দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
এই দৃশ্য আবদুল্লাহ্ ইবন হুযাফাকে দেখানোর পর বাদশাহ নির্দেশ দিলেন, তাকেও এই ফুটন্ত পানিতে নিক্ষেপ কর! তাঁকে যখন ডেগের কাছে নিয়ে যাওয়া হল, তিনি কাঁদতে লাগলেন। বাদশাহ তাঁকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কান্নার কারণ কি? তিনি জবাবে বললেন, আমার অনুতাপ ও অনুশোচনার কারণ হল, আমার মাত্র একটি প্রাণ! তা এই ফুটন্ত পানিতে পড়ে একবারেই শেষ হয়ে যাবে। তাতে আমার পরিতাপ থেকেই যাবে। যদি আমার শতাধিক প্রাণ থাকতো তা হলে এক এক করে সবগুলো এই পানিতে উৎসর্গ করে দিতে পারতাম! এবং এই আনন্দঘন পরিস্থিতি আরও খানিকটা দীর্ঘায়িত হতে পারতো!
উক্ত রোমান বাদশা’র অন্তরে মহান আল্লাহ্ তাঁর এমন অসাধারণ অটলতার প্রভাব ঢেলে দিলেন। সে অসম্ভব বিস্ময়ে ডুবে গেল এবং বললো, আচ্ছা! ঠিক আছে, তুমি একটা কাজ কর, তুমি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে দাও! তা হলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দেব। হযরত আবদুল্লাহ ইবন হুযাফা রা. বললেন, শর্ত হল সব মুসলমান বন্দীদের মুক্ত করে দিতে হবে। বাদশাহ তাও মেনে নিলেন। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন হুযাফা রা. তার মাথায় চুমু দিলেন ( কেননা, তা কোন কুফরী, শিরক বা পাপের কাজ ছিল না এবং তার দ্বারা নিজ প্রাণ ও মুসলমানদের প্রাণ রক্ষা পাচ্ছিল। সে কারণে তা মেনে নিয়েছিলেন); যার ফলে রোমান বাদশাহ তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গে সব মুসলমান বন্দীদের মুক্ত করে দিলেন।
তিনি যখন সব মুসলমানদের সঙ্গে হযরত উমর রা. এর কাছে ফিরে এলেন তখন হযরত উমর রা. দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাঁর কপালে চুমু খেলেন।
ইবনে আসাকির উক্ত ঘটনার আরেকটি সাক্ষী (শাহেদ) হযরত ইবন আব্বাস রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আর হেশাম ইবন উসমান এর ফাওয়ায়েদ -এ যুহরীর মুরসাল সূত্রেও উদ্ধৃত করেছেন (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: মুফতী শফী র., খ-১, পৃ.১৯০-১৯১)।
১৫। ‘তাবাকাতে ইবন সা‘দ’ গ্রন্থে আসিম ইবন আবুন-নাজূদ এর জীবনী প্রসঙ্গে হযরত আবূ ওয়ায়েল সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন, আবূ ওয়ায়েল মাঝে-মধ্যে গ্রামে চলে যেতেন এবং কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকতেন। যখন ফিরে এসে হযরত আসিম এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তাঁর হাতে চুমু খেতেন (খ-৬, পৃ. ২২৪, ব. হা. প্রাগুক্ত)।
১৬। মুসতাদরাকে হাকিম গ্রন্থের ‘সাহাবা পরিচিতি’ অধ্যায়ে হযরত আবূ সুফিয়ান রা. এর মানাকিব বিষয়ে লেখা হয়েছে, হুনাইন এর যুদ্ধে হযরত আবূ সুফিয়ান রা-ও রাসূল স. এর সঙ্গে শরীক ছিলেন। হযরত আব্বাস রা. রাসূল স. এর কাছে নিবেদন করলেন, উনি তো আপনারই চাচাতো ভাই আবূ সুফিয়ান ইবন হারব। আপনি তাঁর বিগত বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যান (কেননা মক্কা বিজয়ের পূর্বে রাসূল স. ও ইসলামের বিরুদ্ধে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে, তার সবগুলোতে আবূ সুফিয়ান কাফির সৈন্যদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। তবে হযরত আব্বাসের মনে এমন ধারণা ছিল, ইসলাম গ্রহণ করলেও, বিগত দিনের আচরণে রাসূল স. এর অন্তরে তাঁর ব্যাপারে হয়তো মালিন্য হয়ে থাকবে; তাই তিনি এমন আবেদন করেছিলেন)। রাসূল স. জবাবে বললেন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হল, আমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। আল্লাহ্ তা‘আলাও আমার বিরুদ্ধে কৃত তাঁর বিগত জীবনের সব শত্রুতা ও সীমালঙ্ঘণ ক্ষমা করে দিন! তারপর রাসূল স. হযরত আব্বাসের প্রতি তাকিয়ে বললেন, তিনি অবশ্যই আমার ভাই। হযরত আব্বাস রা. বলেন, তখন আমি এমতাবস্থায় তাঁর পা মুবারকে চুমু দিয়েছি যে, তিনি ঘোড়ার পা-দানীতে ছিলেন অর্থাৎ প্রস্থান প্রস্তুতিরত ছিলেন”(মুসতাদরাকে হাকিম: পৃ.২৫৪, খ-৩; ব. হা. জাওয়াহিরুল ফিকাহ, পৃ.১৯২, প্রাগুক্ত ) ।
উপরিউক্ত বর্ণনাগুলো দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, ধর্মীয় সম্মান বিবেচনায় বড়দের হাত ইত্যাদিতে চুমু খাওয়া রাসূল স., সাহাবা, তাবেঈন ও দীনী ইমামগণের মাঝে বিরোধ ও বিতর্ক ব্যতীতই প্রমাণিত। পরবর্তী কালের আলেমগণের মাঝেও এ ধারাবাহিকতা সর্বদা ছিল (মুফতী শফী র. জাওয়াহিরুল ফিকাহ, পৃ.১৯২)। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।