Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কদমবুসী : হাত-পা ইত্যাদিতে চুমু খাওয়া

মুফতী মোঃ আবদুল্লাহ্ | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

প্রথম প্রশ্ন :
হযরত শাহ আশরাফ আলী থানবী র. কাছে আলোচ্য শেষ প্রশ্নটি কেউ কেউ পেশ করলে, তিনি নি¤েœাক্তভাবে উত্তর প্রদান করেন:

“দলীল বিহীন ‘তাবীল’ (বিকল্প ব্যাখ্যা, কেবল আশঙ্কার কথা বলে) শোনা যায় না এবং বাহ্যিক মূল অর্থ থেকে ফিরে অন্য অর্থ গ্রহণের মত বিশেষ কোন হেতু না থাকলে, বাহ্যিক অর্থ বাদ দেয়া বা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। সুতরাং মূল বিধান মতে, বিশুদ্ধ কথা হল, কদমবূসী জায়েয। আর ফকীহগণের নিষেধ করা বিষয়টি প্রাসঙ্গিক সমস্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে” (ইমদাদুল ফাতাওয়া: খ- ৫, পৃ. ৩৪৬; মাকতাবা দারুল উলূম, করাচী, সংস্করণ: রজব-১৪০৭হি.)।

উপরিউক্ত প্রশ্নের পাশাপাশি আরও কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিকভাবে এসে পড়ে, যা উল্লেখ করা সমীচীন বলে মনে হচ্ছে। যেমন:

দ্বিতীয় প্রশ্ন: মাকরূহ ছাড়াই যদি কদমবূসী জায়েয হয়ে থাকে, তা হলে মাথানত করে হোক তা কিছুটা রুকু ও সিজদা’র মত, তা কি জায়েয হবে? এ বিষয়ে আমাদের দেশের আলেমগণের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারও কারও মতে, যেহেতু কদমবূসী জায়েয তাই যদিও তা কিছুটা রুকু ও সিজদা’র অনুরূপ মাথানত ভাবে করা হয়; তা-ও জায়েয। আর আলেমগণের অধিকসংখ্যকের মতে, কদমবূসী জায়েয হয় সেক্ষেত্রে যখন তাতে রুকু ও সিজদা’র অনুরূপ মাথানতভাবে তা না করা হয়। এঁরা বিষয়টি প্রশ্নে সেই হাদীসটি পেশ করে থাকেন যা মিশকাত শরীফের ‘মুসাফাহা ও মু‘আনাকা’ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

“হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের কেউ তার ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে কি তার উদ্দেশ্যে মাথা অবনত করতে পারে? নবীজী স. জবাবে বললেন, ‘না’ (তিরমিযী সূত্রে)। মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মিরকাত’ ৪র্থ খন্ড, ৪৭৬ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে:

“(সে কি তাঁর প্রতি অবনত হবে?) ‘অবনত’ বলতে, কারও সেবায় ও বিনয় প্রকাশার্থে মাথা ও পিঠকে ঝুঁকিয়ে দেয়া। (তিনি বললেন, না) অর্থাৎ তা বাস্তবে রুকূ‘ পর্যায়ে হয়ে যায়, যা কিনা সিজদারও (রুগীর ক্ষেত্রে) নামান্তর হয়ে যায়; সেটি তো আল্লাহ্র ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত। ইমাম নববী র. কৃত মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যায় রয়েছে,“পিঠকে নত করা মাকরূহ, সহীহ হাদীসে তা নিষেধ করার কারণে। ইলম ও আমল আছে এমন অনেকে তেমনটি করলেও, তা ধর্তব্য নয়।”

‘আশ‘য়ে‘আতুল লুমু‘আত’ গ্রন্থটির ৪র্থ খন্ড, ২৪পৃষ্ঠায় রয়েছে,“ইনহিনা’ মানে মাথা ও পিঠকে অবনত করা। আল্লামা তীবী র.মুহিউস সুন্নাহ্ সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন, ‘পিঠ ঝুঁকিয়ে দেয়া মাকরূহ, সহীহ হাদীসে তা নিষেধ করার কারণে; যদিও এমন অনেকেই তা করে থাকেন যাদেরকে ইলম ও ইসলাহ-সম্পন্ন বলা হয়। এদের ওপর ভরসা করা যায় না এবং এদের (মাপকাঠি হিসাবে) আমল ধর্তব্য নয়। ‘মাতালিবুল-মুমিনীন’ কিতাবে শায়খ আবূল মানসূর সূত্রে নকল করা হয়েছে, একজন যদি আরেকজনকে সামনে রেখে জমিনে সিজদা করে অথবা তার সামনে পিঠ অবনত করে অথবা মাথা ঝুঁকিয়ে দেয়, তাতে কাফির হয়ে যাবে না; বরং পাপী হবে। কেননা উদ্দেশ্য হল সম্মান প্রদর্শন, ইবাদত উদ্দেশ্য নয়। অবশ্য কোন কোন শায়খ এসব নিষেধ প্রশ্নে অনেক কঠোরতা অবলম্বন করেছেন এবং বলেছেন ‘এমন নুয়ে পড়া, অবনত হওয়া কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে!”

একইভাবে ‘মাযাহেরে হক’ গ্রন্থটির ৪র্থ খন্ড, ৬১পৃষ্ঠায় আলোচিত হয়েছে, “আর ‘মাজমাউল-আনহুর’ ৪২০পৃষ্ঠা, দ্বিতীয় খন্ডে রয়েছে:

‘কুহুস্তানী সূত্রে, সালামদান কালীন এমনভাবে ঝুঁকে ইশারা করা যা রুকূ‘ এর কাছাকাছি চলে যায়, তা প্রকারান্তরে সিজদাই হয়ে যায়! আর ইমাদিয়া গ্রন্থে রয়েছে, ‘অবনত হওয়া মাকরূহ। কেননা তা অগ্নিপূজকদের কর্মের সাদৃশ্য হয়ে যায়। আর ‘মুলতাকাল- আবহুর’ গ্রন্থে রয়েছে, ‘মুজতাবা’ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘সালামদান কালীন ইশারা করতে গিয়ে রুকূ‘র কাছে পৌঁছে যাওয়া সিজদা করারই নামান্তর এবং অবনত হওয়াই মাকরূহ”। (চলবে)

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ