Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার কাজ করছে

প্রশ্নোত্তরপর্বে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে চট্টগ্রাম-৩ আসনের এমপি মাহফুজুর রহমানের তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সরকার যথাযথ আইন সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের ম‚ল লক্ষ্য। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মাঝে উপলব্ধি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যে- সব নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং কোনো অপরাধী অপরাধ করে পার পাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ৭৫এর পরবর্তী সময়ে এদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় সংসদে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ যাবৎ ৪৪টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ৯টি মামলার চ‚ড়ান্ত রায় হয়েছে। ৬টি মামলায় আসামিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২টি মামলা আসামিদের মৃত্যুজনিত কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত করা হয়েছে। একটি মামলায় আসামির আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে মাদক সমস্যা সমাজে একটি বিষফোড়া। আমাদের সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মাদক সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বর্তমানে আমরা নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরের বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র সংক্রান্ত মামলা, সিলেটে চাঞ্চল্যকর জোড়া শিশু হত্যা মামলা, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের মামলা এবং জাপানি নাগরিক কুনিও হোশির হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার শেষ হয়েছে।

দল-মত নির্বিশেষে সন্ত্রাসী ওয়ারেন্টভুক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেফতার করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র বিস্ফোরক এবং মাদকদ্রব্যসহ সব ধরনের অবৈধ মালামাল উদ্ধার করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি- গোষ্ঠী বা দল যাতে গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করবে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে না পারে সে লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সড়ক মহাসড়কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার, চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, নৌপুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিক যথাক্রমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং মাদকের অনুপ্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধি এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধী শনাক্ত ও তাদের আইনের আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
আইসিটি মামলায় টাঙ্গাইলের বাউল শরিয়ত বয়াতীর গ্রেপ্তারের বিষয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, প্রশ্নকর্তা কী এমন কোনো গ্যারান্টি দিতে পারবেন- বাউল গান করছেন বলেই ওই শিল্পী কোনো অপরাধে জড়িত নন। নিশ্চয়ই তিনি এমন কোনো অপরাধ করেছেন, যার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন সরকার বাউল গানকে বিশ্বঐতিহ্য করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। তাই অনুরোধ করবো, বাউল গানে সম্পৃক্তরা যেন এমন কোনো কাজ না করেন, যাতে বিশ্বঐতিহ্য বাউল গান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকারের উদ্যোগ ও গবেষণার ফলে মৌসুমী তরিতরকারি ও শাকসব্জি সারা বছর উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এসব তরিতরকারি প্রক্রিয়াজাত করার জন্যও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারজাত করা কিংবা রপ্তানি করার সুযোগ পান। বেসরকারি উদ্যোগে তরিতরকারি রপ্তানি করা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামীতে এই প্রক্রিয়ার আরও আধুনিকায়ন করা হবে।



 

Show all comments
  • jack ali ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:১৭ পিএম says : 0
    We don't talk in Islam but action speaks.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ