পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টঙ্গীর তুরাগ তীরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। মোনাজাতে লাখো মুসল্লি নিজেদের গুনাহ মাফ, বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি, মুসলিম উম্মাহর হেফাজত, ঐক্য, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন।
গতকাল রোববার দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জামশেদ বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে হামদ ও দরুদ পাঠের মাধ্যমে আখেরি মোনাজাত শুরু করেন। ১২টা ৭ মিনিট পর্যন্ত ১৭ মিনিটের এই আখেরি মোনাজতে প্রথম ৫ মিনিট আরবিতে ও পরের ১২ মিনিট উর্দুতে দোয়া পরিচালনা করা হয়। আরবি ও উর্দুতে পরিচালিত আবেগপূর্ণ আখেরি মোনাজাতে লাখো মুসল্লির ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে মধ্যাহ্নের আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। এ সময় দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় মুসল্লিরা আকুতি জানাতে থাকেন। অনেকই কেঁদে কেঁদে দুই চোখের পানিতে বুক ভাসান।
বিশ্ব ইজতেমায় গভীর আবেগপূর্ণ আখেরি মোনাজাতে তাবলীগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তওফিক কামনা করে মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করা হয়। দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে আকুতি ব্যক্ত করেন ধনী-গরিব, নেতা-কর্মী, শ্রমিক-মালিকসহ সব পেশার বিভিন্ন বয়সের সর্বস্তরের লাখো মুসল্লি। এর আগে মাওলানা জমশেদ সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে হেদায়েতি বয়ান করেন।
মোনাজাতে অংশ নিতে গতকাল ভোর থেকে চারদিক থেকে মুসল্লিরা হেঁটেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছেন। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশে-পাশের অলি-গলি, রাস্তা, পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানার ভেতরের খালি জায়গায় অবস্থান নেন।
মোনাজাতে আরো যা বলা হয় :
মোনাজাতে তিনি বলেন, হে আল্লাহ আমাদের অন্তর থেকে কুফরি, ও মোনাফেকি দূর করে দাও। হে আল্লাহ, তোমার নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দাও। হে আল্লাহ, আমাদের সকল নেক হাজাত পূরণ করে দাও। হে রাহমানুর রাহীম, আমাদের ওপর রহম করো। আমাদেরকে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি দাও। আমাদের ওপর দয়া করো যেভাবে তুমি তোমার নেক বান্দাদের ওপর রহম করেছ। হে আল্লাহ, আমাদের সরল ও সঠিক পথ দেখাও। আমাদের পরিপূর্ণ ঈমান দাও। তোমার আজাব থেকে পরিত্রাণ দিয়ে জান্নাত নসিব করো। জাহান্নামের আগুন আমাদের জন্য হারাম করে দাও।
নবীওয়ালা জিন্দেগী আমাদের নসীব করো। ইজতেমাকে কবুল করো। ইজতেমার আয়োজনে যারা মেহনত করেছে তাদের কবুল করো। যারা তোমার কাছে হাত তুলেছে সকলকে তুমি কবুল করো। ইজতেমার বক্তা ও শ্রোতা সকলকে তুমি কবুল করো। দাওয়াতে তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করো।
আগামী বছর দুই পক্ষের ৪ পর্বে বিশ্ব ইজতেমার ঘোষণা :
প্রথম পর্বেও বিশ্ব ইজতেমায় ‘আলমে শূরা’ (বিশ্ব পরামর্শ সভা) দুই পর্বের ইজতেমার তারিখ ঘোষণার পর মাওলানা সা’দ অনুসারীরা আগামী ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার পৃথক সময়ে দুই পর্বের তারিখ ঘোষণা করেছেন। এতে আগামীবার দুই পক্ষের ৪ পর্বে বিশ্ব ইজতেমা ঘোষিত হলো। গতকাল রোববার ১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগে ইজতেমার বয়ান মঞ্চ থেকে তাদের দুই পর্বের তারিখ ঘোষণা করা হয়। মাওলানা সা’দ অনুসারীদের ইজতেমা আয়োজক কমিটির শুরার বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ তারিখ ঘোষণা করা হয় বলে জানান ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ প্রথম পর্ব এবং ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি ২০২১ দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৩ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে সা’দ অনসুসারীদের পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে গত ১২ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে বিশ^ তাবলীগ জামাতের আহলে শূরার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইজতেমার দুই দফার তারিখ ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণা অনুসারে তাদের ইজতেমার প্রথম ধাপ হবে ৮, ৯ ও ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি।
৫৯ দেশের বিদেশি মেহমান :
ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, সউদী আরব, এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ ৫৯টি দেশের ৫ সহস্রাধিক বিদেশি মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান থেকে সর্বাধিক সংখ্যক বিদেশি মেহমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।
আরো ২ মুসল্লির মৃত্যু :
বিশ্ব ইজতেমায় এসে শনিবার দিবাগত রাতে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবারের দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে এসে ১০ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। টঙ্গী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, বার্ধক্যজনিত কারণে ও দুর্ঘটনায় তারা মারা যান। শনিবার দিবাগত রাতে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার চাঁদপাড়া দূর্গাদাহ গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে মো. শাহ আলম (৬৫) ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার খাদিমপুর গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ফজলুল হক (৬৮)। এই নিয়ে দুই পর্বের বিশ^ ইজতেমায় ২২ জনের মৃত্যু হলো।
মৌসুমী ব্যবসা :
তুরাগ তীরে ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বাহারী সব পণ্যের ব্যবসা খুলে বসেছিলেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তুরাগ পাড় ছাড়াও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তার দুই পাশে তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লীরা পায়ে হেঁটেই ফিরছেন অনেকেই। এসব মুসল্লিদের জন্য রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সেখানে বিক্রি হয় আতর, টুপি-জায়নামাজ, তসবিহ, চাদর, কম্বল ও জ্যাকেটসহ নিত্যপণ্যের সকল দ্রব্যসামগ্রী।
ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প:
এবারের বিশ্বইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে। স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে। মন্নুনগর এলাকায় হামদর্দ ফ্রি- মেডিক্যাল ক্যাম্প ছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাড়াও টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ময়দানের মুসুল্লিদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ১২ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম পর্ব। এরপর ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পব।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা ময়দানে থাকা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।