পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী পবিত্র রমজান মাস চলছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে সওম পালনের সময়ে ভিন্নতা রয়েছে। সারাবিশ্বে কোন দেশ কত ঘণ্টা সওম পালন করেন তারই একটি চিত্র তুলে ধরেছে আরব আমিরাতের জাতীয় দৈনিক খালিজ টাইমস।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সবচেয়ে দীর্ঘসময় সওম পালন করেন সুইডেন ও ডেনমার্কের মুসলমানরা। আর সবচেয়ে কম সময় সওম পালন করেন আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়ার মুসিলমরা। কারণ এই দুই দেশের মুসলমানদের মাত্র ৯-১০ ঘণ্টা সওম পালন করতে হয়।
কোন দেশের মানুষ কত ঘণ্টা রোজা পালন করেন তার একটি বর্ণনা নিম্নে দেয়া হল
ডেনমার্ক : এই দেশের মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সওম পালন করছেন। সাহারী খাওয়ার পর থেকে ইফতারি পর্যন্ত মোট ২১ ঘণ্টা সওম পালন করতে হয় দেশটিতে থাকা মুসলিমদের।
নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়াম : এ দেশ দু’টিতে সাড়ে ১৮ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। এর পরেই আছে স্পেন, যেখানে সময় ১৭ ঘণ্টা, জার্মানিতে সাড়ে ১৬ ঘণ্টা সওম পালন করতে হয়। গত ৩০ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় ১৬ থেকে ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত রোজা রাখতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইতালিতে সওম পালন করা হয় ১৬ ঘণ্টা।
আইসল্যান্ড, সুইডেন ও নরওয়ে : সওম পালনের দিক থেকে দুই নম্বরে থাকা এই তিন দেশের মুসলিমদেরকে ২০ ঘণ্টা সওম পালন করতে হয়।
মধ্যপ্রাচ্য : সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৫ ঘণ্টা, মিসরে ১৬ ঘণ্টা, ফিলিস্তিনে ১৫ ঘণ্টা রোজা পালন করতে হচ্ছে। ইয়েমেনের মুসলিমরা ১৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিট, কাতারের ১৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, কুয়েত, ইরাক, জর্ডান, আলজেরিয়া, মরক্কো, লিবিয়া, সুদানে ১৪ ঘণ্টা সওম পালন করছেন। এছাড়াও সউদী আরববাসীরা ১৫ ঘণ্টা সওম পালন করেন।
আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়া : সবচেয়ে কম সময় রোজা পালন হচ্ছে এই দুই দেশে। আজেন্টিনায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ও অস্ট্রেলিয়ায় ১০ ঘণ্টা, ব্রাজিলে ১১ ঘণ্টা রোজা রাখছেন মুসলিমরা।
দক্ষিণ এশিয়া : পাকিস্তানে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা রোজা পালন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের মুসলিমরা ১৫ ঘণ্টা সওম পালন করছেন। ভারতে স্থানভেদে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা। সূত্র : ওয়েবসাইট।
বিশ্বের আরো কিছু দেশ ও স্থানের সওম পালনের স্থায়ীত্ব নি¤েœ উল্লেখ করা হ’ল :
সান্তিয়াগো সাড়ে ১১ ঘণ্টা, নিউইয়র্ক ১৭ ঘণ্টা, অসলো ২১ ঘণ্টা, কেপ টাউন সাড়ে ১১ ঘণ্টা, এডিনবার্গ সাড়ে ১৯ ঘণ্টা, কায়রো ১৬ ঘণ্টা, লাগোস ১৪ ঘণ্টা, ইস্তাম্বুল ১৭ ঘণ্টা, মক্কা ১৫, তেহরান ১৬, করাচী ১৫, জাকার্তা ১৩ ও সিডনিতে সাড়ে ১১ ঘণ্টা।
২৬ বছরের ইয়াসমীন আল-হাব্বাশ প্রথম বারের মতো গাজা থেকে ২ হাজার ২শ’ ৫০ মাইল উত্তরের অসলোতে গিয়ে পৌঁছেছে। বাড়িতে ছেড়ে যাওয়া বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমরা কি বিশ্বাস করতে পার, আমি এখানে ২১ ঘণ্টা সওম পালন করছি’? গাজায় যেখানে তিনি ১৪ ঘণ্টা সওম পালন করতেন সেখানে নরওয়েতে এক লাফে তা ২১ ঘণ্টায় পৌঁছেছে। আল-হাব্বাশ তার দিবসের সূচনা করেন রাত দু’টায় এবং তা সাহারী গ্রহণ ও ফজর সালাতের মাধ্যমে। এরপর আবার খাবার গ্রহণের জন্য তাকে রাত ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। তিনি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেন, কারণ তার অবস্থান উত্তর নরওয়েতে নয় যেখানে সূর্য একপ্রকার অস্তই যায় না।
‘কখনও মাথা ব্যথা হয়, কখনও দুর্বলতা অনুভব করি এবং এসময় মনঃসংযোগ ঠিক রাখা দুষ্কর’ -বলছিলেন আল-হাব্বাশ।
রমজান এলেই তিনি অত্যন্ত কাতর হয়ে যান। গাজায় রমজান থেকে পলায়নের কোন সুযোগ নেই। সেখানে প্রত্যেকটি বাড়ী, রাস্তায় এমনকি সর্বত্র রমজানের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু নরওয়েতে সওম সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার। এখানে সালাত আদায়ে যাবার কোন তাড়া নেই, পরিবার সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে মসজিদে যাওয়া এবং ইফতারে শরিক হবার কোন তাড়া নেই। রমজানের সৌন্দর্য এখানে কেউ অনুভবই করবেন না-বললেন হাব্বাশ।
মনস্তাত্ত্বিক লড়াই
২৭ বছরের লুকুমান্নু ইদ্রিসুর ক্ষেত্রে এটা প্রাথমিকভাবে সত্য। তিনি ঘানা থেকে ২০১৪ সালে ফিনল্যান্ডে অভিবাসী হয়েছে। ফিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকুলের ভাসায় প্রথম রমজানে সে ছিল একা। ইদ্রিসু খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগে এবং সালাত আদায় করে। সে আবার ঘুমাতে যায় রাত ৩টায়। কখনও কখনও ভোর ৬টায় তাকে ঘুম থেকে উঠতে হয় কাজে বেরোবার তাগাদায়। বাড়ি ফিরে ক্লান্ত হয়ে তন্দ্রা এলেও আবার জেগে ওঠার আগেই তাকে নিজের জন্য রান্না করতে হবে এবং সারতে হবে ইফতার।
‘আমি প্রতিদিন ঠিকমত এসব কাজ করি এবং রাতে ঘুমাতে যাই, আবার জেগে সালাত আদায় করি’ বলেন তিনি। ‘খুব একা লাগত’। এরপর স্থানীয় মসজিদে গিয়ে একত্রে ইফতার করা ও সালাত শুরু করলে রমজানের আমেজ পেতে লাগলাম। মসজিদে তিনি অপর মুসলিমদের সাথে ইফতারে ও সালাতে শরিক হন। সুদান, আলবেনিয়া, এবং সোমালিয়ার অভিবাসীর দ্রুত তার বন্ধুতে পরিণত হয়।
উত্তরাঞ্চলীয় দেশগুলোতে যখন সময় দীর্ঘ হয়, কোপেনহেগেনের বাসিন্দা আমির সোহেল নামের ৩৫ বছরের এক ডিজিটাল মার্কেটিং কনসালটেন্ট জোর দিয়ে বললেন যে, তাদের কিছু সুবিধাও আছে।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে এ সময়টায় খুব গরম এবং সওম পালনকারীরা দিনের বেলা খুব পিপাসা অনুভব করেন। এখানে আবহাওয়া ঠা-া থাকায় তা ক্ষতি অনেকটা পোষিয়ে যায়। সোহেল বলেন, সওমের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক হলো ঘুমানো এবং সকালে জেগে কাজে যাবার আগে আরেকবার উঠে সাহারী গ্রহণ করা। ১০ বছর ধরে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশে অবস্থান করে সওম পালনকারী সোহেল একে ‘মনস্তাত্ত্বিক লড়াই’ আখ্যায়িত করে বললেন, একে সহজেই জয় করা যায়।
ফেরা যাক ফিনল্যান্ডে, কখনও কখনও ইদ্রিসুকে জিজ্ঞাসা করা হয়, শারীরিক পরিশ্রমের কাজ বিশেষ করে দিনভর পরিচ্ছন্নতা, মেঝে পরিস্কার করে কীভাবে তিনি সওম পালন করছেন। ইদ্রিসু এখন দীর্ঘ সময়ের সওম পালনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন এবং এক সময় যেটাকে কঠিন মনে করতেন তাকে জয় করতে শিখেছেন। তিনি বলেন, তিনি এখন আল্লাহ পাকের অনেক নিকটবর্তী। সূত্র : কোয়ার্টজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।