পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিরাপত্তা হুমকির নামে জিনজিয়াংয়ে উচ্চ সতর্কতা
ইনকিলাব ডেস্ক : চীনের সময় রাত ৯টা ৫৭ মিনিট। উরুমকি শহরের কেন্দ্রস্থলে বাইদা মসজিদ বা বড় সাদা মসজিদটিকে খুব শান্ত দেখাচ্ছিল।
পবিত্র রমজান মাসের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। সূর্য সবে ডুবেছে। ইফতারের পূর্বমুহূর্ত। বাইদা মসজিদের বাইরের দেয়াল সাদা। মসজিদের দু’পাশে দুটি টাওয়ার। মসজিদের সবুজ গম্বুজের ওপর একটি চাঁদ।
মসজিদ থেকে অল্প দূরেই রোজাদারদের ইফতারের জন্য বিনা মূল্যে খাবারের আয়োজন। সেখানে রয়েছে ফালি করা তরমুজ। সারাদিন রোজা রাখার পর রোজাদাররা এসে হাজির হন মসজিদে। মসজিদের দরোজা থাকে তাদের জন্য উন্মুক্ত। তবে মসজিদে মহিলারা আসেন না।
মসজিদে নামাজ পড়ানোর সময় ইমাম সাহেব কখনো কখনো উচ্চ স্বরে সূরা পড়েন। বাইরের রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীরাও তা শুনতে পান।
হুই, উইঘুর, কাজাখ, উজবেক, তাজিক ও কিরঘিজসহ চীনের জাতিগোষ্ঠীগত মুসলমানরা ব্যাপকভাবে রোজা পালন করেন। চীনে প্রায় ২ কোটি মুসলমান রয়েছে। চীনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একমাত্র প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বরাবরই কঠোর। চীনা কর্তৃপক্ষ দলের সদস্য, সরকারী চাকরিজীবী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীদের রোজা থাকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশেষ করে পুলিশ অফিসারদের রোজা রাখা নিষেধ, কারণ কর্তৃপক্ষের মতে রোজা তাদের শারীরিকভাবে দুর্বল করে ফেলে, তাই তারা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
আলিম (ছদ্ম নাম) নামে এক পুলিশ অফিসার জানান, তাকে রোজার সারা মাস ডিউটি করতে হয়। যে কোনো সম্ভাব্য ঘটনার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।
কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের বিষয় হল এবার রমজান শেষ হচ্ছে ৬ জুলাই। এ দিনটি হচ্ছে ২০০৯ সালের ৫ জুলাই উরুমকি দাঙ্গার পরদিন। এ উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার প্রতি হুমকির আশংকায় গোটা জিনজিয়াংয়ে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে।
উরুমকির প্রতিটি বাসস্টপে রয়েছে পুলিশ চৌকি। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত থাকেন। জিনজিয়াংয়ে সরকারী সদর দফতরের পাশে রেনমিন চত্বরে ট্যাংক মোতায়েন দেখা যায়।
বহুতল ভবন ও বিলাসবহুল শপিং মল সমৃদ্ধ আজকের আধুনিক উরুমকি দেখে এখানে বিরাজ করা চাপা উত্তেজনা বোঝা যায় না।
চীনের অন্যান্য শহরের মত উরুমকিতেও দেশপ্রেমমূলক বিজ্ঞাপন দেখা গেলেও সেগুলোর দু-একটি বোর্ডের স্লোগান ভিন্ন ধরনের।
একটি বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে উগ্রপন্থা রোধে কাজ করে যাচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে স্কুল সময়ের পর কর্মসূচি যা ছেলেমেয়েদের শিক্ষামূলক কর্মকা-ের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করবে।
একটি বাসস্টপ সানশেডে বা দিকে একটি চর্মরোগ চিকিৎসা হাসপাতালের বিজ্ঞাপন এবং ডানদিকে ঐক্য ও স্থিতিশীলতা সুখ আনে স্লোগান লেখা আছে।
রাত ১০টার পর কোনো যাত্রীর, সে নারী-পুরুষ সেই হোক না কেন, ট্যাক্সি চালকের পাশে বসা নিষিদ্ধ। এর কারণ হিসেবে দস্যুতা প্রতিরোধের কথা বলা হয়।
বাইদা মসজিদের রাস্তার অপর পারে আইসক্রিমের দোকান। ৪৩ বছর বয়স্ক আবদুল আবদুলপ্যাটেল তার জনশূন্য দোকানে কাউন্টারের পিছনে উপবিষ্ট। রোজা রাখার পর অনেক রোজাদারই তার কাছে আইসক্রিমের শীতল স্বাদ নিতে আসেন। খদ্দেরদের সুবিধার জন্য রাত ১টা পর্যন্ত তিনি দোকান খোলা রাখেন। তিনি বলে, এখানে জুলাই মাসে খুব ব্যস্ত সময় কাটে। বহু পর্যটক উরুমকিতে আসে। আবহাওয়া থাকে গরম। সেপ্টেম্বরের পর খদ্দেরের সংখ্যা কমে যায়।
আবদুলের দোকানের নাম আভরাল আইসক্রিমস। এ দোকানের আয় দিয়ে তিন সন্তানসহ তার পরিবারের ভরণপোষণ চলে। এই আইসক্রিম তৈরির কৌশল তিনি পেয়েছেন তার পিতামহের কাছ থেকে। পশ্চিম জিনজিয়াংয়ের ইলিতে ৬০ বছর আগে তার পিতামহ আইসক্রিম বিক্রি শুরু করেন। পারিবারিক ব্যবসা পরে সম্প্রসারিত হয়। তিনি উরুমকিতে ও তার ভাই হোতানে আরেকটি দোকান চালান।
আবদুল একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। রমজানের সময় সারামাস রোজা রখেন।
প্রতিদিন ভোরে তিনি ওঠেন। শুতে যান অনেক রাতে। কঠোর পরিশ্রম করেন তিনি। তিনি বলেন, কোনো একদিন তিনি বেইজিংয়ে দোকান খোলার আশা রাখেন।
রমজান মাসে বসমানের ফল বিক্রির ব্যবসা ভালো চলে। সারাদিন রোজা রাখার পর লোকে ফল খেতে চায়। তাতে তার বিক্রি বাড়ে, লাভ হয় বেশী।
১০ বছর বয়স থেকে বসমান তার পিতাকে ফল বিক্রির কাজে সাহায্য করে আসছেন। পিতা বুড়ো হওয়ার পর থেকে তিনিই ব্যবসা চালাচ্ছেন। বাইদা মসজিদ থেকে ৫শ’ গজ দূরে ঠেলাগাড়িতে তার দোকান। জুমার দিন দোকান বন্ধ রেখে তিনি নামাজে যান। মালামাল পাহারার জন্য কেউ থাকে না। সূত্র গ্লোবাল টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।