মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত অধিকৃত কাশ্মীর ইস্যুতে আবারও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে চতুর্থ দফায় এমন প্রস্তাব দিলেন তিনি। মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের সাইডলাইনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরে পাকিস্তানি নেতাকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ ইস্যুতে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের বিচার গতকাল শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা বিতর্ক হয়েছে শুনানির প্রথম দিনে। যেখানে ডেমোক্রেটদের বেশ কিছু প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে সিনেট।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে আগ বাড়িয়ে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। ২০১৯ সালের আগস্টে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে পরিণত করা হয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। এ নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় পাকিস্তান। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কাশ্মীরের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ দ্রুত প্রত্যাহারে দিল্লির প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘে কথা বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ভারতকে কাশ্মীরের দখলদার শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন মাহাথির। তবে দিল্লি বরাবরই দাবি করে আসছে, কাশ্মীর ইস্যু পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে কারও মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই। মঙ্গলবার দাভোসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কী চলছে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আমরা যদি কোনও সাহায্য করতে পারি, তবে অবশ্যই সেটা করবো। আমরা পরিস্থিতির দিকে অত্যন্ত মনোযোগসহকারে লক্ষ রাখছি।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘আফগানিস্তানের মতোই আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই। সৌভাগ্যক্রমে, আমরা একই অবস্থানে রয়েছি। যখন অন্য কোনও দেশ এই সমস্যার সমাধান করতে পারছে না, তখন আমরা আশা করি যে সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র তার ভ‚মিকা পালন করবে।’
এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি এ নিয়ে মধ্যস্থতা করতে ‘প্রস্তুত, ইচ্ছুক এবং সক্ষম’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, কাশ্মীর একটি জটিল বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে এ সংকট চলে আসছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষ না চাইলে মীমাংসা করা যায় না। তবে আমি মনে করি, আমি একজন ভালো মধ্যস্থতাকারী হবো। ট্রাম্প বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তার ‘খুব ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে। অতীতে কখনও তিনি মধ্যস্থতায় ব্যর্থ হননি এবং চাইলেই তিনি সাহায্য করবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তানের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। তবে হোয়াইট হাউসে আমার প‚র্বস‚রিদের দেশটির প্রতি এমন আস্থা ছিল না। কিন্তু তারা জানতো না, তারা কী করছিল। পাশে বসা ইমরান খানকে দেখিয়ে ট্রাম্প বলেন, এই ভদ্রলোককে আমি বিশ্বাস করি। নিউ ইয়র্কে আমার বহু পাকিস্তানি বন্ধু রয়েছে, যারা স্মার্ট এবং দুর্দান্ত মধ্যস্থতাকারী। দখলকৃত কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আপনি কি উদ্বিগ্ন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, অবশ্যই। আমি চাই সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করা হোক।
এদিকে, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের শুনানির শুরুতেই কয়েক দফা নতুন প্রামাণ্য দলিল সিনেটের সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা করে ডেমোক্রেটরা। তবে সিনেট সে প্রচেষ্টা বাতিল করে দেয়। অভিশংসন শুনানি কার্যক্রম দ্রæত শেষ করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন সিনেট নেতা মিচ ম্যাককোনেল। সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানদের চাপের মুখে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ডেমোক্রেটদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিচ ম্যাককোনেলের এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ঢেকে ফেলার প্রচেষ্টারই অংশ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সিনেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ দিন ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে শপথ নেন সিনেটের ১০০ আইন প্রণেতা। তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। শপথ নেয়া এসব আইন প্রণেতারাই সিদ্ধান্ত নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন কি না।
অভিশংসন বিচারে আরও নথি ও তথ্য হাজিরে মঙ্গলবার ডেমোক্রেটদের তিনটি প্রস্তাব সিনেটে ৫৩-৪৭ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। প্রস্তাবগুলোর একটিতে ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক সংক্রান্ত হোয়াইট হাউসের নথি তলবে পরোয়ানা জারি করতে বলেছিলেন। রিপাবলিকানরা পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং হোয়াইট হাউসের বাজেট দপ্তরের নথি ও রেকর্ড তলবের প্রস্তাবও খারিজ করে দেয়। এদিকে উচ্চকক্ষের এ বিচার ‘সাজানো’ হতে পারে বলে ডেমোক্রেটরা তাদের আশঙ্কার কথাও লুকিয়ে রাখেনি বলে জানিয়েছে বিবিসি। অভিশংসন মামলার প্রধান বাদী প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট নেতা অ্যাডাম স্কিফ তার উদ্বোধনী বক্তব্যে ‘সিনেটে ন্যায় বিচার হবে বলে বেশিরভাগ মার্কিনিই বিশ্বাস করে না’ বলে মন্তব্য করেছেন।
বিবিসি বলছে, বিচারপদ্ধতি নিয়ে সামনের দিনগুলোতেও সিনেটরদের মধ্যে এ ধরনের দ্ব›দ্ব দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডেমোক্রেটরা উচ্চকক্ষের এ বিচারে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনসহ ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের হাজির করতে চাইলেও রিপাবলিকানরা নতুন সাক্ষী ও নথি নিয়ে বিতর্ক শুনানির পরবর্তী পর্যায় পর্যন্ত স্থগিত রাখতে চায়।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে ‘ধাপ্পাবাজি’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্যরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের অভিযোগের ‘নিরপেক্ষ’ বিচারের শপথ নিয়েছিলেন।
মার্কিন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের সভাপতিত্বে সপ্তাহে ছয়দিন, প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার এ বিচার শুনানিতে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক শুনবেন তারা। যদিও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে মঙ্গলবারের কার্যক্রম শেষ হতে হতে স্থানীয় সময় গভীর রাত হয়ে যায় বলে বিবিসি জানিয়েছে। মাঝরাত পর্যন্ত অধিবেশনকে মার্কিন ভোটাররা কী চোখে দেখবেন তা নিয়ে সিনেটররা উদ্বেগও জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে উচ্চকক্ষ সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার শুরু হলেও, এটি কতদিন ধরে চলবে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সূত্র : বিবিসি, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।