মেয়ের হেলিকপ্টারে বিধ্বস্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় আমি হতবাক। তার পরিবার নি:সন্দেহে একটা খারাপ সময় কাটাচ্ছে।’
ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি তার শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘একবারে ভেঙে পড়েছি এই সংবাদটি পেয়ে। শৈশবে তাকে কেন্দ্র করে অনেক ইতিহাস আছে আমার। ছোটবেলা থেকেই বাস্কেটবল কোর্টে তার সব জাদু দেখেছি। জীবনটা আসলেই অনিশ্চয়তার। তার মেয়ে গিয়ানাও এই দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। শান্তিতে থাকুক তার আত্মা। তার পরিবারের ধৈর্য ও শক্তি কামনা করি।’
দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসু রাবাদা তার ইনস্ট্রাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘খুব দ্রæত চলে গেলেন। কিন্তু আপনার কীর্তি বেঁচে থাকবে আজীবন। বিদায় লিজেন্ড।’ মাহেলা জয়াবর্ধনেও জানিয়েছেন শোক, ‘ভালো থাকুন কোবে ব্রায়ান্ট ও আপনার মেয়ে গিয়ানা। আমরা আপনার খেলা আজীবন মনে রাখব। আমরাই পরিবার। বাস্কেটবল লিজেন্ড।’
স্যার ভিব রিচার্ড লিখেছেন, ‘একজন সত্যিকারের ক্রীড়াঙ্গণের লিজেন্ড! ভালো থাকুন কোবে ও তার মেয়ে। তার পরিবার এই শোক দ্রæত কাটিয়ে উঠার শক্তি পাক।’
ভারতীয় কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার লিখেছেন, ‘হঠাৎ করেই কোবে ব্রায়ান্টের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা জানলাম। তার মেয়েও ছিল হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার সময়। তার পরিবার, বন্ধু ও সমর্থকদের প্রতি সহানুভূতি জানাই।’ পাকিস্তানি গতিতারকা শোয়েব আকতারও শোকাহত তার মৃত্যুতে, ‘একজন লিজেন্ডকে আজ হারালাম। বিদায় কোবে ব্রায়ান।’
ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তার ফেসবুকে ব্রায়ান্টের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘যতই প্রতিভা থাকুক না কেনো, সেরাদের সেরা হওয়ার জন্য চাই অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ়তা। কোবি ব্রায়ান্ট এর মতো কিংবদন্তিরা তাই কখনোই হারিয়ে যান না। তারা নিজেদের কাজের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকেন লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে। তার অকাল মৃত্যুতে আমি প্রচন্ড শোকাহত। সেইসাথে তার পরিবারের প্রতি রইলো আমার আন্তরিক সমবেদনা এবং প্রার্থনা।’
এই মৃত্যু স্পর্শ করেছে অন্য প্রাঙ্গণকেও। এদিন ৬২তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে কোবির নিহতের খবর পৌঁছালে বড় পর্দায় ভেসে উঠে তার ছবি। যে ছবি আর কীর্তিতে শেষ স্মৃতি হয়ে কিংবদন্তি কোবে বেঁচে থাকবেন আজীবন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।