দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
গবেষক ফকীহ ইমামগণের অভিমত:
২০/১। শামসুল আয়েম্মা সারাখসী র. এর ‘আল-মাবসূত’ দশম খন্ড, ১৪৯ পৃ. ‘ইসতিহসান’ পর্বে লেখা হয়েছে-
“মহানবী স. থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত ফাতেমা রা.-কে চুমু খেতেন এবং বলতেন, আমি তার থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। হযরত আবূ বকর রা. হযরত আয়েশা রা. এর মাথায় চুমু খেয়েছেন। এ ছাড়া, রাসূল স. আরও বলেছেন, যে তার মা’ এর পায়ে চুমু খেল সে যেন জান্নাতের চৌকাঠে চুমু দিল” (মাবসূত: খ-১০, পৃ. ১৪৯; ব. হা. প্রাগুক্ত)।
উক্ত একই কিতাবে শামসুল আয়েম্মা সারাখসী র. মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির র. হতে উদ্ধৃত করেছেন, তিনি বলেন, “এক রাতে আমি আমার মায়ের পা দবায়ে দিচ্ছিলাম এবং আমার ভাই সারা রাত নামাযে ব্যস্ত থাকলেন। কিন্তু আমি কক্ষণও এমনটিতে রাজী হব না যে, আমার ওই রাতের আমল তাঁর সঙ্গে বিনিময় করে নেব! অর্থাৎ তাঁর সারা রাতের ইবাদতের চেয়ে আমার কাছে মা’ এর সেবার মূল্য অধিক” (ব. হা. প্রাগুক্ত)।
নারীদের চুমু দেয়া এবং হাত স্পর্শ করা সম্পর্কিত উক্তসব বর্ণনা উদ্ধৃত করার পর শামসুল আয়েম্মা র. বলেন, “এই চুমু খাওয়া এবং দেহকে স্পর্শ করা কেবল সেক্ষেত্রে জায়েয, যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজ মনের কামনা-বাসনার আশঙ্কা হতে পবিত্র হবেন এবং যে-নারীকে চুমু দেবেন তার পক্ষেও তেমন আশঙ্কা না থাকবে; হোক সে নিজ সন্তান-সন্ততির কেউ; এবং হোক তা দেহের যে কোন অংশে। আর যদি তেমন আশঙ্কা নিজের বেলায় থাকে কিংবা তার বেলায় থাকে, তা হলে মোটেও চুমু খাওয়া জায়েয নেই” (মাবসূত: খ-১০, পৃ. ১৪৯)।
২০/২। আর হাত দ্বারা স্পর্শ সম্পর্কিত গবেষণা অনুসন্ধান মতে, এতে কারও দ্বিমত নেই যে, মুসাফাহা হালাল। কেননা রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, তোমরা পরস্পর মুসাফাহা কর যেন আপসে মহব্বত বৃদ্ধি পায়। আরেকটি হাদীসে এসেছে, রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, যখন কোন মুমিন তার মুমিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে মুসাফাহা করে, তাতে তার পাপ ঝরে পড়ে (আবূ দাউদ, তিরমিযী : প্রাগুক্ত)। তা ছাড়া, মুসাফাহা’র প্রচলন প্রত্যেক যুগেই লেনদেন, চুক্তি-অঙ্গিকার এসব ক্ষেত্রে চলে আসছে। তাই এটা একটা ধারাবাহিক সুন্নাতও বটে।
চুমু খাওয়া ও মু‘আনাকা’র বিধানে গবেষণা মতভেদ বিদ্যমান। ইমাম আবূ হানীফা র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. বলেছেন, একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষের মুখে বা হাতে অথবা তার অন্য কোন অঙ্গে চুমু খায় কিংবা আলিঙ্গন করে, তা মাকরূহ। আর আবূ ইউসুফ র. থেকে বর্ণিত, তাতে কোন সমস্যা নেই। তাঁর দলীল হল, সেই বর্ণনা অর্থাৎ ‘জা‘ফর ইবন আবূ তালেব যখন হাবশা থেকে ফিরে এসে মদীনা শরীফে পৌঁছলেন, তখন রাসূল স. তাঁর সঙ্গে মু‘আনাকা করলেন এবং তাঁর কপালে চুমু দিলেন (আবূ দাউদ শরীফ: খ-২, পৃ. ৭০৯; দারুল ইশাআতিল ইসলামিয়া, কলুটোলা স্ট্রীট, কোলকাতা, তা. বি.)। একইভাবে এমনটি বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবাগণ যখন নিজ সফর থেকে ফিরে আসতেন এবং পরস্পর সাক্ষাৎ করতেন তখন একে-অন্যকে চুমু খেতেন এবং মু‘আনাকা করতেন।
ইমাম আবূ হানীফা র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. ওই বর্ণনা দ্বারা দলীল পেশ করেছেন যে, রাসূল স.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আমরা পরস্পর মিলিত হলে কি একে-অন্যকে চুমু দেব? রাসূল স. বললেন, না। আবার প্রশ্নকরা হল, তবে কি মু‘আনাকা করবো? তিনি বললেন, না। আবার প্রশ্ন করা হল, পরস্পর মুসাফাহা করবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ (তিরমিযী শরীফ : খ-২, পৃ. ১০২, কুতুবখানা রশিদিয়া, দেওবন্দ, ইউপি. ভারত)।
শায়খ আবূ মনসূর বলেছেন, মু‘আনাকা সেক্ষেত্রে মাকরূহ যেক্ষেত্রে তা কু-প্রবৃত্তির সংমিশ্রণে হয়ে থাকে অর্থাৎ উভয়ের মধ্যখানে কোন কাপড়ের আড় না থাকে। কিন্তু যেক্ষেত্রে তার লক্ষ্য হয় কেবল সম্মান প্রদর্শন ও ¯েœহ-দয়া সেক্ষেত্রে তা মাকরূহ হয় না। এই একই বিধান চুমু খাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য অর্থাৎ যে চুমু কু-প্রবৃত্তির যোগে হয়ে থাকে, তার অনুরূপ হয় সেক্ষেত্রে জায়েয নয়; নতুবা জায়েয আছে। আর আবূ ইউসুফ র. যে হাদীস দ্বারা জায়েয এর পক্ষে অভিমত পেশ করেছেন, সেই হাদীসও সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন তাতে কামনা-বাসনা’র কোন আশঙ্কা না হবে কিংবা তেমন সাদৃশ্য না হবে” (বাদায়ে‘ : পৃ. ২৯৮-২৯৯, খ-৪, আল-ইসতিহসান পর্ব, যাকারিয়া বুক ডিপো, ইউপি, ভারত)।
২০/৩। ফাতাওয়া কাযীখান ‘আল-হাদরি ওয়াল-ইবাহাহ্’ পর্বে রয়েছে:
“ইমাম আবূ হানীফা র. ও মুহাম্মদ র. এর মতানুসারে এক পুরুষের অন্য পুরুষের মুখে বা হাতে বা দেহের অন্য কোন অংশে চুমু দেয়া মাকরূহ; তবে মুসাফাহাতে কোন সমস্যা নেই। আর আবূ ইউসুফের মতে, চুমু খাওয়াতে বা মু‘আনাকা করায় কোন সমস্যা নেই; যখন তা কোন একজনের গায়ে কাপড় থাকাবস্থায় হয়। মু‘আনাকা যদি কামিস বা জুব্বার ওপর দিয়ে হয় কিংবা চুমু খাওয়া যদি আনন্দ প্রকাশার্থে হয়, কামনাপ্রসূত না হয়; তা সকলের মতেই জায়েয” (ফাতাওয়ায়ে কাযীখান: আলমগীরির টীকা অংশে, পৃ.৪০৮, খ-৩, মাকতাবা মাজেদিয়া, কোয়েটা, পাকিস্তান, সংস্করণ: ১৯৮২খ্রি./১৪০৩হি.)।
“ফাতাওয়া কাযীখানের শেষ উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, চুমু ও মু‘আনাকা বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. সূত্রে যে গবেষণা-বিরোধ উদ্ধৃত করা হয়ে থাকে, তা কেবল সেক্ষেত্রে যেক্ষেত্রে কু-বাসনা’র ঝুঁকি থাকে অথবা তার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। অন্যথায় মু‘আনাকা ও চুমু খাওয়া তিন ইমামের মতেই জায়েয। বাদায়ে‘ গ্রন্থে শায়খ আবূ মনসূরের বক্তব্য দ্বারাও তার সমর্থন পাওয়া যায়” (জাওয়াহির-প্রাগুক্ত: পৃ.১৯৬)। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।