পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে গত ৩০ বছরে ১ হাজার ৯৭৮ জন রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ১৯৮২ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) তৎকালীন আইপিজিএমআরে দেশের প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় মাত্র ছয়জন রোগীর। ১৯৮২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সারাদেশে মাত্র একটি কেন্দ্রেই কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ ছিল। পরে ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০টি কেন্দ্র গড়ে ওঠে। বর্তমানে চারটি কেন্দ্রে নিয়মিত কিডনি প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চলছে। কিডনি বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগী কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এখন পর্যন্ত সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে সেভাবে চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। প্রতি বছর নতুন করে ১০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয়। কিডনি বিকল হয়ে মৃত ৪০ হাজার রোগীর মধ্যে মাত্র ১ চতুর্থাংশ রোগী কিডনি ডায়ালাইসিস করে বেঁচে থাকে।
যেসব রোগীর দুটো কিডনিই বিকল, তাদের ডায়ালাইসিস কিংবা কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয়। কিডনি বিকল রোগীদের প্রতি সপ্তাহে দু-তিনবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিডনি বিকল রোগীদেরকে কিডনি প্রতিস্থাপন (ডোনারের দেয়া কিডনি অস্ত্রোপচার) করা হলে তারা সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এতদিন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আইনে নানা জটিলতার কারণে কিডনি প্রতিস্থাপন কম হতো। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে নতুন করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আইন প্রণীত হয়েছে।
কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবিত ব্যক্তিদের কিডনি প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি ক্যাডাভেরিক অর্থাৎ ব্রেন ডেথ ঘোষিত মৃত রোগীদের কাছ থেকে কিডনি, হার্ট, লাং, চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কিডনি রোগীসহ একাধিক রোগীকে নতুন জীবন দান সম্ভব।
কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সোসাইটি অব অরগ্যান ট্রান্সপ্লানটেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগীদের কাছ থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহে উদ্বুদ্ধ করতে আইসিইউ চিকিৎসকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। ব্রেন ডেথ ঘোষিত হওয়ার পর চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনদের কাউন্সিলিং করে অঙ্গপ্রতঙ্গ দানে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে পারেন। ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট চালু হলে একজন মৃত ব্যক্তির দান করা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অনেকেই বেঁচে থাকতে পারেন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সোসাইটি অব অরগ্যান ট্রান্সপ্লান্টের উদ্যোগে ‘মরণোত্তর অঙ্গ দান ও সংযোজন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে
কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সোসাইটি অব অরগ্যান ট্রান্সপ্লানটেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. হারুন অর রশিদ জানান, কিডনি দানে এগিয়ে মায়েরা। সম্পূর্ণ বিকল কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয়। দেশে প্রতিবছর ৪০ হাজার মানুষ কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার, ডায়ালাইসিস মেশিন ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে এসব রোগীদের মধ্যে মাত্র ১০ হাজার জন চিকিৎসা পায়। অবশিষ্ট ৩০ হাজার রোগীর মধ্যে স্বল্প সংখ্যক কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া অধিকাংশ রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ডোনার (দাতা) বড় সমস্যা। দেশে যেসব রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে তাদের জন্য কিডনি দানে এগিয়ে আছেন মমতাময়ী মায়েরা।
দশ মাস দশ দিন গর্ভধারণ করে প্রসব বেদনা সয়ে যেমন সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, নিজে খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেন, তেমনি সন্তানের অসুখ হলে অস্থির হয়ে পড়েন মা। সন্তানকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দান করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেন না।
দেশে ৩০৬ জন কিডনি প্রতিস্থাপনকারী ডোনারদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপন হয় তাদের ৬০ শতাংশ (১৮৯ জন) কিডনিদাতা গর্ভধারিণী মা। অবশিষ্ট দাতাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ (১০২ জন) ভাই-বোন, ২ দশমিক ৬ শতাংশ (৮ জন) স্বামী-স্ত্রী এবং ২ দশমিক ৪ শতাংশ (৭ জন) অন্যান্য আত্মীয়স্বজন।
তিনি বলেন, প্রতি বছর হাজার হাজার কিডনি বিকল রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে কিডনি প্রতিস্থাপনের ওপর জোর দিতে হবে। ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবিত মানুষকে কিডনি দানে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগীর কাছ থেকে কিডনি, হার্ট, লাং, চোখ) অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহের মাধ্যমে কিডনি রোগীসহ অন্য রোগীদেরকে নতুন জীবনদানে উৎসাহিত করতে হবে। ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সন্তানকে বাঁচাতে মায়েদের কিডনি দানের সংখ্যা হ্রাস করা সম্ভব। কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোগীরা বহু বছর সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যারয়ের প্রো-ভিসি ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর হাবিবুর রহমান রহমান দুলাল প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।